ছাত্রলীগ নেত্রীসহ পাঁচ ছাত্রীকে সাময়িক বহিষ্কারের নির্দেশ

হাইকোর্ট
ফাইল ছবি

কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) হলে ফুলপরী খাতুনকে নির্যাতনের ঘটনায় জড়িত বলে তদন্ত প্রতিবেদনে আসা শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সানজিদা চৌধুরীসহ পাঁচ ছাত্রীকে সব ধরনের শিক্ষার কার্যক্রম থেকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার (সাসপেন্ড) করতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

একই সঙ্গে দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের প্রভোস্ট শামসুল আলমকে অবিলম্বে প্রত্যাহার করতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ঘটনাটি নিয়ে দুটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের পর আজ বুধবার বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক-আল-জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ কয়েক দফা নির্দেশসহ আদেশ দেন।

আরও পড়ুন

আদালত বলেছেন, তদন্ত প্রতিবেদনগুলোর ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়টির আইন ও বিধিবিধান অনুসারে কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেবে। সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত পাঁচ শিক্ষার্থীকে সব ধরনের শিক্ষার কার্যক্রম থেকে ‘সাসপেন্ড’ করতে এবং ক্যাম্পাসের বাইরে রাখতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হলো। তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের শৃঙ্খলাবিষয়ক কার্যধারার প্রয়োজনে তাঁদের ডাকা যাবে।

সানজিদা ছাড়া অপর চার ছাত্রী হলেন—হালিমা আক্তার, ইসরাত জাহান, তাবাসসুম ইসলাম ও মোয়াবিয়া জাহান। এ ছাড়া হাইকোর্ট ওই ঘটনার সময় ফুলপরীর ভিডিও ধারণকারী শিক্ষার্থী হালিমার মুঠোফোন উদ্ধার এবং ধারণ করা ভিডিও সংরক্ষণ করে আদালতে দাখিল করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন।

ফুলপরী খাতুন যাতে নির্ভয়ে স্বাভাবিক শিক্ষাজীবন চালিয়ে নিতে পারেন, সে জন্য তিন দিনের মধ্যে তাঁর পছন্দ অনুসারে হলে তাঁকে আসন বরাদ্দ দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ফুলপরীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কুষ্টিয়া ও পাবনার পুলিশ সুপারসহ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ঘটনার সাক্ষীদেরও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আদালত বলেন, তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি প্রভোস্ট, হাউস টিউটরসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে প্রাথমিকভাবে দায়িত্বে অবহেলা খুঁজে পেয়েছে। হল থেকে প্রভোস্টকে অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হলো। প্রভোস্টসহ তাঁদের সবার বিরুদ্ধে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেবে কর্তৃপক্ষ।

আরও পড়ুন

আদালত আগামী ৮ মের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও রেজিস্ট্রারকে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেছেন। সেদিন প্রয়োজনীয় আদেশের জন্য তারিখ রেখেছেন আদালত।

গত ১২ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের গণরুমে সাড়ে চার ঘণ্টা আটকে রেখে নির্যাতন করার অভিযোগ করেন ফিন্যান্স বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী ফুলপরী। এই ঘটনা নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে আসা প্রতিবেদন যুক্ত করে এবং জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইন অনুসারে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা চেয়ে ১৫ ফেব্রুয়ারি রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও ইবির সাবেক শিক্ষার্থী গাজী মো. মহসীন।

রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ১৬ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট রুল দিয়ে শিক্ষার্থী নির্যাতনের ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন, নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থীর নিরাপত্তা নিশ্চিত, নির্যাতনে জড়িত বলে অভিযোগ ওঠা শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসের বাইরে রাখাসহ কয়েক দফা নির্দেশ দেন।

আরও পড়ুন

তিন সদস্যের কমিটিতে প্রশাসন ক্যাডারের একজন কর্মকর্তা, জেলা জজ মনোনীত বিচার বিভাগীয় একজন কর্মকর্তা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সহকারী অধ্যাপককে রাখতে বলা হয়। কমিটিকে প্রতিবেদন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলের মাধ্যমে আদালতে জমা দিতে বলা হয়।

এ ছাড়া ঘটনা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গঠিত কমিটির প্রতিবেদনও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলের মাধ্যমে আদালতে দাখিল করতে বলা হয়। এর ধারাবাহিকতায় গতকাল মঙ্গলবার পৃথক প্রতিবেদন সিলগালা অবস্থায় আদালতে দাখিল করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়। পরে তিনি আদালতে প্রতিবেদন দুটির অংশবিশেষে পড়ে শোনান।

গতকাল শুনানি নিয়ে আদালত আজ আদেশের জন্য দিন রাখেন। পাশাপাশি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় আইন ও আইনের অধীন প্রণীত বিধি-প্রবিধানমালা সংগ্রহ করে আজ তা দেখানোর পাশাপাশি ইবির কোনো আইনজীবী থাকলে তাঁকে অবহিত করতে রাষ্ট্রপক্ষ ও রিট আবেদনকারীকে বলেন আদালত।

আরও পড়ুন

আজ বিষয়টি উঠলে রিট আবেদনকারী গাজী মো. মহসীন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন তুলে ধরেন। রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায় শুনানিতে ছিলেন। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক।

আদেশের সময় রিট আবেদনকারীর উদ্দেশে আদালত বলেন, ‘বিষয়টি মনিটরিংয়ে রাখব। আপনিও এ বিষয়ে খেয়াল রাখবেন। কোনো সমস্যার উদ্ভব হলে আদালতকে জানাবেন। তখন প্রয়োজনীয় আদেশ দেওয়া হবে।’

আরও পড়ুন