নোয়াখালীতে প্রচণ্ড গরমে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ১৭ শিক্ষার্থী অসুস্থ

অসুস্থ হয়ে পড়া এক শিক্ষার্থীর তাপমাত্রা দেখছেন পল্লি চিকিৎসক। আজ সকালে হাতিয়ার জনকল্যাণ শিক্ষা ট্রাস্ট হাইস্কুলেছবি সংগৃহীত।

প্রচণ্ড গরমে নোয়াখালী হাতিয়া উপজেলায় একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ১৭ শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েছে। আজ রোববার সকাল সোয়া ১০টা থেকে বেলা ১১টার মধ্যে হাতিয়া জনকল্যাণ শিক্ষা ট্রাস্ট হাইস্কুলে এ ঘটনা ঘটে। পরে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ স্থানীয় পল্লিচিকিৎসক ডেকে এনে শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেন।

বিদ্যালয়ের সহকারী জ্যেষ্ঠ শিক্ষিকা ফাতেমা ইসরাত প্রথম আলোকে বলেন, আজ সকাল ১০টার দিকে বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির পাঠদান কার্যক্রম শুরুর পর বিভিন্ন শ্রেণিতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে অসুস্থতা লক্ষ করা যায়। একপর্যায়ে ষষ্ঠ শ্রেণির ১১ জন, অষ্টম শ্রেণির ২ জন, নবম শ্রেণির ২ জন ও দশম শ্রেণির ২ জন শিক্ষার্থী গরমে অসুস্থ হয়ে পড়ে।

তীব্র গরমে শরবত বিক্রি করছেন এক বিক্রেতা। রোববার দুপুরে নোয়াখালী চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্টেট্রট ভবনের সামনের সড়কের পাশে
ছবি: প্রথম আলো।

শিক্ষিকা ফাতেমা ইসরাত জানান, শিক্ষার্থীদের কারও পেটব্যথা, কারও মাথাব্যথা, কারও চোখব্যথা লক্ষ করা যায়। এ সময় একজন শিক্ষার্থী বমি করে। শিক্ষার্থীদের এমন অবস্থা দেখে তাৎক্ষণিকভাবে শ্রেণিশিক্ষক তাঁকে বিষয়টি জানান। তিনি স্থানীয় এক পল্লিচিকিৎসককে ডেকে এনে অসুস্থ সব শিক্ষার্থীকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেন।

বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হাতিয়া জনকল্যাণ শিক্ষা হাইস্কুলের ঘরটি টিনের হওয়ার কারণে বিদ্যালয়ে আসার পর শিক্ষার্থীরা বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গরমে হাঁসফাঁস করতে থাকে। তারা এরই মধ্যে গরমের কারণে সৃষ্ট সংকটের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন।

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নুরুদ্দিন জাহাঙ্গীর প্রথম আলোকে বলেন, হাতিয়ার জনকল্যাণ ট্রাস্ট হাইস্কুলে গরমের কারণে শিক্ষার্থীরা অসুস্থ হয়ে পড়ার বিষয়টি তিনি জেনেছেন। তিনি স্কুল কর্তৃপক্ষকে মর্নিং স্কুল চালুর বিষয়ে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আবেদন নিয়ে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পরামর্শ দিয়েছেন।

বাড়ি ছেড়ে বের হচ্ছেন না মানুষজন

প্রচণ্ড গরমে প্রয়োজন ছাড়া খুব একটা বাড়ির বাইরে বের হচ্ছেন না কেউ। নোয়াখালী শহরের প্রধান সড়কেও যানবাহনের সংখ্যা কমে গেছে। মানুষজনের সমাগম কম হওয়ায় রোদের মধ্যে ক্রেতার জন্য প্রহর গুনছেন মৌসুমি শরবত বিক্রেতারা। একই চিত্র দেখা গেছে মৌসুমি ফল বিক্রেতাদের ক্ষেত্রেও। ক্রেতার আশায় তাঁরা ঘুরছেন শহরের এ প্রান্ত থেকে ওই প্রান্ত।

গতকাল শনিবার বেলা ১১টায় শহরের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত প্রাঙ্গণে মানুষজনের উপস্থিতি কম দেখা যায়। আদালতের সামনে মো. সেলিম নামের ষাটোর্ধ্ব এক শরবত বিক্রেতা জানান, আদালত বন্ধ থাকলেও নানা কাজে আদালতপাড়ায় আসেন। আগে খোলার দিনের চেয়ে বিক্রি খানিকটা কম হলেও তা সংসার চালানোর মতোই ছিল। কিন্তু গতকাল সকাল থেকে ক্রেতা পাচ্ছেন না। গরমে মানুষজন ঘর থেকে বের হচ্ছে কম। বিক্রি কম হওয়ায় সাতজনের সংসারে টানাটানিও বেড়ে গেছে।

তীব্র গরমে কার্যত: জনমানবহীন নোয়াখালী চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ও সার্কিট হাউজ সড়ক। আজ দুপুরে
ছবি: প্রথম আলো।

জেলা জামে মসজিদ সড়কের মোড়ে ছাতা মাথায় আনারসভর্তি ভ্যান গাড়ি নিয়ে ক্রেতার অপেক্ষায় আছেন মো. নাছের নামের এক বিক্রেতা। তিনি বলেন, কয়েক দিন আগেও প্রতি হালি আনারস বিক্রি করেছেন ২০০ টাকা। এখন ক্রেতা কম থাকায় হালি বিক্রি করতে হচ্ছে ১০০ টাকায়। তা-ও ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে না।

শহরের প্রধান সড়ক ঘুরে দেখা যায়, যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় কম। বিক্রি কমে গেছে শহরের দোকানপাটেও। কথা হয় শহরের টাউন হল মোড়ের কনফেকশনারি ও কুলিং কর্নারের মালিক আলমগীর হোসেনের সঙ্গে। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘আগে একটু গরম বাড়লে কোমল পানীয় ও আইসক্রিম বিক্রির ধুম পড়ে যেত। দোকানে ক্রেতার লাইন ধরত। কিন্তু এখন গরম এতটাই বেশি যে মানুষজনই ঠিকমতো ঘর থেকে বের হন না, বিক্রি করব কার কাছে? দোকান খোলা রাখলেও বেচাকেনা তেমন নাই।’

জেলা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণকেন্দ্রের পর্যবেক্ষক রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, দেশের অন্যান্য জেলার মতো নোয়াখালীর ওপর দিয়েও তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। আজ দুপুরে জেলার তাপমাত্রা ছিল ৩৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। তবে অনুভূত হয়েছে ৪৮ ডিগ্রির মতো।