জালভোট, এজেন্ট বের করে দেওয়াসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ ছাগলনাইয়ায়

গোপন কক্ষে না গিয়ে প্রকাশ্যে বেলট পেপারে সিল মারছেন এক নারী। আজ সকালে ফেনীর মুহুরীগঞ্জ বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের একটি বুথে
প্রথম আলো

জালভোট প্রদান, এজেন্টদের বের করে দেওয়ার মতো নানা অনিয়মের অভিযোগ এসেছে ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে। আজ বুধবার চতুর্থ দফায় অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে এমন অভিযোগ তুলেছেন দোয়াত কলম প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী এ এস এম শহীদ উল্লাহ মজুমদার। বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে তাঁর এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। শহীদ উল্লাহ মজুমদার অভিযোগ করে বলেন, এজেন্ট পেপারে তাঁর দেওয়া সই জাল, এমন যুক্তি দেখিয়ে মুহুরীগঞ্জ উচ্চবিদ্যালয়ের দুটি কেন্দ্র থেকে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা দোয়াত কলমের এজেন্টদের বের করে দিয়েছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন কেন্দ্রে কাপ পিরিচের এজেন্ট-সমর্থকেরা ব্যাপক জালভোট দিয়েছেন বলে তিনি জানান।

এ এস এম শহীদ উল্লাহ মজুমদারের এমন অভিযোগের কিছুটা সত্যতাও মিলেছে। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ছাগলনাইয়ার মুহুরীগঞ্জ বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রের একটি নারী বুথে গিয়ে দেখা যায়, সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তার সামনেই জটলা বেঁধে ব্যালট পেপারে সিল মারছেন কয়েকজন নারী। সাংবাদিক দেখে কয়েকজন সরে গেলেও গণমাধ্যমের ক্যামেরায় সহকারী প্রিসাইডিংয়ের সামনে সিল মারার দৃশ্য ধরা পড়ে।

দোয়াত কলম প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী শহীদুল্লাহ মজুমদারের এজেন্ট বের করে দেওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ওই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা নাজমুল হাসান বলেন, দোয়াত কলম প্রতীকের এজেন্টদের চিঠিতে প্রার্থীর স্বাক্ষর যথাযথ মনে হয়নি। তারপরও এজেন্টকে বুথে বসতে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তিনি বুথে বসে বারবার মোবাইলে কথা বলায় এবং একাধিকবার কেন্দ্রের বাইরে যাওয়ায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। এ কারণে এজেন্টকে সতর্ক করা হয়েছে।

ভোটারের আকাল

ছাগলনাইয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিভিন্ন কেন্দ্রে সকাল থেকেই ভোটার উপস্থিতি ছিল কম। সব কটি কেন্দ্রের ভেতরে ও বাইরে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থী মিজানুর রহমান মজুমদারের কাপ পিরিচ প্রতীকের কর্মী-সমর্থক ছাড়া অন্য কোনো প্রার্থীর তেমন তৎপরতা দেখা যায়নি।

সকাল ৮টা ২৫ মিনিটে উপজেলার পূর্ব পাঠানগড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, তখনো কেন্দ্রের ৬টি বুথের ৪টিতে একটি করেও ভোট পড়েনি। অপর দুটি বুথে ১৫ জন ভোটার ভোট দিয়েছেন।

কাপ পিরিচ প্রতীকের প্রার্থী মিজানুর রহমানের এলাকায় অবস্থিত উত্তর যশপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। ওই কেন্দ্রে ভোট দিয়ে মিজানুর রহমান গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, ভোটের অনুকূল পরিবেশ থাকায় ভোটাররা কেন্দ্রে এসে ভোট দিচ্ছেন। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, উপজেলায় মোট ভোটের ৯০ শতাংশ ভোট তিনি পাবেন।

সকাল ১০টায় ছাগলনাইয়া পৌর এলাকার হিসাছরা বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়েও ভোটারের খরা দেখা যায়। সেখানে বিভিন্ন বুথে নিয়োজিত পোলিং কর্মকর্তা ও এজেন্টরা অলস সময় কাটান। প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মো. সারওয়ার কামাল শুভ জানান, ৩ হাজার ৭৯৯ ভোটারের মধ্যে প্রথম দুই ঘণ্টায় ১০টি বুথে ১৪২টি ভোট পড়েছে, যা শতকরা ৪ শতাংশ।

জয়পুর সরোজিনী উচ্চবিদ্যালয়ের দুটি কেন্দ্রে বেলা ১১টার দিকে এসে লাইনে কোনো ভোটারের দেখা মেলেনি। তবে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রিসাইডিং কর্মকর্তারা বলেন, সকাল ১০টা পর্যন্ত ৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ ভোট পড়েছে।

ছাগলনাইয়া উপজেলা নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও ফেনীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) অভিষেক দাশ জানান, উপজেলায় ১টি পৌরসভা ও ৫টি ইউনিয়নে মোট ভোটার ১ লাখ ৬৮ হাজার ৯৮২ জন। নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী ৫ জন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ভাইস চেয়ারম্যান পদে একক প্রার্থী থাকায় তিনি আগেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছেন।