শুরু হলো ‘মার্কস অ্যাক্‌টিভ স্কুল চেস চ্যাম্পস’

আবুল খায়ের গ্রুপের পৃষ্ঠপোষকতায় আয়োজিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল
ছবি: তারিকুর রহমান খান

‘সাদা সাদা কালা কালা...’ গানটি বেশ জনপ্রিয় এখন। দুনিয়াজুড়েও সাদাকালোর জুড়ি নেই। আজ আমরা বলব আরেকটি সাদাকালো বিষয় নিয়ে।

একটি সাদাকালো বোর্ড আর অনেকগুলো সাদাকালো গুটি...। এতক্ষণে নিশ্চয়ই বুঝে গেছেন কী বিষয়ে বলছি? হ্যাঁ, বলছি একটি খেলার কথা। নামটিও প্রায় সবার জানা:দাবা।

আগেকার দিনে দাদা-নানাদের জীবনের ছন্দ ছিল এই খেলাটি। মা-খালা-ফুপু আর চাচা-মামাদেরও জীবনের ছন্দ-আনন্দের অনেকাংশ জুড়ে ছিল দাবা খেলা।

এখন সময়টা ডিজিটাল। হাতে হাতে স্মার্টফোন। কেড়ে নিয়েছে দাবার মতো মন প্রফুল্ল করা খেলার সময়টুকু। দাবা মন প্রফুল্ল করে? প্রশ্ন জাগতে পারে। উত্তর হলো, হ্যাঁ, মন প্রফুল্ল হওয়ার পাশাপাশি দাবা আপনার আত্মবিশ্বাসও বাড়িয়ে তুলবে। হতাশা দূর করবে। কাজে মনোযোগ বৃদ্ধি করবে। ধৈর্য ও বুদ্ধির এই খেলাটি তাই অনেকেরই প্রিয়।

দাবা খেলার আয়োজন
ছবি: তারিকুর রহমান খান

শিশুদের জন্য দাবা খেলার বিকল্প নেই। শিশুর বুদ্ধিমত্তা বৃদ্ধির প্রথম ধাপ হিসেবে দাবাকেই ধরে নেওয়া যায়। কথাটি অনুমান-নির্ভর নয়, গবেষণার ফলাফল। ভেনেজুয়েলার চার হাজার শিক্ষার্থীর ওপর পরীক্ষা করে দেখা গেছে, দাবা খেলে এমন ছেলে ও মেয়ে উভয়েরই চার মাসের মধ্যে আইকিউ স্কোর উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। তাই সন্তানকে মেধাবী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য তাকে খেলাচ্ছলে পরিচয় করিয়ে দেওয়া দরকার দাবার সাদাকালো বোর্ড আর গুটির সঙ্গে।

এ বিষয়টির গুরুত্ব বিবেচনা করে সারা দেশ থেকে খুদে দাবাড়ুদের খুঁজে বের করতে আবুল খায়ের গ্রুপের পৃষ্ঠপোষকতায় আয়োজন করা হয়েছে ‘মার্কস অ্যাক্‌টিভ স্কুল চেস চ্যাম্পস’। আজ রোববার (২১ আগস্ট) গাজীপুর থেকে শুরু হলো দেশব্যাপী এই স্কুলভিত্তিক দলগত দাবা প্রতিযোগিতাটি।

সকালে গাজীপুর পুলিশ লাইনস স্কুলে প্রতিযোগিতাটির উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল। এ সময় খুদে তিন প্রতিযোগীর সঙ্গে দাবা খেলে দেশব্যাপী এ আয়োজনের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করেন তিনি।

উদ্বোধনী বক্তব্যে মো. জাহিদ আহসান রাসেল বলেন, ‘তরুণেরা খেলাধুলায় যত এগিয়ে আসবে, দেশ ততই এগিয়ে যাবে। দাবা হলো বুদ্ধিভিত্তিক খেলা। তরুণ শিক্ষার্থীরা এই খেলাটি চর্চার মাধ্যমে নিজেদের বুদ্ধির বিকাশ ঘটাতে পারবে। বর্তমান সরকার দাবাসহ সব খেলাধুলাকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য কাজ করছে।’ দাবাকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য দেশজুড়ে আয়োজিত ‘মার্কস অ্যাক্‌টিভ স্কুল চেস চ্যাম্পস’ প্রতিযোগিতাটি অবদান রাখবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

দাবা খেলার আয়োজন
ছবি: তারিকুর রহমান খান

গাজীপুর জোনে দুই দিনব্যাপী আয়োজিত প্রতিযোগিতায় ৫৪টি স্কুলের প্রায় তিন শতাধিক শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে।

এই উদ্যোগ সম্পর্কে আবুল খায়ের গ্রুপের কনজ্যুমার গুডস ডিভিশনের ব্র্যান্ড অ্যান্ড রিসার্চ কনসালটেন্ট তাসনিম করিম বলেন, ‘স্কুলগামী বাচ্চাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ যাতে সঠিকভাবে হতে পারে, তা নিয়েই সব সময় কাজ করছে মার্কস অ্যাক্‌টিভ স্কুল। দাবার এই আয়োজনের সঙ্গে মার্কস অ্যাক্‌টিভ স্কুলের সম্পৃক্ততাও এ কারণেই। আমরা বিশ্বাস করি, প্রযুক্তি-যন্ত্রনির্ভর খেলাধুলা থেকে বেরিয়ে শিশুদের বুদ্ধিবৃত্তিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের বিকাশে দাবা খেলা বিশেষ এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।’

