প্রচণ্ড গরমে স্বাস্থ্যের যত্ন কীভাবে নেবেন, দুই চিকিৎসকের পরামর্শ

ফাইল ছবি

দেশের বিভিন্ন স্থানে মৃদু থেকে প্রচণ্ড তাপপ্রবাহ বইছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর আজ শুক্রবার আগামী তিন দিনের জন্য তাপপ্রবাহের সতর্কবার্তা বা হিট অ্যালার্ট দিয়েছে। এ সময় বাতাসে প্রচুর জলীয় বাষ্প থাকে। এর কারণে মানুষের মধ্যে অস্বস্তি হতে পারে বলে আবহাওয়ার বার্তায় বলা হয়েছে।

এই প্রচণ্ড গরমে মানুষের নানা সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। এ নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহারিচালক ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মো. টিটো মিঞা।

অধ্যাপক এ বি এম আবদুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, এ সময়ে মানুষের প্রচুর ঘাম হয়। আর ঘাম হলে সংগত কারণেই দুর্বল হয়ে যান। এ সময় পানিশূন্যতা দেখা দেয়। মানুষ তৃষ্ণা বেশি অনুভব করেন।

প্রচণ্ড গরমে বড় সমস্যা হিটস্ট্রোক। অধ্যাপক টিটো মিঞা বলেন, এ সময় বাইরের প্রচণ্ড তাপের সঙ্গে শরীর থেকে বের হওয়া তাপের গরমিল ঘটে। শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র বা হিট রেগুলেটিং সেন্টার কাজ করে না। শরীর বাইরের প্রচণ্ড তাপ শরীর নিতে পারে না। ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। একপর্যায়ে এতে আক্রান্ত ব্যক্তির ঘামঝরা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। মাথা ঘুরে পড়ে যেতে পারেন। যাঁরা দীর্ঘ সময় রোদে থাকেন, শিশু ও বয়স্ক—তাঁদের হিটস্ট্রোকের আশঙ্কা বেশি থাকে।

হিটস্ট্রোকের কয়েকটি লক্ষণ তুলে ধরেন অধ্যাপক এ বি এম আবদুল্লাহ। তাঁর মতে, প্রচণ্ড তৃষ্ণা, পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে। হিটস্ট্রোকের আগে হৃৎস্পন্দন স্বাভাবিকের চেয়ে দ্রুততর হতে পারে। মাথাব্যথার পাশাপাশি বমি বমি ভাব হতে পারে। কথা জড়িয়ে যায়। একপর্যায়ে অজ্ঞান হতে পারে। কখনো কখনো হিটস্ট্রোকের কারণে মানুষের মৃত্যুও হতে পারে।

অধ্যাপক এ বি এম আব্দুল্লাহ ও অধ্যাপক ডা. মো. টিটো মিঞা

কাদের হিট স্ট্রোক হতে পারে

অধ্যাপক টিটো মিঞার মতে, শ্রমজীবী মানুষ, যাঁরা দীর্ঘ সময় রোদে থাকেন, তারপর বয়স্ক ব্যক্তি এবং শিশু—যাঁদের প্রতিরোধক্ষমতা কম, তাঁদের হিটস্ট্রোক হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। তাঁদের ইলেকট্রোলাইট ইমব্যালান্স হয়ে যায়।

অধ্যাপক এ বি এম আবদুল্লাহ জানান, যাঁদের কোমর্বিডিটি বা কোনো ধরনের দীর্ঘস্থায়ী অসুখ আছে, তাঁদের জন্য প্রচণ্ড গরম ক্ষতিকর। কোমর্বিডিটি বলতে যাঁদের কিডনি, লিভারের অসুখ আছে, ডায়াবেটিস বা দীর্ঘদিনের হৃদ্‌রোগীদের বলা যায়।

এ সময় সুরক্ষায় কী করা যায়

প্রচণ্ড গরম থেকে সুরক্ষায় একগুচ্ছ পরামর্শ দিয়েছেন অধ্যাপক এ বি এম আবদুল্লাহ ও অধ্যাপক টিটো মিঞা। এই দুই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মতে, এ সময়ে রঙিন জামাকাপড় না পরে সাদা বা হালকা রঙের জামাকাপড় পরতে হবে। যতটা সম্ভব সুতির জামাকাপড় পরা দরকার। রোদ থেকে বাঁচতে ছাতা নিয়ে বের হওয়া উচিত। দীর্ঘ সময় রোদে কাজ না করে মাঝেমধ্যে বিরতি নেওয়া প্রয়োজন। সম্ভব হলে ছায়ায় গিয়ে থাকতে হবে।

দুপুর ১২টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত রোদের তাপ বেশি থাকে। বাইরে যাওয়ার জন্য এ সময় ভালো নয়।

এখন এই গরমে প্রচুর পানি পানের পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। আর এর সঙ্গে লবণযুক্ত পানি খাওয়া দরকার বলে তাঁরা মনে করেন। বেশি তেল ও মসলা বা ঝালযুক্ত খাবার না খেতে সবার প্রতি পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা।