অব্যাহতি পেলেন বিএনপির ৬ আইনজীবী, আবেদনকারীকে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনে দিতে হবে এক লাখ টাকা

হাইকোর্টফাইল ছবি

আপিল বিভাগের তৎকালীন দুই বিচারপতির বক্তব্য নিয়ে সংবাদ সম্মেলন ঘিরে আদালত অবমাননার অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন বিএনপিপন্থী ছয়জন আইনজীবী।

আদালত অবমাননার অভিযোগ তুলে বিএনপিপন্থী ছয়জন আইনজীবীর বিরুদ্ধে যে আবেদন করা হয়েছিল, তা খারিজ করে দিয়েছেন আপিল বিভাগ। পাশাপাশি আবেদনকারীকে খরচা হিসেবে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনে তিন সপ্তাহের মধ্যে এক লাখ টাকা দিতে বলা হয়েছে।

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বিভাগ আজ রোববার এ আদেশ দেন।

এর আগে গত বছরের ১৫ আগস্ট শোক দিবসের এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন আপিল বিভাগের তৎকালীন দুই বিচারপতি। এই অনুষ্ঠানে বিচারপতি ‘শপথবদ্ধ রাজনীতিবিদ’ উল্লেখ করে দেওয়া বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে গত বছরের আগস্টে সংবাদ সম্মেলন করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম।

আপিল বিভাগের দুজন বিচারপতি সম্পর্কে এক সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্যের সূত্র ধরে বিএনপিপন্থী সাতজন আইনজীবীর বিরুদ্ধে গত বছরের ২৯ আগস্ট আদালত অবমাননার অভিযোগে আবেদনটি করা হয়। আবেদনটি করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. নাজমুল হুদা।

বিএনপিপন্থী সাতজন আইনজীবী হলেন কায়সার কামাল, এ জে মোহাম্মদ আলী, ফাহিমা নাসরিন, মো. আবদুল জব্বার ভূঁইয়া, মো. রুহুল কুদ্দুস, মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান খান ও গাজী কামরুল ইসলাম।

আদালত অবমাননার ওই আবেদনের শুনানি নিয়ে গত বছরের ১৫ নভেম্বর আপিল বিভাগ আদেশ দেন। সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্যের সূত্র ধরে আদালত অবমাননার আবেদনে যে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, সে বিষয়ে নিজেদের ভূমিকা ব্যাখ্যা করতে বিএনপিপন্থী সাত আইনজীবীকে গত ১৫ জানুয়ারি সকাল ৯টায় আপিল বিভাগে (১ নম্বর কোর্টে) হাজির হতে নির্দেশ দেন আপিল বিভাগ। নির্ধারিত তারিখে তাঁরা আদালতে হাজির হন।

এর ধারাবাহিকতায় গত ১২ জুন বিষয়টি আদালতে ওঠে। সাতজন আইনজীবীর মধ্যে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী মারা গেছেন। অপর ছয়জন আইনজীবী সেদিন আদালতে হাজির হন। সেদিন আইনজীবীদের লিখিত ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য সময় দিয়ে শুনানি মুলতবি করেন।

আগের ধারাবাহিকতায় আজ বিষয়টি ওঠে। আদালতে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, এম বদরুদ্দোজা ও মো. রুহুল কুদ্দুস এবং আইনজীবী কায়সার কামাল শুনানিতে অংশ নেন। রাষ্ট্রপক্ষে অ্যার্টনি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক শুনানিতে অংশ নেন। অবমাননার আবেদনকারীর পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড মোহাম্মদ আলী আজম।

আইনজীবীর অনুপস্থিতি, খরচা আরোপের আরজি

শুনানিতে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক বলেন, গত বছরের ১৫ আগস্ট এক আলোচনা সভায় আপিল বিভাগের তৎকালীন বিচারপতিরা অংশ নেন। বক্তব্যে তাঁদের একজন বিচারপতি ‘শপথবদ্ধ রাজনীতিবিদ’ বলে উল্লেখ করেন, যা সমর্থন করে অপর একজন বক্তব্য দেন। এ রকম স্টেটমেস্টার জন্য তাঁদের বিচারকাজ থেকে বিরত রাখার দাবি জানানো হয়েছিল। এ অবস্থায় একজন আইনজীবী আদালত অবমাননার আবেদনটি করেন।

আদালত বলেন, কার পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করছেন? আবেদনকারীর কি?

তখন অনীক আর হক বলেন, রাষ্ট্রের পক্ষে আদালতকে সহায়তা করছি।

আদালত বলেন, আবেদনকারীর পক্ষে আইনজীবী আছেন কি?

এ সময় অনীক আর হক বলেন, অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড আলী আজম ও আবেদনকারীর আইনজীবী হিসেবে নাহিদ সুলতানা যুথি ও শাকিলা রওশনের নাম রেকর্ডে দেখা যাচ্ছে।

একপর্যায়ে আবেদনকারীর অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড আলী আজমের উদ্দেশে আদালত বলেন, ‘আপনার প্রতি নির্দেশনা কী? তখন আলী আজম বলেন, আবেদনকারীর পক্ষ থেকে কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি।’

ছয় আইনজীবীর পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন, আবেদনকারীর আইনজীবী আসেন না। অথচ আইনজীবীদের (ছয় আইনজীবী) বারবার আদালতে হাজিরার মাধ্যমে হয়রানি করা হয়েছে। এ জন্য আবেদনকারীকে ‘হেভি কস্ট’ আরোপের আরজি জানিয়ে তিনি বলেন, সাতজনের বিরুদ্ধে আবেদনটি করা হয়েছিল, এর মধ্যে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী মারা গেছেন।

আইনজীবী মো. রুহুল কুদ্দুস ও কায়সার কামাল ‘কস্টের’ অর্থ জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনে দিতে নির্দেশ দেওয়ার আরজি জানান। এ জন্য সময়সীমা নির্ধারণ করে দেওয়ার আরজি জানান জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এম বদরুদ্দোজা। শুনানি নিয়ে আবেদন খারিজ দিয়ে ওই আদেশ দেন।

আদেশের পর আইনজীবী কায়সার কামাল বলেন, ‘আইনজীবীর অনুপস্থিতির কারণে আবেদনটি খারিজ করে দিয়েছেন। পাশাপাশি আবেদনকারীকে এক লাখ টাকা খরচা আরোপ করেছেন আপিল বিভাগ। এই এক লাখ টাকা আগামী তিন সপ্তাহের মধ্যে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনে দিতে বলা হয়েছে।’

আরও পড়ুন