নগরে জলাবদ্ধতা, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ২২ বিভাগের ২৪টি চূড়ান্ত পরীক্ষা স্থগিত

চট্টগ্রামে বৃষ্টিতে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। পানি ঠেলে এগিয়ে যাচ্ছেন পথচারীরা। ২৭ আগস্ট
ছবি: জুয়েল শীল

ভারী বৃষ্টিতে চট্টগ্রামের বিভিন্ন জায়গায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এতে বন্ধ রয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় অভিমুখী বাস ও ট্রেন চলাচল। এই কারণে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ২২টি বিভাগের ২৪টি কোর্সের চূড়ান্ত পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে এসব পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট বিভাগের সভাপতি ও জ্যেষ্ঠ শিক্ষকেরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন দপ্তর ও প্রশাসন সূত্র জানায়, ভারী বৃষ্টির কারণে চট্টগ্রাম নগরের বিভিন্ন সড়কে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এতে সড়কে তীব্র যানজট দেখা দিয়েছে।

চট্টগ্রাম নগর থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় অভিমুখে রওনা দেওয়া বাসগুলো হাটহাজারী উপজেলার নন্দীরহাট এলাকায় আটকা পড়েছিল। ওই এলাকায় জলাবদ্ধতার কারণে সকাল থেকে তীব্র যানজট থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো বাস চলাচল করতে পারেনি। এ ছাড়া নগর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাতায়াতের জন্য শিক্ষার্থীদের অন্যতম বাহন শাটল ট্রেনও চলাচল বন্ধ ছিল। এতে অনেক শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে আসতে পারেননি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন দপ্তরের প্রশাসন মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিন জানান, ‘জলাবদ্ধতার কারণে শিক্ষকদের যাতায়াতের এসি বাসগুলো বন্ধ রাখা হয়েছে। কিছু নন–এসি বাস চলাচল করলেও যানজটের কারণে বিলম্বে পৌঁছেছে।’

ষোলশহর রেলওয়ের স্টেশনমাস্টার জয়নাল আবেদিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘অতি বৃষ্টির কারণে শাটল চলাচল বন্ধ রয়েছে। নগরীর বটতলী রেলস্টেশন থেকে কোনো শাটল ট্রেন ছেড়ে যায়নি। কখন চলাচল স্বাভাবিক হবে, তা নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না।’

শাটল ট্রেন চলাচল না করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস ও পরীক্ষা স্থগিত থাকে—এমনটাই প্রচলিত রীতি। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপপরীক্ষা নিয়ন্ত্রক সারওয়ার পারভেজের দেওয়া তথ্যমতে, আজ রোববার ২৪ বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের বিভিন্ন বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। এগুলো হলো ইতিহাস বিভাগের প্রথম বর্ষ, দর্শন বিভাগের তৃতীয় বর্ষ, চারুকলা ইনস্টিটিউটের তৃতীয় বর্ষ, নৃবিজ্ঞানের দ্বিতীয় বর্ষ, আন্তর্জাতিক সম্পর্কের প্রথম বর্ষ, ফারসি ভাষা ও সাহিত্যের স্নাতকোত্তর, প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণ বিজ্ঞান দ্বিতীয় ও চতুর্থ বর্ষ, রসায়নের প্রথম বর্ষ, সমুদ্রবিজ্ঞানের দ্বিতীয় বর্ষ, পালির তৃতীয় বর্ষ, ইসলামিক স্টাডিজের চতুর্থ বর্ষ, ইংরেজির স্নাতকোত্তর , শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রথম বর্ষ, সংস্কৃতের তৃতীয় বর্ষ, মার্কেটিংয়ের তৃতীয় সেমিস্টার, আরবির দ্বিতীয় বর্ষ, যোগাযোগ ও সাংবাদিকতার দ্বিতীয় ও স্নাতকোত্তর, শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়াবিজ্ঞানের স্নাতকোত্তরের দ্বিতীয় সেমিস্টার, মনোবিজ্ঞানের প্রথম বর্ষ, হিসাববিজ্ঞানের স্নাতকোত্তর প্রথম সেমিস্টার, ব্যাংকিং অ্যান্ড ইনস্যুরেন্সের স্নাতকোত্তর দ্বিতীয় সেমিস্টার, ফাইন্যান্সের স্নাতকোত্তর দ্বিতীয় সেমিস্টার, উদ্ভিদবিজ্ঞানের প্রথম বর্ষ ও পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষা ছিল।

পরে বিভাগ ও ইনস্টিটিউটগুলোয় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চারুকলা ইনস্টিটিউট এবং শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়াবিজ্ঞান ছাড়া সব বিভাগের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। চারুকলা ইনস্টিটিউটের অবস্থান মূল ক্যাম্পাস থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে হওয়ায় ক্যাম্পাসমুখী রাস্তার জলাবদ্ধতার প্রভাব সেখানে পড়েনি। তাই নির্ধারিত সময়েই পরীক্ষা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক প্রণব মিত্র চৌধুরী।

আর শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়াবিজ্ঞান বিভাগের ব্যবহারিক পরীক্ষা ছিল। অধিকাংশ শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসেই অবস্থান করেন। যেসব শিক্ষার্থী ব্যবহারিক পরীক্ষা দেওয়ার জন্য আসতে পারেননি, তাঁদের পরীক্ষা কাল অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ আবুল মনছুর।