উপসচিব পদে পদোন্নতিতে ৫০-৫০ কোটার প্রস্তাব থাকছে
উপসচিব পদে পদোন্নতিতে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের জন্য ৫০ শতাংশ এবং অন্য ক্যাডারের জন্য ৫০ শতাংশ কোটার সুপারিশ রেখেই প্রতিবেদন দিতে যাচ্ছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন। কমিশন সূত্রে এমন আভাস পাওয়া গেছে।
বর্তমানে উপসচিব পদে পদোন্নতিতে ৭৫ শতাংশ প্রশাসন ক্যাডারের জন্য সংরক্ষিত। বাকি ২৫ শতাংশ কোটা অন্য ক্যাডারের জন্য। কমিশন আগামী বুধবার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে প্রতিবেদন জমা দেবে। জানতে চাইলে কমিশনের প্রধান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী ৫ ফেব্রুয়ারি প্রতিবেদন জমা দেওয়ার বিষয়টি জানান। তবে প্রতিবেদনের বিষয়বস্তু সম্পর্কে কিছুই বলতে চাননি।
কোটা কমানো নিয়ে প্রশাসন ক্যাডারের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে। অন্যদিকে অন্য ক্যাডারের কর্মকর্তারা উপসচিব পদে কোটা বাতিলের দাবি করেছেন। কমিশনের সম্ভাব্য সুপারিশের খবর জানাজানির পর গতকাল রোববার সন্ধ্যায় রাজধানীর বিয়াম মিলনায়তনে জড়ো হন প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা। প্রশাসনের জুনিয়র কর্মকর্তাদের সঙ্গে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের নতুন কমিটির এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হলেও সেখানে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সুপারিশ নিয়ে আলোচনা হয়। বিশেষ করে এই সুপারিশ নিয়ে নবীন কর্মকর্তাদের উদ্বেগের বিষয়ে আলোচনা হয়।
এর আগে গত ডিসেম্বরে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় সম্ভাব্য কিছু সুপারিশের কথা জানিয়েছিলেন কমিশন প্রধান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী এবং সদস্যসচিব ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. মোখলেস উর রহমান। সম্ভাব্য সুপারিশের মধ্যে উপসচিব পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের জন্য ৫০ শতাংশ এবং অন্য ক্যাডারের জন্য ৫০ শতাংশ কোটা রাখার বিষয়টি ছিল। এ ছাড়া শিক্ষা ও স্বাস্থ্যকে ক্যাডারে অন্তর্ভুক্ত না রেখে আলাদা কমিশনে রাখার সুপারিশ রাখা হতে পারে বলেও জানিয়েছিলেন তাঁরা।
অবশ্য এ নিয়ে বিভিন্ন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। রাজধানীর বিয়াম ফাউন্ডেশন মিলনায়তনে গত ২৫ ডিসেম্বর প্রশাসন ক্যাডারের সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তারা যৌথ প্রতিবাদ সভা করেন। সেখানে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরীর পদত্যাগ বা অপসারণ দাবি করা হয়। কমিশন যদি কোনো ‘অযাচিত’ সুপারিশ করে, তাহলে কঠোর কর্মসূচি দেওয়ারও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।
জনপ্রশাসনের উপসচিব পদে পদোন্নতিতে কোটা বাতিল এবং শিক্ষা ও স্বাস্থ্যকে ক্যাডারবহির্ভূত করতে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবিত সুপারিশের প্রতিবাদে প্রশাসন ক্যাডারের বাইরে বিসিএসের বিভিন্ন ক্যাডারের কর্মকর্তারা ২৬ ডিসেম্বর নিজ নিজ কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করেন। জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সুপারিশের পর আন্তক্যাডার দ্বন্দ্ব ঘিরে যেসব সরকারি কর্মকর্তা পরস্পরের বিরুদ্ধে ফেসবুকে বিরূপ মন্তব্য করেছেন, তাঁদের কয়েকজনকে শাস্তির মুখে পড়তে হয়।
এ রকম অবস্থায় সংস্কার কমিশন চূড়ান্ত পর্যায়ে উপসচিব পর্যায়ে কোটা নিয়ে সুপারিশ থাকবে কি না, সেই কৌতূহল ছিল। কিন্তু রোববার কমিশনের একাধিক সূত্র আভাস দিয়েছে, চূড়ান্ত প্রতিবেদনে উপসচিব পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের জন্য ৫০ শতাংশ এবং অন্য ক্যাডারের জন্য ৫০ শতাংশ কোটা রাখার সুপারিশ থাকছে।
আজ সন্ধ্যায় বিয়াম মিলনায়তনে জড়ো হওয়া প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, উপসচিব পদে প্রশাসন ক্যাডারের কোটা কমানোর সুপারিশ যাতে বাস্তবায়ন না হয়, সে জন্য তাঁরা নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে সব চেষ্টা চালিয়ে যাবেন।