আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন, ২০১০ অনুমোদন করেছে। এ আইনের আওতায় দরপত্র ছাড়াই ইচ্ছেমতো বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বিভিন্ন চুক্তি করা হয়েছে। এসব চুক্তি নিয়ে কোনো আদালতে প্রশ্ন তোলা যাবে না। এভাবে দায়মুক্তির সুযোগ রেখে আইন করে বিদ্যুৎ খাতে চুরির সুযোগ দিয়েছে সরকার। তৈরি করা হয়েছে লুটপাটের আইনগত ভিত্তি।
‘বিদ্যুৎ: আলো থেকে অন্ধকারে যাত্রা’ শিরোনামে আয়োজিত সেমিনারের লিখিত বক্তব্যে এসব কথা বলা হয়। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে শনিবার বিকেলে এটির আয়োজন করে নাগরিক ঐক্য। এতে বলা হয়, বিদ্যুৎ উৎপাদন না করলেও চুক্তি অনুসারে বসিয়ে বসিয়ে ক্যাপাসিটি চার্জ (কেন্দ্রভাড়া) দিতে হচ্ছে। চাহিদার দ্বিগুণ সক্ষমতা থাকার পরও রেন্টাল (ভাড়াভিত্তিক) বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, এই সরকার থাকলে জিনিসপত্রের দাম কমবে না, বিদ্যুতের সমাধান হবে না। রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের ওপর যে অত্যাচার করছে এ সরকার, এমন নির্দয় সরকার গত ৫৩ বছরে ছিল না। বিদ্যুৎ খাতের দায়মুক্তি আইনের সমালোচনা করেন তিনি।
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, যেখানে আইন করে বলা হয়েছে, অন্যায় করলে দায় নিতে হবে না; সেখানে দুর্নীতি-লুটপাট হবে, সেটাই স্বাভাবিক। ক্ষমতার অপব্যবহার করা হচ্ছে। ভারতের আদানির সঙ্গে অসম চুক্তি করা হয়েছে। পাঁচ বছর পরপর ভোট চাইতে হলে যা ইচ্ছা তা করতে পারত না। মানুষের ভোটের ক্ষমতা বিলুপ্ত করা হয়েছে।
লিখিত বক্তব্যে নাগরিক ঐক্য বলেছে, গত ১৪ বছরে ১ লাখ ৬ হাজার কোটি টাকার ক্যাপাসিটি চার্জ ব্যবসায়ীদের পকেটে তুলে দিয়েছে সরকার। দফায় দফায় বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে। অবৈধ ক্ষমতা ধরে রাখার স্বার্থে ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে আদানির সঙ্গে চুক্তি করেছিল। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে মাসে ১০০ কোটি ডলারের বেশি পরিশোধ করতে হয়। ডলারের দাম বাড়ায় সরকারের অতিরিক্ত অর্থ খরচ হবে। বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতা যত বেড়েছে, পিডিবির লোকসান তত বেড়েছে। বেসরকারি খাতের রেন্টাল ও আইপিপি থেকে বিদ্যুৎ কিনতে গিয়েই মূলত লোকসান হচ্ছে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার আগে যেসব ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর নাম কেউ জানত না, সেসব গোষ্ঠী এখন সিঙ্গাপুরের শীর্ষ ব্যবসায়ীর তালিকায়। কেউ কেউ বিলিয়ন ডলার বিদেশে পাচারের সুযোগ পায়, কয়েক বছরে সাত-আটটি ব্যাংকের মালিক হয়ে যায়।
বিদ্যুৎ বিভাগের নীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক বিডি রহমতউল্লাহ বলেন, বিদ্যুৎ খাতে যে নৈরাজ্য চলছে, এটা ভয়ানক লুটতরাজের কারণেই। নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে লুটতরাজের সুযোগ কম, তাই সরকার সেদিকে যাচ্ছে না।
সাংবাদিক আবু সাইয়িদ খান বলেন, পরিকল্পিতভাবে একটি লুটেরা শ্রেণি তৈরি করা হয়েছে। গণমাধ্যমকর্মী হিসেবে মুক্তভাবে কথা বলা যায় না, লেখা যায় না। গণতন্ত্রের নামে স্বৈরতন্ত্র জেঁকে বসেছে।
সেমিনার সঞ্চালনা করেন নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ কায়সার এবং লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক সাকিব আনোয়ার।