সাশ্রয়ী, স্বাচ্ছন্দ্যময়, ঝুঁকিও আছে

মোটরসাইকেলে কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় অন্য যানবাহনের চেয়ে কম। তবে নিয়ম মেনে চলাচল করতে হয়।

বেসরকারি চাকরিজীবী তারিকুল ইসলাম বাস করেন ঢাকার নিকেতনে। তাঁর অফিস বারিধারায়। তিনি মোটরসাইকেল চালিয়ে অফিসে যাতায়াত করেন।

তারিকুল প্রথম আলোকে বলেন, মোটরসাইকেল না থাকলে তাঁকে একাধিক দফা যানবাহন পরিবর্তন করে অফিসে যেতে হতো। ভোগান্তি আর ব্যয় হতো অনেক বেশি। মোটরসাইকেলে ১৩০ টাকার এক লিটার জ্বালানি তেলে কয়েক দিন চলে যায়। চলাচলও স্বাচ্ছন্দ্যের।

ব্যয় সাশ্রয় ও স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য তারিকুলের মতো অনেকেই মোটরসাইকেল ব্যবহার করেন। কারও কারও জীবিকার উৎস হয়ে উঠেছে মোটরসাইকেল। নারীরাও এখন দুই চাকার যান ব্যবহার করছেন বাসে ওঠার ভোগান্তি ও রিকশা-অটোরিকশার বাড়তি ব্যয় এড়াতে। গ্রামে চলাচলেও মোটরসাইকেল জনপ্রিয়। সবাই ঝুঁকির কথা জানেন।

তারিকুল বলছিলেন, ‘ঝুঁকি তো আছেই। কিন্তু আমি গতি নিয়ন্ত্রণে রাখি, যতটা নিরাপদ থাকা যায় চেষ্টা করি। পাঁচ মিনিটের পথের জন্য বের হলেও আমি হেলমেট ব্যবহার করি। এ ছাড়া তিনজন কখনোই চড়ি না।’

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) তথ্য অনুসারে, দেশে ২০১৭ সাল থেকে মোটরসাইকেলের নিবন্ধন বাড়তে থাকে। এর আগের বছর ২০১৬ সালের শেষ দিকে বাংলাদেশে রাইড শেয়ারিং সেবা শুরু হয়। শহর-গ্রাম সবখানেই মোটরসাইকেলের সংখ্যা বেড়ে যায়।

বিআরটিএ জানাচ্ছে, চলতি বছরের মে পর্যন্ত সারা দেশে নিবন্ধিত মোটরসাইকেলের সংখ্যা ৪১ লাখ ৩৬ হাজার ৮৩০। ঢাকায় ১০ লাখ ৫২ হাজার ৫১২টি মোটরসাইকেল নিবন্ধন হয়েছে এ সময়ে। মোট যানবাহনের ৭০ শতাংশই এখন মোটরসাইকেল।

মোটরসাইকেলের প্রসারের পাশাপাশি এর দুর্ঘটনা ও মৃত্যুর সংখ্যাও অনেক বেশি। রোড সেফটি ফাউন্ডেশন বলছে, ২০২২ সালে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মারা যান ৩ হাজার ৯১ জন। সড়কে বছরে মোট মৃত্যুর ৩৫ শতাংশের মতো মোটরসাইকেলচালক অথবা আরোহী। তবু ব্যয় সাশ্রয় ও স্বাচ্ছন্দ্যময় চলাচলের জন্য মোটরসাইকেলই ভরসা অনেকের কাছে।

বাংলাদেশ হোন্ডা প্রাইভেট লিমিটেডের (বিএইচএল) হিসাবে, ১১০ সিসির একটি মোটরসাইকেলে চলাচলে প্রতি কিলোমিটারে ব্যয় আসে সাড়ে চার টাকার মতো। মোটরসাইকেলটি প্রতি লিটার অকটেনে ৫০ কিলোমিটার চলে বলে ধরা হয়েছে। পাশাপাশি বছরে চারটি মেরামত সেবা সার্ভিসিং বাবদ ব্যয় ৫ হাজার টাকা এবং মোটরসাইকেলের দামের অবচয়ও বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। তাদের হিসাবে, একটু বেশি দামি মোটরসাইকেলের ক্ষেত্রে ব্যয়টি পাঁচ টাকার কিছু বেশি হবে।

ঢাকায় সিএনজিচালিত অটোরিকশার সর্বশেষ ভাড়া ঠিক করা হয়েছে ২০১৫ সালে। তাতে বলা হয়েছে, প্রথম দুই কিলোমিটারের ভাড়া ৪০ টাকা। পরের প্রতি কিলোমিটারের ভাড়া ১২ টাকা। যদিও এই ভাড়াহার কেউ মানে না। দিতে হয় দ্বিগুণ, তিন গুণ। যাত্রীর গন্তব্যে যেতে অনীহা দেখানোর প্রবণতা চালকদের মধ্যে প্রকট।

জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে ঢাকায় বাস ভাড়াও বেড়েছে। গত বছর বর্ধিত সর্বশেষ হার অনুযায়ী বাসে প্রতি কিলোমিটারের ভাড়া আড়াই টাকা। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির সঙ্গে রিকশা ভাড়াও লাফিয়ে বেড়েছে। ২০ টাকার নিচে এখন রিকশাচালকেরা স্বল্প দূরত্বেও যেতে চান না।

চালকেরা মনে করেন, মোটরসাইকেলে চলাচলেই এখন ব্যয় কম। বাসে এর চেয়ে কম খরচে যাতায়াত করা যায়। তবে ঢাকার বাস লক্কড়ঝক্কড়। ভিড় ঠেলে ওঠাও কঠিন।

মোটরসাইকেল এখন অনেকের জীবিকারও উৎস। করোনা মহামারির আগে মো. শাহীন একটি ব্যক্তিগত গাড়ির চালক ছিলেন। করোনার সময়ে চলাচলে নিষেধাজ্ঞা এলে মোটরসাইকেলে যাত্রী বহন শুরু করেন। দুই বছর ধরেই কাজটি করে যাচ্ছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, নিয়ম মেনে চালাতে জানলে কোনো সমস্যা হয় না।

মোটরসাইকেল কাজের গতি বাড়ায়। এ কারণে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কর্মীদের মোটরসাইকেল কিনে দেয়। যাঁদের কাজের জন্য প্রতিদিন একাধিক জায়গায় যেতে হয়, তাঁদের যানজটের মধ্যে মোটরসাইকেল ছাড়া উপায় থাকে না।

ঢাকায় ১৪ বছর ধরে মোটরসাইকেল ব্যবহার করেন রাকিব হাসান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, যাঁরা অফিসে যাতায়াত বা নিজের কাজের জন্য মোটরসাইকেল ব্যবহার করেন, তাঁদের ক্ষেত্রে দুর্ঘটনার হার কম। মোটরসাইকেলকে একটি বিপজ্জনক যানবাহনে পরিণত করেছেন বেপরোয়া চালকেরা।