দেশের চার গুণীকে নিয়ে শিল্পকলা একাডেমির স্মরণানুষ্ঠান

‘স্মৃতি সত্তা ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক স্মরণানুষ্ঠানে কাজী মোতাহার হোসেনকে নিয়ে মূল প্রবন্ধ পড়েন সংগীতবিষয়ক পত্রিকা মাসিক সরগম সম্পাদক কাজী রওনাক হোসেন। মঞ্চে উপবিষ্ট (বাঁ থেকে) রাজিব কুমার সরকার ও গোলাম কুদ্দুছ। সোমবার সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় সংগীত ও নৃত্যকলাকেন্দ্র মিলনায়তনেছবি: সংগৃহীত

শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে চলছে ‘স্মৃতি সত্তা ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রের গুণী ও সৃজনশীল ব্যক্তিদের স্মরণ অনুষ্ঠান। এর ধারাবাহিকতায় সোমবার জাতীয় অধ্যাপক পরিসংখ্যানবিদ কাজী মোতাহার হোসেন, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও সাংবাদিক কামাল লোহানী, চলচ্চিত্রনির্মাতা আলমগীর কবির ও নাট্যকার কল্যাণ মিত্রকে স্মরণ করা হয়।

জাতীয় অধ্যাপক কাজী মোতাহার হোসেন স্মরণ

শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় সংগীত ও নৃত্যকলা কেন্দ্র মিলনায়তনে স্মরণানুষ্ঠান শুরু হয়েছিল জাতীয় অধ্যাপক পরিসংখ্যানবিদ ও সাহিত্যিক কাজী মোতাহার হোসেনকে নিয়ে। প্রথমেই তাঁর জীবন ও কর্ম নিয়ে একাডেমি নির্মিত একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। পরে ‘জ্ঞানতাপস জাতীয় অধ্যাপক কাজী মোতাহার হোসেন’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ পড়েন সংগীতবিষয়ক পত্রিকা মাসিক সরগম সম্পাদক কাজী রওনাক হোসেন।
অনুষ্ঠানে আলোচক ছিলেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উপসচিব রাজিব কুমার সরকার। সভাপতিত্ব করেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ।

কামাল লোহানী: সময়ের সাহসী যোদ্ধা

বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও সাংবাদিক, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দসৈনিক কামাল লোহানী সম্পর্কে আলোচকেরা বলেছেন, তিনি ছিলেন সময়ের সাহসী যোদ্ধা। সোমবার সন্ধ্যায় জাতীয় সংগীত ও নৃত্যকলা কেন্দ্র মিলনায়তনে স্মরণানুষ্ঠানে ‘সময়ের সাহসী যোদ্ধা কামাল লোহানী’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ পড়েন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. মাহমুদুল হাসান। আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শাকিব লোহানী। সভাপতিত্ব করেন বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব শংকর সাঁওজাল।

অনুষ্ঠানে কামাল লোহানীর জীবন ও কর্মের ওপর নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।

প্রাবন্ধিক বলেন, বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা কামাল লোহানী একটি আদর্শবাদী, প্রতিবাদী সংগ্রামীর নাম। তিনি একাধারে একজন প্রখ্যাত মুক্তিযোদ্ধা, বহুদর্শী সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব। মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সংবাদ বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের যে ঘোষণা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত হয়েছিল, সেটি তিনিই পাঠ করেছিলেন।

আলোচক বক্তারা বলেন, সারা জীবন মানুষের অধিকার আদায়ের পক্ষে সংগ্রাম করে গেছেন কামাল লোহানী। কারও কাছে মাথা নত করেননি কোনো দিন। সব সময় তিনি সাহসী যোদ্ধার ভূমিকা পালন করেছেন। অতিবাহিত করেছেন এক বর্ণাঢ্য জীবন। কামাল লোহানী সম্পর্কে হেমাঙ্গ বিশ্বাসের ভাষায় বলতে হয়, ‘আরও বসন্ত বহু বসন্ত তোমার নামে আসুক/ তুমি তো সূর্য অস্তবিহীন চির জাগরূক।’

আলমগীর কবির: আধুনিক চলচ্চিত্রের পথিকৃৎ

‘স্মৃতি সত্তা ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে সোমবার বিকেল সাড়ে পাঁচটায় একাডেমির স্টুডিও থিয়েটার মিলনায়তনে বরেণ্য চলচ্চিত্র পরিচালক আলমগীর কবির এবং বিশিষ্ট সাহিত্যিক, অভিনেতা, নির্দেশক ও নাট্যকার কল্যাণ মিত্রকে স্মরণ করা হয়।

প্রথমেই ছিল চলচ্চিত্র নির্মাতা আলমগীর কবিরকে নিয়ে অনুষ্ঠান। শুরুতে আলমগীর কবিরের জীবন ও কর্ম নিয়ে শিল্পকলা একাডেমি নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। পরে ‘আলমগীর কবির: স্বপ্নদেখা এক অভিযাত্রী’ নামের মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক ও সাংবাদিক রফিকুজ্জামান। অনুষ্ঠানে আলোচক ছিলেন বিশিষ্ট চলচ্চিত্র নির্মাতা কাজী হায়াৎ। সভাপতিত্ব করেন শিক্ষক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা মসিহউদ্দিন শাকের।

প্রবন্ধকার বলেন, আলমগীর কবির ছিলেন এ দেশের চলচ্চিত্রে নবতরঙ্গের উদ্যোক্তা ও তাত্ত্বিক। তিনি চলচ্চিত্রের বিষয়বস্তু ও উপস্থাপনায় আনেন নতুন ধারা। তাঁর চলচ্চিত্রগুলোতে চিত্রগ্রহণ, ক্যামেরার কোণ নির্ণয়, লেন্সের ব্যবহার, আবহসংগীত রচনা, গানের বাণী, সুর, অভিনয়, সংলাপ বলা ও সম্পাদনা-সবকিছুতেই আধুনিকতার ছাপ সুস্পষ্ট। সে জন্যই আলমগীর কবিরকে বলা হয়, বাংলাদেশে আধুনিক চলচ্চিত্র নির্মাণের পথিকৃৎ।

আলোচকেরা বলেন, আলমগীর কবির চলচ্চিত্র নির্মাণের পাশাপাশি চলচ্চিত্রবিষয়ক লেখালেখি, গ্রন্থ রচনা ও সমালোচনা করছেন। প্রশিক্ষণ ও দেশি-বিদেশি সুস্থ চলচ্চিত্র প্রদর্শনের মাধ্যমে শিক্ষিত চলচ্চিত্র দর্শক, অনুরাগী, বোদ্ধা, লেখক, গবেষক, ছাত্র, শিক্ষক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা তৈরিতে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে গেছেন।

কল্যাণ মিত্রকে স্মরণ

বিশিষ্ট সাহিত্যিক, অভিনেতা, নির্দেশক ও নাট্যকার কল্যাণ মিত্রকেও স্মরণ করা হয়। তাঁকে নিয়ে নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনের পর ‘নাট্যকার কল্যাণ মিত্র: জনস্রোতে কিংবা স্রোতের বিপরীতে’ শীর্ষক প্রবন্ধ পড়েন মনিরুল ইসলাম। আলোচনা করেন স্বাধীন বাংলা বেতার কর্মী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মনোয়ার হোসেন। স্মরণানুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী।