আমরাও চাই যে ভিন্ন হোক, এভাবে হলে তো বিচারব্যবস্থাই ভেঙে পড়বে: হাইকোর্ট

হাইকোর্ট ভবনফাইল ছবি

বিচারক ও বিচারব্যবস্থা নিয়ে গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি ও ডাকসুর (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ) সাবেক ভিপি নুরুল হকের গণমাধ্যমে আসা বক্তব্যের প্রেক্ষাপটে হাইকোর্ট বলেছেন, এভাবে হলে তো বিচারব্যবস্থাই ভেঙে পড়বে।
বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক-আল-জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ বুধবার এ কথা বলেন।

এর আগে নুরুল হকের দেওয়া বক্তব্য নিয়ে গত ৭ ডিসেম্বর একটি দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদন অনুয়ায়ী, বিজয়নগর পানির ট্যাংক মোড়ে এক সমাবেশে আদালতের বিচারকদের বিরুদ্ধে নুরুল হক আপত্তিকর বক্তব্য দিয়েছেন। বিষয়টি উপস্থাপিত হলে গত ১৭ ডিসেম্বর হাইকোর্টের একই বেঞ্চ নুরুল হকের প্রতি আদালত অবমাননার রুল দেন। বিচারক ও বিচারব্যবস্থা নিয়ে অবমাননাকর বক্তব্যের বিষয়ে ব্যাখ্যা জানাতে নুরুল হককে ১৭ জানুয়ারি আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দেন। এ অনুসারে আজ সকালে তিনি আদালতে হাজির হন।

আদালতে নুরুল হকের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী, আইনজীবী কায়সার কামাল ও মো. মাকসুদ উল্লাহ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী মাঈনুল হাসান।

এভাবে হলে তো বিচারব্যবস্থাই ভেঙে পড়বে

ক্রম অনুসারে বিষয়টি উঠলে ডায়াসের সামনে গিয়ে দাঁড়ান জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী। তাঁর পেছনে দাঁড়ান নুরুল হক।

শুরুতে এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘রুল দিয়েছেন। তাঁকে আদালতে হাজির হতে বলা হয়। তিনি হাজির হয়েছেন।’

এ সময় আদালত বলেন, ‘রুলে তাঁর দেওয়া বক্তব্যের কিছু কোটেশন আকারে আছে। দেখেছেন?’

আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘জি। আমরা ট্রান্সক্রিপ্ট করেছি, মিসকোট করা হয়েছে। কিছু অসংগতি আছে।’

আদালত বলেন, ‘যুগান্তর থেকে এটি উল্লেখ করা হয়েছে।’

তখন এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘ওনার বক্তব্য ট্রান্সক্রিপ্ট করেছি, তা ভিন্ন। প্রতিবেদনে যে ভাষায় বর্ণনা করা হয়েছে, সেভাবে নয়। কনটেক্সটের বাইরে লিখেছে।’
আদালত বলেন, ‘আমরাও চাই যে ভিন্ন হোক। কিন্তু এভাবে হলে তো বিচারব্যবস্থাই ভেঙে পড়বে।’

নুরুল হকের আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘আজ হাজির হয়েছেন। আমরা অ্যাফিডেভিট (হলফনামা) দেব। এমন কোনো অ্যাফিডেভিট দেব না, যে আদালত অখুশি হবেন।’

প্রকৃতপক্ষে কী ঘটেছে, কী বলেছেন দেখতে চাই

আইনজীবীর উদ্দেশে একপর্যায়ে আদালত বলেন, ‘উনারা রাজনৈতিক নেতা। ভবিষ্যতে রাষ্ট্র চালাবেন। এই পর্যায়ে আসা লোক যদি এ ধরনের কথা বলে? আমরা দেখতে চাই প্রকৃতপক্ষে কী ঘটেছে। সে কী বলেছে?’

তখন এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘ট্রান্সক্রিপ্টের কপি দেব। প্রতিষ্ঠানকে টাচ করার কোনো উদ্দেশ্য ছিল না। যে কনটেক্সে বলেছে, তা তুলে ধরব। একদিন আপনিও থাকবেন না, আমিও থাকব না। এই প্রতিষ্ঠান থাকবে। এ ব্যাপারে অতি সতর্ক থাকব।’
আদালত বলেন, ‘অবশ্যই থাকা উচিত। নাগরিকদের থাকা উচিত, আপনারা আইনজীবী, তাঁদেরও থাকা উচিত, বিচারক এবং যাঁরা রাজনীতিক, তাঁদের দায়িত্ব আরও বেশি। রাজনীতিক এমন কিছু বলবে না, যাতে জনগণ বিভ্রান্ত হয়।’

তখন এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘যা বলেছে, তাতে জনগণ খুশি হবে বলে আমার ধারণা। উনি যা বলেছেন, তা বাংলায় ট্রান্সক্রিপ্ট করা হয়েছে। কোটেশন সাধারণত হুবহু হওয়া উচিত। সাধারণের বোঝার ক্ষেত্রে দু-একটা শব্দ এদিক-সেদিক হলে অর্থ হবে ভিন্ন। এটি যেকোনো প্রতিষ্ঠানের জন্যই স্পর্শকাতর। এই প্রতিষ্ঠানের গুরুত্ব বুঝি। প্রতিষ্ঠানকে রক্ষা করতে হবে, সবার জন্যই।’

একপর্যায়ে আদালত বলেন, ‘আপনি না বলে থাকলে খুবই ভালো। তাহলে আমরা যুগান্তরকে ডাকব। দেখা যাক।’ তখন এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘আগে জবাব দিই।’ এ জন্য তিন সপ্তাহ সময়ের আরজি জানান তিনি।

এরপর অ্যাফিডেভিট দায়ের জন্য সময় মঞ্জুর করে আদালত আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি শুনানির জন্য দিন ধার্য করে আদেশ দেন। সেদিন সকাল সাড়ে ১০টায় নুরুল হককে আদালতে হাজির হতে বলে আদেশে উল্লেখ করা হয়।