২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

অনেকের কাছে ‘খালাম্মার বারান্দা’ হয়ে ওঠে সুফিয়া কামালের ‘সাঁঝের মায়া’

‘জননী সাহসিকা’ সুফিয়া কামালের ২৪তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ‘সাঁঝের মায়া’র বারান্দায় সমবেত হন কবির স্বজন, সুহৃদ ও প্রতিবেশীরা। ধানমন্ডি–৩২, ঢাকা, ২০ নভেম্বর
ছবি: প্রথম আলো

কবি সুফিয়া কামালের ‘সাঁঝের মায়া’ নামের বাড়ির বারান্দাটি ছিল সর্বস্তরের মানুষের জন্য উন্মুক্ত। এখানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মণি সিংহ, কাজী আবদুল ওদুদের মতো মানুষেরা যেমন এসেছেন, তেমনি এসেছেন বহু নিঃস্ব ও অচেনা মানুষ। শ্রেণিভেদ ঘুচিয়ে সব মানুষকে আপন করে নেওয়ার অনন্য একটি উদাহরণ তৈরি করে গেছেন ‘জননী সাহসিকা’ সুফিয়া কামাল।

কবি সুফিয়া কামালের ২৪তম মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে উঠে এল এসব কথা। রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে কবির ‘সাঁঝের মায়া’ বাড়ির বারান্দায় সোমবার বিকেলে ছিল এই আয়োজন।

অনুষ্ঠানের আয়োজক ছিল মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ) ও সাঁঝের মায়া ট্রাস্ট। ষাটের দশক থেকে কবির প্রতিবেশী হিসেবে থাকা বাড়ির সদস্যরাও ছিলেন এই আয়োজনে।

তাঁদের মধ্যে তাহমিনা খানের বক্তব্যে উঠে আসে মানুষের প্রতি কবি সুফিয়া কামালের আন্তরিকতা ও দরদের গল্প। কবির শেষ দিনগুলোর স্মৃতিচারণা করেন তিনি। শিক্ষক বিনু আউয়াল জানালেন ষাটের দশকে তাঁদের ‘কচি–কাঁচার আসরে’ পাওয়া সুফিয়া কামালের কথা। বললেন, জীবনের সব রকম বিপদে ছুটে আসা যেত যেই মানুষটির কাছে, তিনি ছিলেন কবি সুফিয়া কামাল।

লেখক বদিউদ্দিন নাজিরের বক্তব্যে পাওয়া গেল ষাট ও সত্তরের দশকে রাজধানী ঢাকার জনজীবন, মানুষের পরিবার ও প্রতিবেশীদের মধ্যকার সুসম্পর্কের একটি চিত্র। তিনি বলেন, কবি সুফিয়া কামালের প্রতিটি কাজ ছিল একটা শিল্প। তাঁর কাছে সব মায়ের সন্তান ছিল নিজের সন্তান।

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন কবি সুফিয়া কামালের মেয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সুলতানা কামাল। সঞ্চালনার সময় বক্তাদের কথার রেশ ধরে স্মৃতিচারণা করছিলেন মায়ের। তিনি বলেন, সূর্যকে ঘিরে যেমন অন্য গ্রহ ঘোরে, সুফিয়া কামাল ছিলেন তেমনই। তাঁর নিজের জীবনে এমনই এক শৃঙ্খলা ছিল, যা দিয়ে তিনি শাসন না করেও সবার জীবনে একটা নিয়ম তৈরি করতেন।

সাঁঝের মায়া এবং একজন সুফিয়া কামাল তখনকার কিশোর–তরুণদের জীবনে কতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিলেন, সে কথা উঠে এল বরেণ্য চিত্রশিল্পী আবুল বার্‌ক্‌ আলভী ও অধ্যাপক ফখরুল আলমের বক্তব্যে। কবি সুফিয়া কামালকে নিয়ে স্মৃতিচারণা করতে চট্টগ্রাম থেকে এসেছিলেন আবুল মনসুর।

সমবেত কণ্ঠে ‘সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে’ গানটি গাওয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান। স্বাগত বক্তব্য দেন এমএসএফের কার্যনির্বাহী পরিষদের কোষাধ্যক্ষ সানাইয়া ফাহিম আনসারী। শিল্পী অদিতি দত্তের নেতৃত্বে সংগীতায়োজনে অংশ নেন সুফিয়া কামালের পরিবার–স্বজন–প্রতিবেশীদের বর্তমান প্রজন্ম। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সুফিয়া কামালের আরেক মেয়ে শিল্পী সাঈদা কামাল। তিনি বলেন, সাঁঝের মায়া নিয়ে বহু মানুষের অনেক স্মৃতি আছে। অনেকেই বলেন ‘খালাম্মার বারান্দা’।

নারীমুক্তি, গণতন্ত্র, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের পুরোধা কবি বেগম সুফিয়া কামাল ১৯৯৯ সালের ২০ নভেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। একাধারে একজন কবি, নারী আন্দোলনের অগ্রণী নেত্রী এবং ধর্মান্ধতা ও অসাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে এক অকুতোভয় যোদ্ধার নাম সুফিয়া কামাল।

আরও পড়ুন