পরীমনির বিরুদ্ধে মাদক মামলার কার্যক্রম বিচারিক আদালতে চলবে

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলা বাতিল চেয়ে চিত্রনায়িকা পরীমনির করা আবেদন পর্যবেক্ষণসহ নিষ্পত্তি করে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আমিনুল ইসলামের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ বৃহস্পতিবার এই রায় দেন। এ রায়ের ফলে বিচারিক আদালতে মামলাটির কার্যক্রম চলবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা।

ওই মামলা বাতিল প্রশ্নে ২০২২ সালের ১ মার্চ রুল দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। রুলের ওপর শুনানি শেষে রায় দেওয়া হয়। এ সময় আদালতে পরীমনির পক্ষে আইনজীবী জেড আই খান পান্না, শাহ মঞ্জুরুল হক, সৈয়দা নাসরিন ও মো. শাহীনুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সেলিম আযাদ ও মো. শাহনেওয়াজ।

পরে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক প্রথম আলোকে বলেন, আদালত পর্যবেক্ষণসহ আবেদনটি নিষ্পত্তি করে দিয়েছেন। অভিযোগ থেকে অ্যালকোহল (মদ) পাওয়ার অংশ বাদ যাবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তাই অপর অভিযোগ নিয়ে মামলা চলতে পারে। এক্ষেত্রে নতুন করে অভিযোগ গঠন করতে হতে পারে।

অবশ্য সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সেলিম আযাদ প্রথম আলোকে বলেন, রায়ের ফলে বিচারিক আদালতে মামলাটির কার্যক্রম চলবে। তবে আদালত কী পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন, তা পূর্ণাঙ্গ রায় হাতে পেলে জানা যাবে।

২০২১ সালের ৪ আগস্ট রাজধানীর বনানীতে পরীমনির বাসায় অভিযান চালায় র‍্যাব। দাবি করা হয়, সেসময় বাসা থেকে বিপুল পরিমাণ বিদেশি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের দামি মদ, মদের বোতলসহ অন্যান্য মাদকদ্রব্য জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় করা মামলায় পরীমনিকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তিনি জামিনে মুক্তি পান।

একই বছরের ৪ অক্টোবর আদালতে পরীমনিসহ তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। মামলায় পরীমনিসহ তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে ২০২২ সালের ৫ জানুয়ারি আদেশ দেন বিচারিক আদালত।

অভিযোগ গঠনের পর মামলা বাতিল চেয়ে পরীমনি হাইকোর্টে আবেদন করেন। ২০২২ সালের ১ মার্চ হাইকোর্ট রুল দিয়ে মামলার কার্যক্রম পরীমনির ক্ষেত্রে তিন মাসের জন্য স্থগিত করেন। রুলে পরীমনির ক্ষেত্রে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে করা মামলার কার্যক্রম কেন বাতিল হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়।

এরপর হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আবেদন করে। শুনানি নিয়ে ২০২২ সালের ৮ মার্চ চেম্বার আদালত হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করেন। পাশাপাশি রাষ্ট্রপক্ষকে নিয়মিত লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করতে বলা হয়। রাষ্ট্রপক্ষ নিয়মিত লিভ টু আপিল করে।

শুনানি নিয়ে গত বছরের ৯ জানুয়ারি আপিল বিভাগ আদেশ দেন। আদেশে মামলা বাতিলের প্রশ্নে রুল ছয় মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে বলা হয়। এ সময় মামলার কার্যক্রম পরিচালনা না করতে বিচারিক আদালতকে নির্দেশ দেওয়া হয়। নির্ধারিত সময়ে রুল নিষ্পত্তি না হলে বিচারিক আদালতে মামলাটির কার্যক্রম চলবে বলে উল্লেখ করেন আপিল বিভাগ। হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা লিভ টু আপিল নিষ্পত্তি করে এ আদেশ দেওয়া হয়। এরপর হাইকোর্টে রুলের ওপর শুনানি হয়।

আপিল বিভাগের আদেশের পর হাইকোর্টে মামলা বাতিলের প্রশ্নে রুলের ওপর শুনানি হয়। শুনানি নিয়ে গত বছরের ২৪ আগস্ট হাইকোর্ট একই বছরের ১৯ অক্টোবর রায়ের জন্য দিন রাখেন। অবশ্য বেঞ্চ পুনর্গঠন হওয়ায় ধার্য তারিখে রায় হয়নি। গত মঙ্গলবার হাইকোর্টের ছাপা কার্যতালিকায় পরীমনির করা আবেদনটি ২২ ফেব্রুয়ারি রায়ের জন্য আসে। সে অনুযায়ী আজ রায় দিলেন হাইকোর্ট।