বিশিষ্টজনদের বিবৃতি: সিরাজগঞ্জে ঐতিহ্যবাহী খেলার মাঠে আশ্রয়ণ প্রকল্প নয়

গ্রামবাসী ও প্রশাসনের লোকজন মুখোমুখি।
ছবি: সংগৃহীত

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের একটি খেলার মাঠে সরকারের আশ্রয়ণ প্রকল্পের বিরোধিতা করেছেন দেশের ২১ বিশিষ্ট নাগরিক। আজ সোমবার দেওয়া এক বিবৃতিতে এ দাবি জানান তাঁরা।

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলায় খেলার মাঠে আশ্রয়ণ প্রকল্পের কাজ পরিদর্শনে গিয়ে পাল্টাপাল্টি হামলায় উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) লিয়াকত সালমান ও নয়জন গ্রামবাসী আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলার কায়েমপুর ইউনিয়নের বলদিপাড়া-হলদিঘর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

বিশিষ্টজনেরা বিবৃতিতে বলেন, বলদীপাড়া-হলদীঘর গ্রামে শতবর্ষীয় ঐতিহ্যবাহী উন্মুক্ত স্থানটিতে পাঁচ থেকে ছয় গ্রামের শিশু-কিশোর, যুবক খেলাধুলা করে আসছে। বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উৎসবও এ মাঠে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। শিশু-কিশোরদের জন্য একমাত্র খেলার মাঠ হিসেবে এ মাঠের গুরুত্ব অপরিসীম।

বিবৃতিতে বলা হয়, সরকার খেলার মাঠ হিসেবে ব্যবহৃত স্থানটিতে আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। খেলার মাঠে আশ্রয়ণ প্রকল্প করার বিষয়টি জানতে পেরে স্থানীয় এলাকাবাসী তা বন্ধের দাবিতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বরাবর আবেদন করে। স্থানীয় এলাকাবাসী প্রাণপ্রিয় খেলার মাঠটি রক্ষায় গত শনিবার শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ আয়োজন করে। জনগণের এ দাবিকে উপেক্ষা করে আশ্রয়ণ প্রকল্প নির্মাণের উদ্যোগ অব্যাহত রাখলে গতকাল রোববার আশ্রয়ণ প্রকল্পের অধীন স্থাপনা নির্মাণের লক্ষ্যে নির্মাণ সরঞ্জামসহ মাঠ দখলের চেষ্টা করলে স্থানীয় এলাকাবাসী তাতে বাধা দেন। এলাকাবাসীর প্রাণপ্রিয় মাঠ রক্ষার যৌক্তিক দাবিতে বাদ সাধে প্রশাসন ও প্রশাসনের ছত্রচ্ছায়ায় থাকা কতিপয় দুষ্কৃতকারী। তারা নারী, শিশু-কিশোর ও সাধারণ জনগণের ওপর হামলা চালায়। হামলায় আহত হয় পাঁচ থেকে সাতজন নারী, শিশু-কিশোর, সাধারণ জনগণসহ প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা। এ হামলায় আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে পঞ্চম শ্রেণির একজন স্কুলছাত্রী।

এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে উপজেলা ভূমি অফিসের একজন কর্মকর্তা বাদী হয়ে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর থানায় ৫৪ জন ব্যক্তির নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতপরিচয় ১০০ থেকে ১২০ জনের বিরুদ্ধে একটি হয়রানিমূলক মামলা করে। উক্ত হয়রানিমূলক মামলায় সাত নারীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

বিবৃতিদাতারা ‘প্রশাসনের সামনে এবং তাদের সমর্থনে’ ঘটে যাওয়া এমন সহিংস ঘটনার নিন্দা জানান।

বিবৃতিতে বিশিষ্টজনেরা বলেন, ‘আশ্রয়ণ প্রকল্প বর্তমান সরকারের একটি মহৎ উদ্যোগ। এ উদ্যোগকে আমরা আন্তরিকভাবে সমর্থন ও সাধুবাদ জানাই। আমরা কোনোভাবেই সরকারের আশ্রয়ণ প্রকল্পের বিরোধী নই। কিন্তু সম্প্রতি বিভিন্ন স্থানে আশ্রয়ণ প্রকল্পের জন্য প্রায়ই খেলার মাঠ বা উন্মুক্ত স্থান নির্বাচন করা হচ্ছে। যার ফলে সাধারণ জনগণ ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দ্বন্দ্ব ও সংঘর্ষের সৃষ্টি হচ্ছে; যা অত্যন্ত দুঃখজনক। বারবার এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তিরোধ করতে আমরা সর্বসাধারণের ব্যবহার্য নয়, এমন স্থান আশ্রয়ণ প্রকল্পের জন্য নির্বাচনের প্রস্তাব করছি। বিদ্যমান পতিত অকৃষি শ্রেণির কোনো খাসজমিই হতে পারে এ প্রকল্প নির্মাণের একমাত্র উপযুক্ত স্থান।’

এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বলদীপাড়া-হলদীঘর গ্রামের শতবর্ষীয় ঐতিহ্যবাহী খেলার মাঠে আশ্রয়ণ প্রকল্প না করার জন্য অনুরোধ জানানো হয় বিবৃতিতে। একই সঙ্গে মাঠটির যথাযথ সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণের দাবি জানান তাঁরা। পাশাপাশি এ ঘটনায় জনগণের হয়রানি ও আহত হওয়ার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হয়। সেই সঙ্গে স্থানীয় এলাকাবাসীর বিরুদ্ধে করা হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার এবং গ্রেপ্তার হওয়া নারীদের অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানান।

বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, সুলতানা কামাল, মোবাশ্বের হোসেন, শিরিন হক, পারভীন হাসান, ইফতেখারুজ্জামান, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, শামসুল হুদা, সারা হোসেন, মির্জা তাসলিমা সুলতানা, ইকবাল হাবিব, জাকির হোসেন, রেজাউল করিম চৌধুরী, মো. নূর খান, সংগীতা ইমাম, তাসাফি হোসেন, নবনীতা চৌধুরী, অরূপ রাহী, সায়দিয়া গুলরুখ,আলমগীর কবির, আহসান রনি।