নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন নারী গৃহকর্মীরা, সুরক্ষা নীতি কার্যকরের দাবি

মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে কর্মরত নারী গৃহকর্মীরা নানাভাবে নিগ্রহের শিকার হচ্ছেন। ২০২১ সালে ১২ জন নারী গৃহকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে এবং ২ জন আত্মহত্যা করেছেন। দেশেও অনেক গৃহকর্মী নিয়োগকর্তার দ্বারা নির্যাতন ও হত্যার শিকার হন।

অনেকে আবার নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে ও অন্যান্য মানসিক চাপে আত্মহত্যা করছেন। তাঁদের সুরক্ষায় নীতি তৈরি হলেও তা কার্যকর হয়নি।

দেশে ও প্রবাসে কর্মরত নারী গৃহকর্মীদের প্রতি নির্যাতন ও নিপীড়ন এবং মজুরি চুরি প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক আইনি কাঠামোতে সুরক্ষা নিশ্চিত করার দাবিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে এসব কথা বলা হয়েছে। আজ সোমবার সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বাংলাদেশি অভিবাসী মহিলা শ্রমিক অ্যাসোসিয়েশন (বমসা)।

এতে বলা হয়, গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতি ২০১৫ প্রণয়ন করা হয়েছে। কিন্তু গৃহকর্মীরা আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি পাননি। এতে করে তাঁদের অধিকার প্রতিষ্ঠা হচ্ছে না। আবার বিদেশগামী ও বিদেশে অবস্থানরত নারী কর্মীদের সুরক্ষার জন্য বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও অভিবাসী আইন ২০১৩-এ নেই সুনির্দিষ্ট কোনো দিকনির্দেশনা। বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের তথ্য অনুসারে, ২০২২ সালে প্রবাসে ১১৭ জন নারী কর্মী মারা গেছেন। এর মধ্যে ১৬ শতাংশ আত্মহত্যা।

অনুষ্ঠানে শ্রমিকনেতা আবুল হোসেন বলেন, নির্যাতন, হত্যা, ধর্ষণ, মজুরি চুরির ঘটনা নিয়মিত ঘটছে। এর প্রতিকার নেই। এটা দেখার কথা সরকারের, তারা খুব একটা ভাবছে না এটা নিয়ে। কঠিন আইন দরকার নেই। আইন একটু দুর্বল হোক, কিন্তু তা কঠিনভাবে বাস্তবায়ন হোক।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়েছে, ৮০ ভাগের বেশি নারী চুক্তিভিত্তিক গৃহকর্মী হিসেবে সৌদি আরব, আরব আমিরাত, লেবানন, জর্ডানে অভিবাসন করে থাকেন। তাঁদের মধ্যে ৮০ শতাংশই অদক্ষ বা স্বল্প দক্ষ। করোনা মহামারির প্রভাবেও সবচেয়ে বেশি ভুগেছেন নারী গৃহকর্মীরা। অনেকেই বেতন পাননি এবং নির্যাতনের শিকার হয়ে দেশে ফিরতে বাধ্য হয়েছেন। নারী শ্রমিকদের একাধিক বাসায় কাজ করানো, ছুটি না দেওয়া, মারধর করা, চিকিৎসা না করা, খাবার না দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে সৌদিফেরত ভোলার রহিমা বেগম বলেন, অবস্থার উন্নতি করতে সৌদি গিয়েছিলেন ২০১৯ সালের শেষ দিকে। পাঁচ মাস পর করোনা শুরু হয়। নিয়মিত বেতন দিত না। সব মিলে দুই বছর ছিলেন। তিন থেকে চার বাসায় কাজ করাত। একসময় বন্ধ করে দেয় বেতন, ছয় মাস বকেয়া পরে যায়। বেতন চাইলে মারধর করত। এরপর দেশে পাঠিয়ে দেয়। তাঁর মতোই সৌদি আরব গিয়ে একই অভিজ্ঞতার শিকার হয়েছেন বলে জানালেন আরও দুই নারী।

মিরপুরের গৃহকর্মী তানিয়া জানালেন দেশের অভিজ্ঞতা। তিনি বলেন, তিন বাসায় কাজ করেন। কাজে কোনো সাপ্তাহিক ছুটি থাকে না। অসুস্থতার জন্য মাত্র দুই দিন ছুটি কাটিয়েছেন বলে চাকরি চলে গেছে এক বাসায়।

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) সনদের প্রতিরোধ কনভেনশন ১৯০ (২০১৯) ও গৃহশ্রমিক কনভেনশন ১৮৯ (২০১১) অনুস্বাক্ষর করেনি বাংলাদেশ। এটি করে সুস্পষ্ট আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছে বমসা। অভিবাসী শ্রমিকের মজুরি চুরি ও নির্যাতন প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক বিচারপ্রক্রিয়া প্রতিষ্ঠা করে ক্ষতিপূরণ আদায় করতে হবে। গৃহকর্মী সুরক্ষা নীতির কিছু ধারা সংশোধন করতে হবে। বিদেশে নিহত নারী কর্মীদের দেশে আনার পর ময়নাতদন্ত করে বিচারের ব্যবস্থা করা।

সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন বমসার চেয়ারম্যান লিলি জাহান, সাধারণ সম্পাদক শেখ রোমানা, জার্মান বাংলা কারিগরি প্রশিক্ষণকেন্দ্রের অধ্যক্ষ ফৌওজিয়া খন্দকার, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ইসরাত জাহান। লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বমসার উপদেষ্টা আমিনুল হক আর সঞ্চালনা করেন সংগঠনটির উপপরিচালক প্রবীর কুমার বিশ্বাস।