জগন্নাথের বিবাহিত এবং অন্তঃসত্ত্বা ছাত্রীদের হল ছাড়ার নির্দেশ

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের একমাত্র আবাসিক হল বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল
ফাইল ছবি

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের একমাত্র আবাসিক হলে থাকা বিবাহিত এবং অন্তঃসত্ত্বাসহ ছাত্রীদের হল ছাড়তে বলা হয়েছে। হলের আবাসিকতা পাওয়ার শর্ত অনুযায়ী বিবাহিত ছাত্রীদের আসন পাওয়ারও সুযোগ নেই।

আজ সোমবার বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের প্রাধ্যক্ষ দীপিকা রাণী সরকার স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বিবাহিত এবং অন্তঃসত্ত্বা ছাত্রীদের হল ছাড়তে বলা হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘আবাসিক ছাত্রীদের যাদের স্নাতকোত্তর পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ হয়েছে, তারা অতি দ্রুত হল ত্যাগ করবে। কোনো মানোন্নয়ন (মাস্টার্স) পরীক্ষার্থী, এম.ফিল ছাত্রী হলে থাকতে পারবে না। এ ছাড়া আবাসিকতা লাভ ও বসবাসের শর্তাবলি এবং আচরণ ও শৃঙ্খলাসংক্রান্ত বিধিমালা ২০২১ এর ১৭ নম্বর ধারা মোতাবেক বিবাহিত ও গর্ভবর্তী ছাত্রীরা আবাসিক সিট (আসন) পাবে না। বিধায় তারা অতি দ্রুত হলের সিট ছেড়ে দেবে। অন্যথায়, তাদের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

এদিকে দেশের একমাত্র অনাবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থীদের আবাসিক সিটের প্রতি মানবিক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মিনহাজ উদ্দীন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে সবচেয়ে করুণ দশা জগন্নাথের শিক্ষার্থীদের। নানা আন্দোলন সংগ্রামের পর নারী শিক্ষার্থীরা একটা হল পেয়েছেন। সেই হলে থাকার বিষয়ে যদি এত অসংবেদনশীল ও শিক্ষার্থীবিরুদ্ধ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, সে বিষয়টা খুবই দুঃখজনক। তবে নিয়ম মানার ক্ষেত্রে কিছু বিষয়ে আবাসিক শিক্ষার্থীদের যত্নশীল হতে হবে বলে আমি মনে করি।’  

এ বিষয়ে হলের প্রাধ্যক্ষ দীপিকা রাণী প্রথম আলোকে বলেন, হলে অন্তঃসত্ত্বা ছাত্রীদের স্বাস্থ্যসেবার বিষয়ে কোনো ব্যবস্থাপনা নেই। ছাত্রীদের সতর্কতার জন্যই দ্রুত হল ত্যাগ করতে হবে। আর নীতিমালা অনুযায়ী কোনো বিবাহিত ছাত্রী হলে আসন পাবেন না। বিবাহিতদের মধ্যে কেউ হল ছাড়ার জন্য সময় চাইলে মানবিক বিবেচনায় তাঁকে সময় দেওয়া হবে। অনেক দরিদ্র এবং মা-বাবা নেই, এমন ছাত্রীকে আবাসিক সুবিধা দেওয়া জরুরি প্রয়োজন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর শ্রেণির এক বিবাহিত ছাত্রী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রথম আলোকে বলেন, হলে ওঠার পর কয়েক মাস আগে তাঁর বিয়ে হয়। বললেই হল ছাড়া যায় না। নিরাপত্তা ও পারিপার্শ্বিক বিভিন্ন বিষয় থাকে। প্রশাসন এগুলো গুরুত্বে নিচ্ছে না। হল ছেড়ে দেওয়ার প্রস্তুতি নিতে অন্তত দুই-এক মাস সময় প্রয়োজন।

১৬ তলা বিশিষ্ট আবাসিক হলটি উদ্বোধন করা হয় গত বছরের ১৭ মার্চ। প্রতিষ্ঠার ১৬ বছর পর এই প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নিজেদের একটি হল পান। ক্যাম্পাসের বাইরে নির্মিত একমাত্র আবাসিক হলটিতে ৬২৪ ছাত্রীর আসনের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। তবে ১ হাজার ২০০ ছাত্রীর আসন বরাদ্দ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ভবনটিতে ছাত্রীদের জন্য মোট ১৫৬টি কক্ষ, ১টি পাঠাগার, ১টি ক্যানটিন, ১টি ডাইনিং, প্রতি তলায় ৭টি শৌচাগার, ৯টি গোসলখানা ও ৪টি লিফট আছে।

হল প্রাধ্যক্ষের স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের পাঁচটি হলে আসন বণ্টন–সম্পর্কিত নীতিমালার একটি ধারায় বলা ছিল, ‘কোনো ছাত্রী বিবাহিত হলে অবিলম্বে কর্তৃপক্ষকে জানাবেন। অন্যথায় নিয়ম ভঙ্গের কারণে তাঁর সিট বাতিল হবে। শুধু বিশেষ ক্ষেত্রে বিবাহিত ছাত্রীকে চলতি সেশনে হলে থেকে অধ্যয়নের সুযোগ দেওয়া হবে। অন্তঃসত্ত্বা ছাত্রী হলে থাকতে পারবেন না।’ এই নিয়ম নিয়ে ২০২১ সালে বেশ আলোচনা-সমালোচনা হয়। পরে এই নিয়ম বাতিল করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তবে অন্তঃসত্ত্বাদের নিরাপত্তার কথা ভেবে নিরুৎসাহিত করা হয়।