তৃণমূল মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করে এগিয়ে যেতে জনপ্রতিনিধিদের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান

জাতীয় স্থানীয় সরকার দিবস ২০২৩ উপলক্ষে গণভবনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ঢাকা, ১৪ সেপ্টেম্বর
ছবি: পিআইডি

মাদক, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জনপ্রতিনিধিদের সোচ্চার হওয়ার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পাশাপাশি তৃণমূলের মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করে এবং তা ধরে রেখে জনপ্রতিনিধিদের এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা তৃণমূলের মানুষ জনগণের ভোটে নির্বাচিত, জনগণের সেবক। জনগণের কল্যাণে কাজ করা আপনার আমার সকলেরই দায়িত্ব। আর এই দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে মানুষের সেবা করে এবং মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করে আপনারা এগিয়ে যাবেন।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বৃহস্পতিবার তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবনে প্রথমবারের মত আয়োজিত ‘জাতীয় স্থানীয় সরকার দিবস ২০২৩’ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এসব কথা বলেন।

গণভবনে সারা দেশের স্থানীয় সরকারের পাঁচটি স্তরের জনপ্রতিনিধিদের বিশাল মিলনমেলায় শেখ হাসিনা বলেন, ‘মানুষ একবার যখন আপনাদের ভোট দিয়েছে, তারা আবারও যেন আপনাকে ভোট দিতে পারে, আপনাদের জনগণের সেই আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করতে হবে। আজকের যে উন্নয়ন সেটা দীর্ঘদিনের কষ্টের ফসল। এটা যেন কেউ আর নষ্ট করতে না পারে। কারণ, ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত যতটুকু এগিয়ে ছিলাম বিএনপি–জামায়াত জোট আবার সেটা পিছিয়ে দিয়েছিল।’

জনপ্রতিনিধিদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মাদক, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে আপনাদের দাঁড়াতে হবে। কেউ যেন এই মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদে সম্পৃক্ত না হয়, সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে।

আওয়ামী লীগ সরকার ৫৬০টি মডেল মসজিদ করে দিচ্ছে এবং মন্দিরগুলো সংস্কারেও অর্থ দিচ্ছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘মসজিদ, মন্দির, গির্জা বা প্যাগোডা—যেটার যেখানে যা প্রয়োজন আমরা তা করে দেব। আমাদের যারা অন্যান্য সম্প্রদায়, তাদের সঙ্গে এক হয়ে চলব; কেননা, একই সঙ্গে আমরা যুদ্ধ করে বিজয় অর্জন করেছি।’

বিএনপির অগ্নিসন্ত্রাস ও উপাসনালয়ে আগুন দেওয়ার মতো ঘটনার কথা উল্লেখ করে জনপ্রতিনিধিদের এই বিষয়গুলো ভালোভাবে দেখার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই দেশ সকলে মিলে স্বাধীন করেছি। এই দেশ অসাম্প্রদায়িক চেতনার দেশ এবং সেভাবেই এগিয়ে যাবে।’

বিদেশগামীরা যাতে সরকারের করে দেওয়া প্রবাসীকল্যাণ ব্যাংকের দেওয়া সুবিধা নিয়ে বিদেশে যেতে পারেন এবং দালালের খপ্পরে পড়ে সর্বস্বান্ত না হন, সেদিকেও লক্ষ্য রাখার আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।

সারা দেশে সরকারের প্রতিষ্ঠিত কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর চিকিৎসাব্যবস্থা সম্পর্কে খোঁজখবর রাখার জন্য জনপ্রতিনিধিদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি–জামায়াত জোট ২০০১ সালে সরকারে এসে এগুলো বন্ধ করে দিয়েছিল।

শেখ হাসিনা দৃঢ়প্রত্যয়ের সঙ্গে বলেন, তাঁর সরকার যোগাযোগব্যবস্থার প্রভূত উন্নয়ন করেছে। আগামীতে ক্ষমতায় আসতে পারলে আর কোনো গ্রামে কাঁচা রাস্তা আর থাকবে না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ থেকে ২০২৩ সালে বাংলাদেশের যে অগ্রযাত্রা, এটা যেন অব্যাহত থাকে। জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলার মাধ্যমে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলে জাতিসংঘ ঘোষিত এসডিজি বাস্তবায়ন করে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বিশ্ব দরবারে আরও উচ্চ আসনে নিয়ে গিয়ে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা ব্যর্থ হয় নাই, আমরা ব্যর্থ হতে দেব না। আমাদের বাংলাদেশ, আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি এগিয়ে যাবে।’

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য ও স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মুহম্মদ ইবরাহিম অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, রাজশাহীর মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান, নারায়ণগঞ্জের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী, খুলনার মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক, সিলেটের মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীসহ স্থানীয় সরকারের পাঁচটি স্তরের বিভিন্ন জনপ্রতিনিধি।