সাগরে বিদেশি কোম্পানিকে আগ্রহী করতে সুবিধা বাড়ছে

বঙ্গোপসাগরে তেল–গ্যাস অনুসন্ধানে বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে আকৃষ্ট করতে উৎপাদন অংশীদারি চুক্তির (পিএসসি) নতুন খসড়া করা হয়েছেফাইল ছবি

সমুদ্রসীমা বিজয়ের পর এক দশক ধরে ব্যর্থতার বৃত্তেই ঘুরপাক খাচ্ছে বঙ্গোপসাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের কাজ। চারটি বিদেশি কোম্পানি কাজ শুরু করলেও তিনটি ছেড়ে গেছে বঙ্গোপসাগর। গত ১০ বছরে নতুন করে দরপত্র আহ্বান করা হয়নি। নতুন করে দরপত্র আহ্বানের উৎপাদন অংশীদারি চুক্তি (পিএসসি) চূড়ান্ত হয়নি দুই বছরেও। বিদেশি কোম্পানিকে আগ্রহী করতে সুবিধা বাড়িয়ে পিএসসির খসড়া করা হয়েছে।

পিএসসি-২০২২ নামের নতুন খসড়া ইতিমধ্যে আইন মন্ত্রণালয় থেকে আইনি যাচাই (ভেটিং) শেষ করে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগে এসেছে। এটি এখন জ্বালানি ও খনিজ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুমোদনের অপেক্ষায়। এরপর এটি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য যাবে মন্ত্রিসভায়। শেষবারের মতো খসড়াটি যাচাই–বাছাই করতে গতকাল সোমবার খসড়া প্রস্তুতসংক্রান্ত কমিটির সঙ্গে বৈঠক করেছেন জ্বালানিসচিব খয়েরুজ্জামান মজুমদার।

নতুন খসড়ায় চুক্তিতে ঠিকাদার হিসেবে আসা বহুজাতিক কোম্পানি ও পেট্রোবাংলার মধ্যকার মুনাফা ভাগাভাগির সূত্র বদল করা হয়েছে এবার। আগে বিনিয়োগ ও পরিচালন খরচ তুলে নেওয়ার পর মুনাফা ভাগাভাগি করত দুই সংস্থা। এতে গ্যাস উৎপাদনের পরিমাণের ওপর ভিত্তি করে ৫৫ থেকে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত মুনাফা পেত পেট্রোবাংলা। উৎপাদন বাড়লে পেট্রোবাংলার মুনাফার হার বাড়ত। তবে এবার গ্যাসক্ষেত্র থেকে আয় করা মোট রাজস্বের ওপর ভাগাভাগি করা হয়েছে। এতে ৩৫ থেকে ৬৫ শতাংশ পর্যন্ত রাজস্বের ভাগ পাবে পেট্রোবাংলা। শুরুতে ঠিকাদার কোম্পানির বিনিয়োগের খরচ তোলার সময় পেট্রেবাংলার আয়ের ভাগ কম থাকবে। ধীরে ধীরে খরচ কমে আসবে আর পেট্রোবাংলার আয় বাড়বে।

পেট্রোবাংলার একজন কর্মকর্তা বলেন, এটাই এখন অধিকাংশ দেশে প্রচলিত। তাই বহুজাতিক কোম্পানির পরামর্শে এ পদ্ধতি করা হয়েছে। আগের পিএসসি নিয়ে বহুজাতিকদের কোনো আগ্রহ না থাকায় দরপত্র ডাকা যায়নি। এবার দরপত্রে অংশগ্রহণের ব্যাপারে তাদের আগ্রহ বাড়বে।

তবে এবার গ্যাসক্ষেত্র থেকে আয় করা মোট রাজস্বের ওপর ভাগাভাগি করা হয়েছে। এতে ৩৫ থেকে ৬৫ শতাংশ পর্যন্ত রাজস্বের ভাগ পাবে পেট্রোবাংলা

বাংলাদেশ তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা) সূত্র বলছে, সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে সবশেষ দরপত্র ডাকা হয়েছিল ২০১২ সালে। এরপর ২০১৯ সালে নতুন পিএসসি করা হলেও দরপত্র ডাকা হয়নি। দুই বছরের বেশি সময় ধরে নতুন পিএসসির কাজ চলছে।

সরকারের চূড়ান্ত অনুমোদনের পরপরই দরপত্র আহ্বানের জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে পেট্রোবাংলা। তবে সংস্থাটির দুজন কর্মকর্তা বলেন, কয়েক মাসের মধ্যেই হয়তো দরপত্র আহ্বান করা যাবে। দরপত্রে অংশ নিতে তিন মাস সময় দেওয়া হবে। আগ্রহী কোম্পানিও পাওয়া যাবে কিছু। এতে করে আরও কয়েক মাস লাগবে। বছর শেষে জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এই চুক্তি স্বাক্ষর আটকে যেতে পারে। এ ছাড়া দরপত্র আহ্বানের পর চুক্তি স্বাক্ষর করতে সাধারণভাবেও এক বছরের বেশি সময় লেগে যায়। আর চুক্তি স্বাক্ষরের পর প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি এনে কাজ শুরু করতে আরও অন্তত এক বছর লাগতে পারে।

পিএসসি সংশোধনের সিদ্ধান্ত হয় ২০২০ সালের ডিসেম্বরে। পরের বছরের শেষ দিকে পরামর্শক নিয়োগ করা হয়। তারা চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেয় গত বছরের আগস্টের দিকে। এরপর বছর শেষে তা পাঠানো হয় জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগে।

সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে সবশেষ দরপত্র ডাকা হয়েছিল ২০১২ সালে। এরপর ২০১৯ সালে নতুন পিএসসি করা হলেও দরপত্র ডাকা হয়নি

পিএসসি-২০১৯ অনুসারে প্রতি হাজার ঘনফুট গ্যাসের দাম রাখা হয়েছিল গভীর সমুদ্রের জন্য সোয়া সাত মার্কিন ডলার। আর অগভীর সমুদ্রের জন্য দাম ধরা হয় সাড়ে পাঁচ ডলার। নতুন পিএসসিতে কোনো নির্ধারিত দাম থাকছে না। বরং ব্রেন্ট ক্রুড অয়েলের (অপরিশোধিত জ্বালানি তেল) দামের ১০ শতাংশ গ্যাসের দাম ধরা হয়েছে।

বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমলে-বাড়লে আনুপাতিক হারে গ্যাসের দামও কমবে-বাড়বে। এখন প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ৭০ ডলার। এ হিসাবে বঙ্গোপসাগরে গ্যাসের দাম হবে ৭ ডলার। তবে জ্বালানি তেলের দাম ১০০ ডলার হলে গ্যাসের দাম হবে ১০ ডলার।