কাস্টমস কমিশনার এনামুলের ৯ তলা বাড়ি, ৩ ফ্ল্যাট জব্দ
সিলেটের কাস্টমস ও ভ্যাট কমিশনার মোহাম্মদ এনামুল হকের ঢাকা ও গাজীপুরে থাকা বিপুল পরিমাণ সম্পদ জব্দ করেছেন আদালত। এর মধ্যে ঢাকার বসুন্ধরায় একটি নয়তলা বাড়ি ও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় তিনটি ফ্ল্যাট এবং একাধিক বাণিজ্যিক স্পেস জব্দ করা হয়েছে। এর বাইরে গাজীপুর, গুলশান ও বাড্ডা এলাকায় এনামুলের ৪৭ শতাংশ জমি জব্দ করা হয়। জব্দ করা সম্পদের বাইরেও তাঁর গ্রামের বাড়ি ফেনীর সোনাগাজীতে একাধিক বাড়ি, মাছ ও গরুর খামারের খোঁজ পাওয়া গেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন সম্পদ জব্দের এ আদেশ দেন।
৯ কোটি ৭৬ লাখ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০২৩ সালের ৩১ জুলাই দুদক এনামুল হকের বিরুদ্ধে এই মামলা করেন। এনামুল তখন কাস্টমস ভ্যালুয়েশন অ্যান্ড ইন্টারনাল অডিট বিভাগের কমিশনার পদে ছিলেন।
দুদকের কৌঁসুলি (পিপি) মোশাররফ হোসন কাজল গতকাল আদালতকে বলেন, আসামির এসব সম্পদ জব্দ করা না হলে তা হস্তান্তর হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, যা পরবর্তী সময়ে রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করা সম্ভব হবে না।
এর আগে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য মো. মতিউর রহমান ও তাঁর স্ত্রী-সন্তানদের নামে থাকা ৮৬৬ শতাংশ জমি ও ঢাকার চারটি ফ্ল্যাট জব্দের (ক্রোক) আদেশ দেন আদালত। এ ছাড়া সম্প্রতি এনবিআরের প্রথম সচিব কাজী আবু মাহমুদ ফয়সাল ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের সম্পদ জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
এনামুলের জব্দ করা সম্পদের মধ্যে রয়েছে ঢাকার বসুন্ধরার জি ব্লকে তিন কাঠা জমির ওপর নয়তলা বাড়ি, বনানী ও কাকরাইলে তিনটি ফ্ল্যাট, মোহাম্মদপুরসহ ঢাকায় তিনটি বাণিজ্যিক স্পেস ও গুলশানে কার পার্কিং। গুলশানে তাঁর যে ৩৩ শতাংশ জমি রয়েছে, সেই জমির দাম দেখিয়েছেন মাত্র ৭ লাখ ৮৪ হাজার টাকা।
সিলেটের কাস্টমস ও ভ্যাট কমিশনার হিসেবে এনামুল হক গত বছরের ৫ সেপ্টেম্বর যোগ দেন। তিনি ১৩ বিসিএসের কর্মকর্তা।
যোগদানের পর এনামুল হক নিয়মিত অফিস করেছেন। তিনি অফিসের অষ্টম তলায় থাকেন। এটা ‘কমিশনারের বাংলো’ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। তবে সেখানে তাঁর পরিবারের কোনো সদস্য থাকেন না। কমিশনারের কার্যালয়টি নগরের মেন্দিবাগ এলাকায় অবস্থিত। বুধবার রাতে তিনি সিলেট ছেড়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার তিনি অফিস করেননি
ফেনীতে একাধিক বাড়ি, মাছ ও গরুর খামার
এনামুল হকের গ্রামের বাড়ি ফেনীর সোনাগাজী উপজেলায়। তাঁর বাবার বাড়ি উপজেলার সদর ইউনিয়নের মনগাজী এলাকায় হলেও বহু বছর আগে তিনি পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের তুলাতলী এলাকায় এসে বাড়ি করেন। এই এলাকায় তাঁর চারটি বাড়ি রয়েছে। এর মধ্যে দুটি তিনতলা বাড়ি। বাকি দুটি একতলা।
প্রথম আলোর ফেনীর সোনাগাজী প্রতিনিধি জানান, সোনাগাজীতে চারটি বাড়ি ছাড়াও মুহুরী প্রকল্প এলাকায় তাঁর নামে একটি বাংলো বাড়ি এবং পাঁচ একরের বেশি জায়গায় মাছ ও গরুর খামার রয়েছে।
স্থানীয় লোকজনের ভাষ্য, সোনাগাজীতে এনামুলের সম্পদ দেখাশোনা করেন তাঁর ভগ্নিপতি মো. শরীফ হোসেন। দুই বছর আগে বিয়েতে শরীফকে তিনি নোয়াহ গাড়ি উপহার দেন।
অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিষয়ে জানতে মোহাম্মদ এনামুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। বার্তা পাঠালেও সাড়া দেননি। এনামুল হকের ভগ্নিপতি শরীফ হোসেনের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।