পি কে হালদারের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি ৮ সেপ্টেম্বর

পি কে হালদার

জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও অর্থ পাচারের মামলায় গ্লোবাল ইসলামী (সাবেক এনআরবি গ্লোবাল) ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রশান্ত কুমার হালদারসহ (পি কে হালদার) ১৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি চলছে। আগামী ৮ সেপ্টেম্বর অভিযোগ গঠনের পরবর্তী শুনানির দিন ঠিক করেছেন আদালত। ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১০-এর বিচারক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম আজ সোমবার এদিন ঠিক করেন।

প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের পাবলিক প্রসিকিউটর মীর আহমেদ আলী সালাম। তিনি বলেন, এ মামলায় পি কে হালদারসহ অন্য আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের স্বপক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন। পরে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা শুনানি করেন। তবে শুনানি শেষ না হওয়ায় আদালত অভিযোগ গঠন বিষয়ে নতুন দিন ঠিক করেন।

শুনানির আগে কারাগারে থাকা পি কে হালদারের মামাতো ভাই শঙ্খ ব্যাপারী, ঘনিষ্ঠ সহযোগী সুকুমার মৃধা, অনিন্দিতা মৃধা ও অবন্তিকা বড়ালকে আদালতে হাজির করা হয়।

এ মামলায় পি কে হালদারসহ ১০ জন পলাতক। পলাতক অন্য আসামিরা হলেন পি কে হালদার, তাঁর মা লীলাবতী হালদার, ভাই প্রীতিশ কুমার হালদার, পি কে হালদারের সহযোগী অমিতাভ অধিকারী, পূর্ণিমা রানী হালদার, উত্তম কুমার মিস্ত্রি, রাজীব সোম, সুব্রত দাস, অনঙ্গ মোহন রায় ও স্বপন কুমার মিস্ত্রি।

আদালতসংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, এ মামলায় গত জানুয়ারিতে পি কে হালদার, তাঁর মা, ভাই, নিকটাত্মীয়সহ ১৪ জনের নামে অভিযোগপত্র জমা দেয় দুদক। দুদকের দেওয়া অভিযোগপত্রের তথ্যানুযায়ী, পি কে হালদার নামে-বেনামে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ৯৩৩ কোটি টাকার জমি, ফ্ল্যাট ও হোটেল কিনেছেন। এ ছাড়া তিনি কানাডায় পাচার করেছেন প্রায় ৮০ কোটি টাকা।

দুদক বলেছে, পিরোজপুরের নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদার মাত্র ১০ বছরের (২০০৯-১৯ সাল) ব্যবধানে এত সম্পদ গড়েছেন। তাঁর বৈধ আয়ের পরিমাণ মাত্র ১২ কোটি টাকা।

দেশের চারটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে পি কে হালদার নামে-বেনামে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা বের করে নেন। এ টাকা আর ফেরত না আসায় ওই চারটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান গ্রাহকদের টাকা ফেরত দিতে পারছে না। প্রতিষ্ঠান চারটি হলো ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, এফএএস ফিন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড ও বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফিন্যান্স কোম্পানি (বিআইএফসি)।

টাকা বের করার আগে শেয়ার কিনে তিনি এসব প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ নেন। এই আর্থিক কেলেঙ্কারি জানাজানি হয় ২০২০ সালের শুরুতে। তবে তিনি দেশ ছাড়েন ২০১৯ সালের শেষ দিকে।

পলাতক অবস্থায় ২০২০ সালের ৮ জানুয়ারি পি কে হালদারের বিরুদ্ধে প্রায় ২৭৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থ পাচারের অভিযোগে মামলা করে দুদক।
বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) ও কানাডীয় ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের তথ্যের বরাত দিয়ে দুদক প্রতিবেদনে বলেছে, পি কে হালদার ২০১২ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে তাঁর ভাই প্রীতিশ হালদারের কাছে ১ কোটি ১৭ লাখ ১১ হাজার ১৬৪ কানাডীয় ডলার পাচার করেন। বাংলাদেশি টাকায় তা দাঁড়ায় প্রায় ৮০ কোটি টাকা।

১৪ মে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলা থেকে পি কে হালদারকে গ্রেপ্তার করে দেশটির আর্থিক দুর্নীতিসংক্রান্ত তদন্তকারী সংস্থা ইডি। তারা পি কে হালদারের পাঁচ সহযোগীকেও গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের আগে রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে পি কে হালদারের প্রাসাদসম বাড়িসহ অনেক সম্পদের সন্ধান পায় ইডি। এখন সেখানে পি কে হালদার ও তাঁর সহযোগীদের বিচার চলছে।

৭ জুন ইডি আদালতকে জানায়, পশ্চিমবঙ্গসহ ভারতের বিভিন্ন এলাকায় পি কে হালদারসহ তাঁর সহযোগীদের ৮৮টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সন্ধান পেয়েছে তারা। পি কে হালদার ও তাঁর সহযোগীদের ৩০০ কোটি টাকার সম্পদ পাওয়ার কথাও আদালতকে জানিয়েছে ইডি। পি কে হালদার এখন ভারতের কারাগারে।