ক্যাম্পাস–সংলগ্ন এলাকা থেকে বাসস্ট্যান্ড উচ্ছেদের দাবিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পদযাত্রা

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস–সংলগ্ন এলাকা থেকে বাসস্ট্যান্ড উচ্ছেদের দাবিতে শিক্ষক–শিক্ষার্থীদের পদযাত্রা। ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ছবি: প্রথম আলো

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে থেকে অবৈধ বাসস্ট্যান্ড অপসারণের দাবিতে পদযাত্রা করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক–শিক্ষার্থীরা।

রোববার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের সামনে থেকে পদযাত্রা কর্মসূচি শুরু করেন তাঁরা। পদযাত্রাটি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে প্রধান ফটক দিয়ে বের হয়ে ভিক্টোরিয়া পার্ক, শাঁখারীবাজার, জজকোর্ট, সিএমএম কোর্ট, রায়সাহেব বাজার মোড় প্রদক্ষিণ করে আবার ক্যাম্পাসে আসে। পদযাত্রা কর্মসূচিতে রায়সাহেব বাজার মোড়ে শিক্ষক–শিক্ষার্থীরা সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন।

পদযাত্রা কর্মসূচিতে ‘অবৈধ বাসস্ট্যান্ড/থাকবে না, থাকবে না’, ‘ছাত্র, ব্যবসায়ী, জনতা/গড়ে তোলো একতা’, ‘ছাত্র-স্থানীয় ঐক্য গড়ো/বাসস্ট্যান্ড মুক্ত করো’, ‘সিন্ডিকেটের গদিতে/আগুন জ্বালো একসাথে’, ‘ধরো রশি মারো টান/সিন্ডিকেট হবে খান খান’, ‘শিক্ষার পরিবেশ/ফিরিয়ে দাও, দিতে হবে’, ‘ছাত্র-শ্রমিক চাপা পড়ে/প্রশাসন কী করে’, ‘এক, দুই, তিন, চার/নিরাপত্তা আমার অধিকার’, ‘নিরাপত্তা আমার অধিকার/রুখে দেওয়া সাধ্য কার’সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন শিক্ষার্থীরা।

গত বৃহস্পতিবার অবৈধ বাসস্ট্যান্ড অপসারণে ৪৮ ঘণ্টার সময় বেঁধে দিয়েছিলেন শিক্ষার্থীরা। তাঁদের দাবি, গুলিস্তান থেকে সদরঘাট পর্যন্ত রাস্তাটি ঢাকার সবচেয়ে ব্যস্ত রাস্তাগুলোর মধ্যে একটি। নিয়ম অনুযায়ী, রায়সাহেব বাজার মোড় পর্যন্ত বাস চলাচলের অনুমতি আছে, কিন্তু এর ভেতরে বাস ঢোকা পুরোপুরি অবৈধ। তাহলে এই বাস জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পর্যন্ত কীভাবে আসে? কারা এদের নিয়ে আসছে?

রোববার সকালের দিকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে যানজট নিরসনে বাসস্ট্যান্ড সরানোর লক্ষ্যে উপাচার্যের কক্ষে সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় শিক্ষক সমিতি, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের ডিন, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার, দপ্তর প্রধান, পুলিশের লালবাগ জোনের উপকমিশনার, এসি ট্রাফিক, ঢাকা সড়ক পরিবহন সমিতিসহ বিভিন্ন বাস পরিবহন মালিক সমিতির নেতারা উপস্থিত ছিলেন। সভায় রায়সাহেব বাজার থেকে বাহাদুর শাহ পার্ক পর্যন্ত রাস্তায় যান চলাচল নিয়ন্ত্রণে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, রোববার দুপুর ১২টা থেকে আগামী সাত দিন কোনো ধরনের বাস রায়সাহেব বাজার থেকে বাহাদুর শাহ পার্ক এলাকায় প্রবেশ করবে না। এ সময়সীমার মধ্যে রায়সাহেব বাজার থেকে আসা সব ধরনের বাস ধোলাইখালের গোয়ালঘাট পয়েন্ট থেকে ইউটার্ন নিয়ে নিজ নিজ গন্তব্যে ফিরে যাবে।

এ ছাড়া পরবর্তী সাত দিনের মধ্যে ট্রাফিক বিভাগ, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এবং বাস মালিক সমিতি যৌথভাবে একটি কার্যকর ও টেকসই নীতিমালা প্রণয়ন করবে, যা স্থায়ীভাবে এই সমস্যা নিরসনে সহায়ক হবে। পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে সাত দিন পর সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নিয়ে আরেকটি সভা আয়োজনের ঘোষণা দেওয়া হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী অপু মুন্সী বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বাধ্য। আজকে আমরা শান্তিপূর্ণ পদযাত্রা করেছি। রায়সাহেব বাজার থেকে আজকের পর যদি কোনো গাড়ি বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় প্রবেশ করে তাহলে আমরা শিক্ষক–শিক্ষার্থীদের নিয়ে কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলব।’

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. রইছ উদদীন বলেন, প্রতিদিন হাজার হাজার শিক্ষার্থী আর সাধারণ মানুষ এই পথে চলাচল করেন। কিন্তু বাসগুলোর বেপরোয়া চলাচল, অবৈধ প্রবেশ আর যেখানে–সেখানে পার্কিংয়ের কারণে শুধু জ্যামই (যানজট) হয় না, বরং নিয়মিত ছোট-বড় দুর্ঘটনাও ঘটছে। রায়সাহেব বাজার মোড় পর্যন্ত রুট পারমিট থাকলেও গাড়ি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে নিয়ে যাওয়া হয়।

শিক্ষার্থী অপু মুন্সী বলেন, ‘আমরা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলে দিতে চাই, আজকের পর থেকে রায়সাহেব বাজার মোড় গাড়ি অতিক্রম করলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক–শিক্ষার্থীসহ জজকোর্টের আইনজীবীদের নিয়ে আমরা আন্দোলন গড়ে তুলব।’