তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী করার আহবান

তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালীকরণে সাংবাদিকদের সঙ্গে নারী মৈত্রীর মতবিনিময় সভা
ছবি–সংগৃহীত


গত শনিবার বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ‘নারী মৈত্রী’র আয়োজনে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী করার লক্ষ্যে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয় ।

নারী মৈত্রীর নির্বাহী পরিচালক শাহীন আকতারের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের (এনটিসিসি) সমন্বয়কারী (অতিরিক্ত সচিব) হোসেন আলী খোন্দকার। বিশেষ অতিথি ছিলেন পিআইবির শাহ শেখ মজলিশ ফুয়াদ, সাংবাদিকদের মধ্যে শ্যামল দত্ত, সোহরাব হাসান, রাশেদ রাব্বি, প্রণব সাহা, রিয়াজ আহমদ, জুলহাস আলম, লোটন একরাম ও শাহনাজ বেগম।

অনুষ্ঠানে বিশেষ আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস বাংলাদেশের (সিটিএফকে) আব্দুস সালাম মিয়া, হুমায়রা সুলতানা ও আতাউর রহমান। অনুষ্ঠানের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নারী মৈত্রীর নাছরিন আকতার।  

শাহীন আকতার বলেন, বর্তমানে তরুণেরা ই-সিগারেটের প্রতি বেশি আসক্ত হয়ে পড়ছে। তাদের এই আসক্তি থেকে বের করে আনতে ই-সিগারেট বাজারজাত বন্ধ করা অত্যন্ত জরুরি। শুধু তা–ই নয়, বন্ধ করতে হবে সিগারেটের খুচরা শলাকা বিক্রি। পাশাপাশি তামাকজাত পণ্যের মোড়কে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণীর আকার ৫০ থেকে ৯০ শতাংশে বৃদ্ধি করা এবং বিক্রয় স্থানে তামাকজাত দ্রব্যের প্রদর্শন বন্ধ করতে হবে।

আব্দুস সালাম মিয়া বলেন, টোব্যাকো এটলাস ২০১৮-এর তথ্যমতে, তামাক ব্যবহারজনিত রোগে প্রতিবছর বাংলাদেশে ১ লাখ ৬১ হাজার মানুষ অকালে মৃত্যুবরণ করেন। তার মানে প্রতিদিন ৪৪২ জন মানুষ প্রাণ হারান। জনস্বাস্থ্যের সুরক্ষায় ও জীবন রক্ষায় দ্রুততম সময়ে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী করতে হবে এখনই।

আর একটি প্রাণও যাতে না হারাতে হয় তামাকের কারণে, সে প্রেক্ষাপটে সোহরাব হাসান বলেন, ‘প্রতিদিন মানুষ প্রাণ হারাচ্ছেন এই ভয়ংকর তামাকের আগ্রাসনে। তামাকের এই সর্বগ্রাসী আগ্রাসন ও তামাক মহামারি আমাদের জনস্বাস্থ্যের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি। আমাদের তামাকের ভয়াবহতা সম্পর্কে আরও সোচ্চার হতে হবে। পাশাপাশি তামাক কোম্পানিগুলোর কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী করতে হবে।’  

নারী স্বাস্থ্যের কথায় জোর দিয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, ধূমপান শুধু ব্যবহারকারীদের ক্ষতিগ্রস্ত করে না, উপরন্তু যারা তাদের আশপাশে থাকে, তারাও এর ক্ষতির প্রভাব থেকে মুক্ত থাকতে পারে না। বিশেষভাবে শিশু, নারী ও নারীর গর্ভের সন্তান ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই জনস্বাস্থ্য রক্ষায় সব পাবলিক প্লেস, কর্মক্ষেত্র ও গণপরিবহনে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান নিষিদ্ধ করতে হবে।  

হোসেন আলী খোন্দকার বলেন, ‘তামাকের ফলে সৃষ্ট অর্থনৈতিক ক্ষতি বিষয়ে সাধারণ মানুষকে অবহিত করতে হবে। তামাক থেকে সরকারের যে রাজস্ব আয় আসে, তার চেয়ে তামাক ব্যবহারের কারণে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাবাবদ ব্যয় ২৭ শতাংশ বেশি। রাজস্ব আয় প্রায় ২২ হাজার ৮১০ কোটি এবং চিকিৎসা ব্যয় প্রায় ৩০ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা। তামাকের কারণে বার্ষিক ক্ষতি প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা (ক্যানসার সার্ভে-২০১৮)। সুতরাং মানুষের ভ্রান্ত ধারণা দূর করার পাশাপাশি প্রয়োজন তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী করা। তামাকের বিরুদ্ধে আমাদের সবাইকে নিজ অবস্থান থেকে হতে হবে সচেতন।’ বিজ্ঞপ্তি