বিদ্যুৎসাশ্রয়ী ও প্রযুক্তিনির্ভর ফ্রিজের খোঁজ

পবিত্র ঈদুল আজহা সামনে রেখে রেফ্রিজারেটর বা ফ্রিজ কেনার পরিকল্পনা করছেন অনেকেই। তবে মূল্যবান জিনিস হুজুগে না কেনাই ভালো। খোঁজখবর নিয়ে সামর্থ্যের মধ্যে সবচেয়ে ভালো ফ্রিজটিই ঘরে আনা উচিত। ‘ভালো ফ্রিজ’ বুঝবেন কী করে? ফ্রিজের গুণগত মান নির্ভর করে বিভিন্ন প্রযুক্তির ওপর। তাই কেনার আগে দেখে কিনতে হবে, এটি বিদ্যুৎসাশ্রয়ী ও সর্বশেষ প্রযুক্তিসংবলিত কি না।

কোন ফ্রিজ বিদ্যুৎসাশ্রয়ী এবং কেনার আগে কীভাবে যাচাই করতে হবে—এ বিষয়ে বাটারফ্লাই মার্কেটিং লিমিটেডের পণ্য ব্যবস্থাপক বিপুল দাস বলেন, ‘ফ্রিজ সম্পর্কে ভালো জ্ঞান থাকলে যে কেউ সাশ্রয়ীমূল্যে ভালো মানের ফ্রিজ কিনতে পারবেন। ফ্রিজের গায়ে কোথাও স্টার মার্ক দেওয়া থাকলে বুঝতে হবে এটি বিদ্যুৎসাশ্রয়ী।’

বিদ্যুৎসাশ্রয়ী ফ্রিজ কোনগুলো, তা চিনতে আরও কিছু পরামর্শ দেন বিপুল দাস। তিনি বলেন, ‘যে ফ্রিজ কিনতে যাচ্ছেন, সেটির কনডেন্সার কিসের তৈরি, তা অবশ্যই জেনে নিতে হবে। কপার কনডেন্সারযুক্ত ফ্রিজ পেলে সেটি কিনতে প্রাধান্য দিতে হবে। এ ধরনের ফ্রিজের কম্প্রেসরের সঙ্গে তামার তৈরি কুলিং সিস্টেমপাইপ থাকে। যেগুলো ফ্রিজের পেছনে ও দরজার ভেতরে থাকে। কপার কনডেন্সারযুক্ত ফ্রিজ বেশি বিদ্যুৎসাশ্রয়ী হয়। ফলে ফ্রিজের গ্যাস লিকেজ হয় না, মরিচাও পড়ে না। কেনার আগে ফ্রিজের কম্প্রেসর কতটা উন্নত, তা যাচাই করে নিতে হবে। কারণ, ফ্রিজের কম্প্রেসর খারাপ হলে বিদ্যুৎ খরচ বাড়বে।’

বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের কথা তো জানা হলো। এবার আসা যাক বিদ্যুৎ অনেকক্ষণ না থাকলে ফ্রিজ ব্যবহারে কী কী করতে হবে।

বিদ্যুৎ না থাকা অবস্থায় ফ্রিজের দরজা না খুললে ভেতরের অবস্থা চার ঘণ্টা পর্যন্ত ঠান্ডা থাকে। ফলে ফ্রিজে রাখা জিনিসও ভালো থাকে। আর দরজা খোলা হলে বাইরের তাপমাত্রার সঙ্গে ভেতরের তাপমাত্রা ভারসাম্য হারিয়ে ভেতরে রাখা জিনিস নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে। বিদ্যুৎবিভ্রাট পরিস্থিতিতে নতুন করে যাঁরা ফ্রিজ কিনছেন, তাঁরা পছন্দের ব্র্যান্ডের সঙ্গে সঙ্গে ফ্রিজের প্রযুক্তিগত দিকটিও খেয়াল করবেন।

সম্প্রতি ‘কুলপ্যাক’ নামের একটি ফিচার রেফ্রিজারেটরে যুক্ত করছে কিছু ব্র্যান্ড। বিদ্যুৎ না থাকলে রেফ্রিজারেটরের তাপ শোষণ করে নিতে পারে এই ফিচার। স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে ১২ ঘণ্টা বেশি সময় ঠান্ডা ধরে রাখতে পারে কুলপ্যাক ফিচার। তাই অনেকক্ষণ ধরে বিদ্যুৎ না থাকলেও দুশ্চিন্তার কিছু নেই।

বর্তমানে বাজারে কুলপ্যাক ফিচারের মতো নিত্যনতুন প্রযুক্তিসংবলিত হরেক রকম ফ্রিজ পাওয়া যাচ্ছে। প্রায় সব ব্র্যান্ডের ফ্রিজেই সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। ফ্রিজের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে কম্প্রেসর। আধুনিক ফ্রিজের কম্প্রেসর হচ্ছে ইনভার্টার প্রযুক্তিসমৃদ্ধ। ফ্রিজের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় প্রযুক্তি হচ্ছে ইনভার্টার। ইনভার্টার থাকার কারণে ফ্রিজ হয় বিদ্যুৎসাশ্রয়ী। এ কারণে কমে যায় বিদ্যুতের বিল।

আধুনিক রেফ্রিজারেটরে রয়েছে টুইন কুলিং প্লাস প্রযুক্তি। এই প্রযুক্তির কারণে দুটি কুলিং ফ্যান ও দুটি ইভাপোরেটর কাজ করে। এতে খাবারের দুর্গন্ধ ছড়ায় না, ৭০ শতাংশ আর্দ্রতা বজায় থাকে। স্মার্ট ফ্রিজে অনেক আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন ইনভার্টার প্রযুক্তি থাকে। এতে পাঁচটি মোড কাজ করে। এর মধ্যে একটিতে ওপরে ডিপ আর নিচে নরমাল সুবিধা থাকে। রয়েছে টুইন কুলিং প্লাস প্রযুক্তির সুবিধা। নতুন এই প্রযুক্তিসমৃদ্ধ ফ্রিজে ডিপ কনভার্ট করে পুরোটাই নরমাল করে ফেলা যায়। যদি বাসার বাইরে দীর্ঘ সময়ের জন্য যেতে হয়, তাহলে এনার্জি সেভিং মোড চালু করে রাখতে পারেন।
আধুনিক ফ্রিজগুলোয় আরও রয়েছে স্মার্ট নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা। রয়েছে ইন্টারনেট অব থিংস প্রযুক্তি। অর্থাৎ ইন্টারনেটেও যুক্ত হতে পারে ফ্রিজ। এতে ফ্রিজে রাখা খাবারদাবারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে সুপারশপে ফ্রিজ থেকে স্বয়ংক্রিয় বার্তা (নোটিফিকেশন) চলে যায়। ফলে অনেকাংশে সহজ হয়ে যায় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের কাজ।