নতুন করে দুই কিশোরীর নমুনা পরীক্ষায় ধর্ষণের প্রমাণ পাওয়ার পর ডিএনএ পরীক্ষা করা হয়। তাতে সেলিমের ডিএনএ মিলে যাওয়ায় গত ১৭ জানুয়ারি তাঁর বিরুদ্ধে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় দুটি মামলা করে পুলিশ। সেলিম মূলত লাশকাটা ঘরের পাহারা দিতেন। তিনি গাড়ি থেকে লাশ ওঠানো-নামানোর কাজ করতেন। হাসপাতাল থেকে কোনো বেতন না পেলেও মৃত ব্যক্তিদের স্বজনদের কাছ থেকে টাকা নিতেন।

মামলা দুটির তদন্ত শেষ পর্যায়ে রয়েছে বলে পাঁচলাইশ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সাদিকুর রহমান জানিয়েছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ২০২১ সালের অক্টোবর ও ডিসেম্বরে নগরের কোতোয়ালি থানার ১৬ বছর বয়সী এবং বাকলিয়া চাক্তাই এলাকার ১২ বছরের দুই কিশোরীর অপমৃত্যু হয়। ময়নাতদন্তের আগে ওই সময়ে তাদের লাশ দুটি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের লাশঘরে রাখা হয়। সেখানে মরদেহগুলোর সঙ্গে যৌনসংগম করেন সেলিম। শিগগিরই দুটি মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হবে।

লাশঘরে ৩২ বছর বয়সী চকবাজারের নারী এবং চান্দগাঁওয়ের ১২ বছর বয়সী কিশোরীর মরদেহে ধর্ষণের মামলাটি তদন্ত করছে সিআইডি। গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে পাঁচলাইশ থানায় মামলাটি হয়। সিআইডি চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিশেষ পুলিশ সুপার শাহনেওয়াজ খালেদ প্রথম আলোকে বলেন, নারী ও একাধিক শিশু-কিশোরীর লাশের সঙ্গে শারীরিক সংসর্গ করেছেন সেলিম। গ্রেপ্তারের পর আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে সবকিছু স্বীকার করেছেন। মরদেহগুলোর সুরতহালে বলপ্রয়োগজনিত কোনো আঘাতের চিহ্ন বা ধর্ষণের চিহ্নের কথা উল্লেখ ছিল না। সেলিমের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হবে।

নগরীতে আরও পাঁচ তরুণীর অপমৃত্যু মামলার তদন্ত কর্মকর্তার সঙ্গে কথা হয় প্রথম আলোর। তাঁরা জানিয়েছেন, মরদেহের ‘হাই ভেজাইনাল সোয়াব (এইচভিএস)’ সংগ্রহ করে সিআইডির ফরেনসিক ল্যাবরেটরিতে পাঠিয়েছেন। সেখানে পুরুষের শুক্রাণু পেলেই সেলিমের ডিএনএ প্রোফাইলের সঙ্গে মিল রয়েছে কি না, দেখা হবে। যেহেতু তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে লাশঘরে মরদেহের সঙ্গে যৌনসংগম করার কথা স্বীকার করেছেন, বিষয়টি তদন্তে গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।

লাশঘরে ধর্ষণের শিকার চাক্তাই এলাকার কিশোরীর বাবা প্রথম আলোকে বলেন, ‘মরার পরে হাসপাতালের হেফাজতে আমার মেয়ে ধর্ষণের শিকার হয়েছে, এ কথা মনে পড়লে বুক ভেঙে যায়।’ এ ধরনের ঘটনা যাতে আর কেউ ঘটানোর সুযোগ না পান এ জন্য সেলিমের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানান তিনি।