‘হয়ে ওঠো আগামীর গ্র্যান্ডমাস্টার’ স্লোগানে এই প্রতিযোগিতাটি দেশের স্কুলভিত্তিক দলগত দাবার সবচেয়ে বড় টুর্নামেন্ট। প্রতিযোগিতায় ৬৪ জেলা থেকে আগত শিক্ষার্থীরা লড়বে পরস্পরের বিপক্ষে। দলগত এই প্রতিযোগিতায় নিজ নিজ স্কুল বা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিত্ব করবে শিক্ষার্থীরা। স্কুলভিত্তিক দলগুলো শুরুতে খেলবে জেলা পর্যায়ে। এরপর জেলা পর্যায়ের বিজয়ী দলগুলো অংশ নেবে বিভাগীয় পর্যায়ে। তারপর বিভাগীয় পর্যায়ের বিজয়ী দলগুলো অংশ নেবে রাজধানী ঢাকায় অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থাৎ চূড়ান্ত পর্যায়ে।

বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশনের তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠিত ‘মার্কস অ্যাক্‌টিভ স্কুল চেস চ্যাম্পস’ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে খুঁজে বের করা হবে দেশের সেরা খুদে দাবাড়ুদের। পরবর্তীতে তাদের দাবা খেলা বিষয়ক বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা প্রদানের পাশাপাশি প্রশিক্ষণের সুযোগ করে দেওয়া হবে।

দাবা খেলার আয়োজন
ছবি: তারিকুর রহমান খান

উল্লেখ্য, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গাজীপুরের পুলিশ সুপার এস এম শফিউল্লাহ’র সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন গাজীপুর মেট্রোপলিটনের পুলিশ কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হুমায়ুন কবির, আবুল খায়ের গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শহীদউল্লাহ চৌধুরী (অবঃ), বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাহাবউদ্দিন শামিম, গাজীপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মো. জামাল উদ্দিন এবং স্কুল দাবা কমিটির সদস্যসচিব ও আন্তর্জাতিক দাবা-সংগঠক মাহমুদা হক চৌধুরী।

অংশগ্রহণের নিয়মাবলি

অংশগ্রহণকারী প্রতিটি স্কুল থেকে ৪ থেকে ৬ জনের দল গঠন করা যাবে। একটি স্কুল থেকে সর্বোচ্চ দুটি দল রেজিস্ট্রেশন করতে পারবে। প্রতি ম্যাচে প্রতিটি দল থেকে যেকোনো ৪ জন খেলোয়াড় অংশগ্রহণ করবে। বাকি ২ জন রিজার্ভ খেলোয়াড় হিসেবে থাকবে। প্রতিটি স্কুলের দাবা দলে উক্ত স্কুলের ক্রীড়া শিক্ষক, শিক্ষক কিংবা স্কুল কর্তৃক মনোনীত একজন ব্যক্তি অধিনায়ক বা ম্যানেজার হিসেবে থাকবেন। রেজিস্ট্রেশনের সময় দাবা দলকে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের অনুমোদনপত্র এবং অধিনায়ক বা ম্যানেজারের নাম জমা দিতে হবে।

অংশগ্রহণকারী স্কুলের সকল খেলোয়াড়কে প্রতিযোগিতায় তাদের স্কুল ইউনিফর্ম পরে খেলায় অংশ নিতে হবে। উল্লেখ্য, প্রতিযোগিতায় রেজিস্ট্রেশনের জন্য কোনো ফি লাগবে না।

রয়েছে আকর্ষণীয় পুরস্কার

বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা এগিয়ে নেওয়ার সুযোগ করে দেওয়ার পাশাপাশি বিজয়ীদের জন্য রয়েছে আকর্ষণীয় পুরস্কার। আয়োজক সূত্রে জানা গেছে, চ্যাম্পিয়ন টিমের দাবাড়ুরা পাবে সর্বমোট ১০ লক্ষ টাকা পুরস্কার। আর প্রথম রানার আপ টিমের দাবাড়ুরা ৫ লক্ষ এবং দ্বিতীয় রানার আপ টিমের দাবাড়ুরা পাবে সর্বমোট ৩ লক্ষ টাকা পুরস্কার।

এ ছাড়াও চ্যাম্পিয়ন টিমের সদস্যদের বিদেশ থেকে উচ্চতর প্রশিক্ষণের মাধ্যমে গ্র্যান্ডমাস্টার উপাধি অর্জনে সুযোগ করে দেওয়া হবে।

‘মার্কস অ্যাক্‌টিভ স্কুল চেস চ্যাম্পস’ নিয়ে আরও কিছু জানার থাকলে যোগাযোগ করা যাবে ০১৭৯৫৭৬৭৮৪৩ অথবা ০১৭৪৫৫৪৯৮১৫ নম্বরে, সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে।

বিস্তারিত জানা যাবে ওয়েবসাইটে