৫০ শতাংশ ফিস্টুলার কারণ অদক্ষ হাতে অস্ত্রোপচার

ফিমেল পেলভিক মেডিসিন অ্যান্ড রিকনস্ট্রাকটিভ সার্জারি সোসাইটি অব বাংলাদেশ (এফপিএমআরএসএসবি) নামের সংগঠনের যাত্রা শুরু উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানছবি: প্রথম আলো

দেশের শীর্ষ স্থানীয় স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে প্রসবসেবা ব্যবস্থাপনা ঠিকভাবে হচ্ছে না। অস্ত্রোপচারজনিত ফিস্টুলা উদ্বেগজনকভাবে বেড়ে গেছে। ৫০ শতাংশ ফিস্টুলার কারণ অদক্ষ হাতে অস্ত্রোপচার। পরিস্থিতি পাল্টাতে পেশাজীবীদের দক্ষতার পাশাপাশি নৈতিকতার ওপর জোর দিতে হবে।

নারী স্বাস্থ্যের জন্য গঠিত নতুন একটি পেশাজীবী সংগঠনের যাত্রা শুরু উপলক্ষে আজ শুক্রবার আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বিশেষজ্ঞরা এসব কথা বলেন।

নতুন সংগঠনের নাম ‘ফিমেল পেলভিক মেডিসিন অ্যান্ড রিকনস্ট্রাকটিভ সার্জারি সোসাইটি অব বাংলাদেশ’ (এফপিএমআরএসএসবি)। নতুন এই সংগঠনটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল। দেশের শীর্ষস্থানীয় স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ছাড়াও বেশ কয়েকজন বিদেশি বিশেষজ্ঞ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা অনুষ্ঠানে বক্তব্যও দেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন তিনজন—অধ্যাপক টি এ চৌধুরী, জাতীয় অধ্যাপক শায়লা খাতুন ও অধ্যাপক বায়েস ভূঁইয়া।

টি এ চৌধুরী বলেন, প্রসবকালে ভুল ব্যবস্থাপনা হচ্ছে। শ্রোণী গঠন-সংক্রান্ত ধারণা স্পষ্ট না থাকার কারণে অস্ত্রোপচারে সময় ভুল হচ্ছে। যদি জ্ঞান ও দক্ষতা না থাকে, তাহলে অস্ত্রোপচার করা উচিত নয়। চিকিৎসা-নৈতিকতায় স্পষ্ট বলা আছে, রোগীর কোনো ক্ষতি কোরো না।

নতুন সংগঠনটি গঠিত হয়েছে নারী স্বাস্থ্যের কিছু সমস্যার চিকিৎসা এবং এ ব্যাপারে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে। চিকিৎসকেরা বলছেন, মেরুদণ্ডের নিচের অংশ ও নিতম্বের মধ্যকার অস্থিকাঠামোকে বলে শ্রোণি বা পেলভিস। অস্ত্রোপচার, দুর্ঘটনা, বিলম্বিত প্রসবসহ নানা কারণে শ্রোণি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পুরুষের চেয়ে নারীর জীবনে এই ক্ষতি বেশি গভীরতর হয়। মানুষ সচেতন হলে ক্ষতি এড়ানো যায়। আর ক্ষতি হয়ে গেলেও তার চিকিৎসা আছে। স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞরা অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত নারীকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে সহায়তা করেন।

নতুন সংগঠনের সভাপতি ‘সায়েবাস মেথড’ উদ্ভাবনকারী স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক সায়েবা আখতার। অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় অধিবেশনের মূল উপস্থাপনায় তিনি ২০১৬ সালের একটি গবেষণার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, সে সময় বাংলাদেশে অস্ত্রোপচারজনিত ফিস্টুলা বেড়ে যাচ্ছিল। তখন ৩৫ শতাংশ ফিস্টুলার কারণ ছিল অস্ত্রোপচারজনিত। আর এখন সেই হার ৫০ শতাংশে পৌঁছেছে। এই হার বিশ্বে সর্বোচ্চ। এই পরিস্থিতি উদ্বেগজনক।

বিলম্বিত প্রসব, প্রসবে জটিলতা, অস্ত্রোপচার, দুর্ঘটনাসহ বেশ কিছু কারণে যোনিপথ ও মূত্রথলি যুক্ত হয়ে যায়। এটাই ফিস্টুলা। এতে প্রস্রাবে নিয়ন্ত্রণ থাকে না। এক দুর্বিষহ জীবনের মধ্যে পড়তে হয় ভুক্তভোগীকে।

বক্তব্য উপস্থাপনের সময় এক কিশোরীর ঘটনা তুলে ধরে সায়েবা আখতার বলেন, সে (কিশোরী) জানে না তার কী হয়েছে। সে জানে না, কেন এমন হয়েছে। সে জানে না, কত দিন এমন চলতে থাকবে। সে জানে না, এর আদৌ কোনো চিকিৎসা আছে কি না।

নির্ধারিত বক্তব্যে অধ্যাপক বায়েস ভূঁইয়া বলেন, ‘ফিমেল পেলভিক মেডিসিন অ্যান্ড রিকনস্ট্রাকটিভ সার্জারি’ বৈশ্বিকভাবে স্বীকৃত স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যার বিশেষায়িত উপশাখা।

জাতীয় অধ্যাপক শায়লা খাতুন তাঁর বক্তব্যে কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত শ্রোণির চিকিৎসা হয়, তা ব্যাখ্যা করেন।

প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞদের সংগঠন অবস্টেট্রিক্যাল অ্যান্ড গাইনোকোলজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশের (ওজিএসবি) সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ফেরদৌসী বেগম বলেন, নতুন এই সংগঠনের উচিত হবে গবেষণা করা, সচেতনতা বাড়ানো, মান-নৈতিকতা রক্ষা ও দক্ষ চিকিৎসক গড়ে তোলায় কাজ করা।