সিইজিআইএসের পূ্র্বাভাস: কুড়িগ্রামে ভাঙন শুরু, হতে পারে আরও ৮ জেলায়
প্রতিবছরই এ জেলার নদীতে ভাঙন হয়। তবে এবার ভাঙনের গতি অপেক্ষাকৃত বেশি বলে জানান জেলা প্রশাসক।
কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের চর খিতাব খাঁ গ্রামের বাসিন্দা আবদুল হামিদ (৬৮)। একসময় ওই গ্রামে আবদুল হামিদের সাত কক্ষের পাকা বাড়ি ছিল। চার একর ফসলি জমিতে ধান চাষ করা হতো। গত বন্যায় তিস্তা নদীতে ভাঙন শুরু হলে তিনি বসতি হারান। বর্তমানে পরিবারের আটজন সদস্যসহ ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের বাঁধের রাস্তায় আশ্রয় নিয়েছেন। একসময় বাড়িতে গোলাভরা ধান থাকলেও এখন দিনমজুরি করে কষ্টে দিন পার করেন আবদুল হামিদ।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত এক মাসে জেলার প্রধান প্রধান নদ-নদীর ভাঙনে প্রায় এক হাজার পরিবার বসতি হারিয়েছে।
বর্ষা মৌসুম শেষ হতেই কুড়িগ্রামের অন্তত দুই উপজেলার নদীতে ভাঙন শুরু হয়েছে। প্রতিবছরই এ জেলার নদীতে ভাঙন হয়। তবে এবার ভাঙনের গতি অপেক্ষাকৃত বেশি বলে জানান জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এবার তিস্তা নদীতে ভাঙন দেখা যাচ্ছে বেশি। এ জেলা ভাঙনপ্রবণ। এবার রাজারহাট ও উলিপুর উপজেলায় ভাঙন বেশি।’
তিস্তায় ভাঙন শুরু হওয়ার পর উদ্বেগ বেড়েছে বলে জানান মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ। তাঁর কথা, জেলায় ব্রহ্মপুত্র নদ এলাকায় ভাঙন দেখা যায়। এখনো তা শুরু হয়নি। সেটা হলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে।
শুধু কুড়িগ্রাম নয়, এবার দেশের ৯ জেলায় নদীভাঙন হতে পারে। এসব জেলায় ১ হাজার ২০০ হেক্টরের বেশি জমি এই নদীভাঙনের কবলে পড়তে পারে। ৯ জেলার মধ্যে ৭ জেলার ভাঙন হবে অপেক্ষাকৃত বেশি। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড জিওগ্রাফিক্যাল ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (সিইজিআইএস) নদীভাঙন–সংক্রান্ত পূর্বাভাসে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
সাধারণত বর্ষা মৌসুমের পরই দেশে নদীভাঙন দেখা দেয়। ইতিমধ্যে কুড়িগ্রাম জেলায় ভাঙন শুরু হয়ে গেছে। ৯ জেলায় বন্যার পূর্বাভাস দেওয়া হলেও এবারের ভাঙন গত ছয় বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন হতে পারে বলে পূর্বাভাসে দেখা যাচ্ছে।
সিইজিআইএসের নির্বাহী পরিচালক মালিক ফিদা এ খান প্রথম আলোকে বলেন, দেশে নদীভাঙন ধীরে ধীরে কমে আসছে। নদী ব্যবস্থাপনার কাজে ধারাবাহিকভাবে কাজ করার জন্যই ভাঙন কমে আসছে।
সিইজিআইএস প্রতিবছর নদীভাঙনের পূর্বাভাস দেয়। যমুনা, গঙ্গা ও পদ্মা—মূলত এই তিন নদীর অববাহিকার ভাঙনের পূর্বাভাসই দেয় এ প্রতিষ্ঠান। সেই পূর্বাভাস অনুযায়ী এ বছর কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, টাঙ্গাইল, জামালপুর, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, কুষ্টিয়া, ফরিদপুর ও মাদারীপুর জেলায় নদীভাঙন দেখা দিতে পারে। এসব জেলায় ১ হাজার ২৬৫ হেক্টর জমি নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা আছে। এর মধ্যে জামালপুর ও সিরাজগঞ্জ বাদ দিয়ে বাকি সাত জেলায় নদীভাঙন অপেক্ষাকৃত বেশি হতে পারে।
মালিক ফিদা এ খান বলেন, এ পূর্বাভাস এ জন্যই দেওয়া হয়, যাতে স্থানীয় বাড়িঘর, রাস্তাঘাট, স্কুল-কলেজসহ নানা স্থাপনা, ফসলি জমি সুরক্ষার ক্ষেত্রে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ আগেভাগে বার্তা পায়। এতে ক্ষতি কমানো সম্ভব হয়।
যমুনা অববাহিকায় সমস্যা বেশি
যমুনা, পদ্মা বা গঙ্গা অববাহিকাতেই সবচেয়ে বেশি ভাঙন হয়। এর পাশাপাশি অন্তত ১২টি মাঝারি নদী আছে, যেগুলোতে ভাঙন হয়। এসব নদীর মধ্যে আছে তিস্তা, দুধকুমার, আত্রাই, ইছামতী, গড়াই, কীর্তনখোলা, আড়িয়াল খাঁ, পুংলী, কালীগঙ্গা, ধলেশ্বরী, সাঙ্গু ও দুধকাটা। বড় নদীর মধ্যে যমুনা পাড়ের ভাঙন গুরুতর। এর কারণ হিসেবে অধ্যাপক মনসুর রহমান বলছিলেন, যমুনায় যে পরিমাণ ভাঙন হয়, এর মাত্র ১৫ শতাংশ নতুন করে গড়ে ওঠে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন জাহানুর রহমান, কুড়িগ্রাম]