রাজধানীর কলেজ অব নার্সিংয়ের শিক্ষার্থীদের হোস্টেল ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে, অভিযোগ শিক্ষার্থীদের
রাজধানীর শের-ই-বাংলা নগরে অবস্থিত কলেজ অব নার্সিংয়ের শিক্ষার্থীদের গতকাল বুধবার রাত ১০টার দিকে হোস্টেল ছাড়তে বাধ্য করা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে কর্তৃপক্ষ বলছেন, আলোচনার পর শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণভাবে হোস্টেল ছেড়ে গেছে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন বর্ষের শিক্ষার্থীরা ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগের একাধিক মাধ্যমে কলেজ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে তাঁদের হোস্টেল ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন। প্রতিষ্ঠানটির হোয়াটসঅ্যাপের নানা গ্রুপেও এ নিয়ে আলোচনা চলছে।
আজ বৃহস্পতিবার প্রথম আলো একাধিক শিক্ষার্থীর সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলেছে। গতকালের ঘটনায় কেউ কেউ বিপর্যস্ত থাকায় কথা বলতে চাননি। যাঁরা কথা বলেছেন, তাঁরা নিরাপত্তার স্বার্থে নিজেদের নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি।
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছেন, কর্তৃপক্ষ তাঁদের নানা হুমকি দিয়ে হোস্টেল ছাড়তে বাধ্য করেছেন। এমনকি, কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে তাঁরা হোস্টেল না ছাড়লে পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দেওয়া হবে বলেও হুমকি পেয়েছেন বলে দাবি করেছেন।
তাই প্রথমে হোস্টেল ছাড়তে না চাওয়া শিক্ষার্থীদের অনেকেই এখন ভয়ে আছেন। এমনকি, প্রথম আলো শিক্ষার্থীদের মোবাইল নম্বর কোথায় পেল বা কথা বললে কোনো সমস্যা হবে কি না, তা নিয়েও তাঁরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
শের-ই-বাংলা নগরে ওই কলেজটির ভেতরেই ছাত্রীদের থাকার জন্য আলাদা হোস্টেল রয়েছে। প্রতিষ্ঠানের অফিস ভবনে ছাত্রদের থাকার ব্যবস্থা আছে। ছাত্রী হোস্টেলে ৪৬৯ শিক্ষার্থী থাকেন। ছাত্র হোস্টেলে থাকেন ৪০ জন।
নাম প্রকাশ না করে এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘কর্তৃপক্ষ খারাপ ব্যবহার না করলে হোস্টেল থেকে রাতের বেলা এত ছেলে মেয়ে বের হবে কেন? গতকাল রাতে হোস্টেল থেকে বের হওয়ার পর থেকে আজ দুপুর পর্যন্ত আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে কোনো শিক্ষক খোঁজ নেননি, আমরা মরে গেছি না বেঁচে আছি। রাস্তায় কোনো ঝামেলা হয়েছিল কি না। অথচ কর্তৃপক্ষ না কি আমাদের তাঁদের সন্তানের মতো মনে করে।’
হোস্টেল থেকে বের হয়ে যাঁদের বাড়ি দূরে, তাঁদের কেউ কেউ ঢাকায় কোনো আত্মীয় বা প্রতিষ্ঠানের বড় ভাই-বোনদের বাসায় আশ্রয় নিয়েছেন। কেউ কেউ রাস্তায় ভোগান্তির শিকার হয়েছেন বলেও জানান শিক্ষার্থীরা।
এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমাদের প্রায় ঘাড় ধাক্কা দিয়ে হোস্টেল থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। হোস্টেল থেকে বের হয়ে রাস্তায় কোনো ঝামেলা হলে তার দায় কর্তৃপক্ষ নেবে না বলেও মৌখিকভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়।’
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছেন, কর্তৃপক্ষ তাঁদের নানা হুমকি দিয়ে হোস্টেল ছাড়তে বাধ্য করেছেন। এমনকি, কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে তাঁরা হোস্টেল না ছাড়লে পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দেওয়া হবে বলেও হুমকি পেয়েছেন বলে দাবি করেছেন।
শিক্ষার্থীরা অন্তত বুধবার রাতটুকু হোস্টেলে থাকতে দেওয়ার আবেদন করেছিলেন বলে জানান। বলেন, ‘হলে থাকা শিক্ষার্থীদের বাড়ি ঢাকার বাইরে। গতকাল রাস্তাঘাটের যে পরিস্থিতি ছিল, তাতে বাড়ি ফেরা কঠিন ছিল। আর কর্তৃপক্ষ বিকেল পর্যন্ত যেহেতু কোনো লিখিত নোটিশ দেয়নি তাই শিক্ষার্থীরা ভেবেছিলেন রাতটুকু তাঁরা হলে থাকতে পারবেন। তবে সন্ধ্যার পর পরিস্থিতি পাল্টে যায়।’
নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ, পুলিশসহ সংশ্লিষ্টরা প্রতিষ্ঠানের ভেতরে ঢুকে শিক্ষার্থীদের হোস্টেল ছাড়ার জন্য বলতে থাকেন। এমনকি হোস্টেলে একজন শিক্ষার্থীও আর নেই তা নিশ্চিত হয়েই তাঁরা প্রতিষ্ঠান ছাড়বেন বলেও জানিয়ে দেন।
তবে হোস্টেল ছাড়া নিয়ে কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলেন বলে প্রথম আলোর কাছে স্বীকার করেন এক শিক্ষার্থী। বলেন, ‘আলোচনা শেষে আমাদের নিরাপদে বাড়ি ফেরার ব্যবস্থা করারও আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। তারপর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতনরা আলোচনায় বসেন। এর পরপরই হুট করে হোস্টেল ছাড়ার নির্দেশ আসে এবং আমাদের হোস্টেল ছাড়তে বাধ্য করা হয়।’
আজ বেলা সাড়ে ১১টা দিকে নার্সিং কলেজটিতে গিয়ে হোস্টেলে কোনো শিক্ষার্থীকে দেখা যায়নি।
কলেজের অধ্যক্ষ মোসাম্মৎ শাহীনূর বেগম শিক্ষার্থীদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করার এবং তাঁদের হোস্টেল ছাড়তে বাধ্য করার অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের কলেজ ভিআইপি এলাকায়, তাই বেশি সতর্ক থাকতে হয়। সরকারি নির্দেশনা এবং শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিতে হয়েছে। ওরা তো আমাদের সন্তানের মতোই।’
শিক্ষার্থীদের হোস্টেল ছাড়ার লিখিত নোটিশ দিতে বিকেল পার হয়ে যায় বলে স্বীকার করেন অধ্যক্ষ।