আবার ডুবেছে নোয়াখালী শহর, বাসিন্দাদের ভোগান্তি

নোয়াখালীতে টানা বৃষ্টিতে জলমগ্ন হয়েছে জেলা শহর মাইজদীর অনেক বাড়িঘর ও সড়ক। আজ দুপুরে সার্কিট হাউজ সংলগ্ন লক্ষ্মীনারায়ণপুর এলাকায়ছবি: প্রথম আলো

টানা বৃষ্টিতে আবারও ডুবেছে নোয়াখালী জেলা শহর মাইজদী। জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে শহরের বেশির ভাগ সড়ক ও বাসাবাড়ির আঙিনায়। একই চিত্র জেলার নয়টি উপজেলায়ও। এতে মানুষ সীমাহীন ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন। শহরের পানিনিষ্কাশনের প্রধান খাল ও নালা দিয়ে ধীরগতিতে পানি নামার কারণে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

জেলা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণকেন্দ্রের প্রধান পর্যবেক্ষক মো. রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় জেলা শহর মাইজদীতে ১১৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার সকাল নয়টা থেকে আজ শনিবার সকাল নয়টা পর্যন্ত ওই বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। আজ দুপুরের দিকে কিছু সময়ের জন্য বৃষ্টি বন্ধ থাকলেও বিকেল থেকে টানা বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। দুই-এক দিন বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানান তিনি।

আজ বিকেলে সরেজমিনে দেখা যায়, জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে, জেলা জজ আদালত আঙিনা, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি ভবন, জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয়, নোয়াখালী প্রেসক্লাব ভবনের নিচতলা জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া জেলা শহরের লক্ষ্মীনারায়ণপুর, হরিনারায়ণপুর, কৃষ্ণরামপুর, মাস্টারপাড়া, সোনাপুরসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, এসব এলাকার প্রায় সব সড়ক বৃষ্টির পানিতে ডুবে আছে। জলমগ্ন হয়েছে শহরের বেশির ভাগ বাসা-বাড়ির আঙিনা। পানিতে প্লাবিত হয়েছে অনেক আধা পাকা বসতঘর।

পরিদর্শনকালে দেখা যায়, প্রধান সড়কের (চৌমুহনী-মাইজদী-সোনাপুর চার লেন সড়ক) টাউন হল মোড়, জামে মসজিদ মোড়সহ কয়েকটি অংশে পানি ওঠায় আশপাশের দোকানে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এতে অনেক দোকানি ক্ষতির মুখে পড়েছেন। শহরের প্রায় প্রতিটি সড়কের পাশের পানিনিষ্কাশনের নালাগুলো উপচে পানি প্রবাহিত হচ্ছে সড়কের ওপর দিয়ে। এতে বৃষ্টির পানির সঙ্গে নালার ময়লা পানি মিশে একাকার হয়ে গেছে। এ ছাড়া বেশির ভাগ পুকুর ও জলাশয় ডুবে গেছে।

শহরের সার্কিট হাউস-সংলগ্ন লক্ষ্মীনারায়ণপুর এলাকার বাসিন্দা রুবেল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, বৃষ্টির পানিতে তাঁর বাড়িতে প্রায় হাঁটুসমান পানি জমেছে। বসতঘরেও পানি ঢুকেছে। আশপাশের প্রায় প্রতিটি বাড়িতে মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। তিনি বলেন, পানিনিষ্কাশনের নালাগুলো দিয়ে পানি নামছে অত্যন্ত ধীরগতিতে। এতে যত বৃষ্টি হচ্ছে, সমস্যাও তত বাড়ছে।

মাস্টারপাড়া এলাকার গৃহিণী সাবিনা ইয়াসমিন প্রথম আলোকে বলেন, টানা বৃষ্টিতে বাড়ির উঠানে হাঁটুপানি। রান্নাঘরেও পানি। পানির কারণে আজ দুপুরে রান্নাও করতে পারেননি। বাধ্য হয়ে দোকান থেকে খাবার কিনে এনে খেয়েছেন। এই গৃহিণী আরও বলেন, আশপাশের নালায় জমে থাকা ময়লা-আবর্জনা বৃষ্টির পানির সঙ্গে মিশে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে রোগ-জীবাণু ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন তিনি।

নোয়াখালী পৌরসভার মেয়র সহিদ উল্যাহ খান প্রথম আলোকে বলেন, শহরের প্রধান সড়কের পূর্ব পাশে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ নির্মিত ড্রেনটি অনেকটাই ভরাট হয়ে গেছে। কিন্তু ড্রেনের ওপরের স্ল্যাব সরানোর সুযোগ না থাকায় ড্রেনটি পরিষ্কার করা যাচ্ছে না। জেলা প্রশাসন ও সওজের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে। ড্রেনটি পরিষ্কার করা গেলে পানিনিষ্কাশন ত্বরান্বিত হবে বলে আশা করা যায়।

এদিকে টানা বৃষ্টিতে জেলার সদর, সেনবাগ, সোনাইমুড়ী, চাটখিল, বেগমগঞ্জ, কবিরহাট, কোম্পানীগঞ্জ, সুবর্ণচর উপজেলার বেশির ভাগ নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। জলমগ্ন হয়ে পড়েছে বিভিন্ন গ্রামীণ সড়ক। এতে সীমাহীন ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন এসব উপজেলার বাসিন্দারা। বৃষ্টির পানিতে ডুবে গেছে আমন ধানের বীজতলা। এ ছাড়া মাঠে পানি বেশি থাকায় অনেক এলাকার কৃষক খেতে আমন লাগাতে পারছেন না।