তথ্য চেয়ে করা আবেদন ৩০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ

হাইকোর্ট ভবনফাইল ছবি

হেফাজতে বিএনপির ১৩ জন নেতা–কর্মীর মৃত্যুর কারণ জানতে হাসপাতালের রেজিস্টার ও ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের তথ্য চেয়ে করা পৃথক আবেদন (চিঠি) ৩০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। সংশ্লিষ্ট কারা কর্তৃপক্ষের প্রতি এ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এক রিটের শুনানি নিয়ে বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি এস এম মাসুদ হোসাইন দোলনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ মঙ্গলবার এ আদেশ দেন।

কারা হেফাজতে বিএনপির ১৩ জন নেতা–কর্মীর মৃত্যুর অভিযোগ তুলে তা তদন্তে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত মানবাধিকার কর্মীদের অন্তর্ভুক্ত করে কমিটি গঠন ও তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশনা চেয়ে করা রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে এ আদেশ দেওয়া হয়। বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল আবেদনকারী হয়ে গত ১১ ফেব্রুয়ারি রিটটি করেন। পরে আরেকটি সম্পূরক আবেদন দাখিল করেন রিট আবেদনকারী।

আদালতে রিটের পক্ষে আইনজীবী কায়সার কামাল শুনানি করেন, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মো. মাকসুদ উল্লাহ। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন, সঙ্গে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়।

শুনানিতে ২০১৩ সালের নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনের প্রসঙ্গ ওঠে। আইনজীবী কায়সার কামাল বলেন, ‘আইনে আছে নির্যাতন, এ ক্ষেত্রে নির্যাতন হয়েছে বলছি না। হেফাজতে থাকা অবস্থায় ১৩ ব্যক্তি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এই রাজনৈতিক বন্দীরা মারা গেছেন। কীভাবে মারা গেছেন, তা শনাক্ত করার জন্য এই আবেদন। কেউ কারাগারে কেউ হাসপাতালে মারা গেছেন। রাষ্ট্রের ১৩ জন মানুষ একটা নির্দিষ্ট সময়ে এক–দুই মাসের মধ্যে মারা গেছেন। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বিষয়টি এসেছে, এই মৃত্যু অস্বাভাবিক মনে হয়েছে। নির্যাতনে মারা গেছে বলছি না, হয়তো স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে কি না, তা বের করার জন্য রুল চাচ্ছি।’

কারা কর্তৃপক্ষের কাছে তথ্যাদি চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে উল্লেখ করে আইনজীবী কায়সার কামাল বলেন, যে ১৩ জনের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে, প্রতিটি ক্ষেত্রে চিঠি পাঠানো হয়েছে। শুধু একটি চিঠির জবাব এসেছে, রংপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে। বলা হয়েছে, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি।

আইনজীবীর উদ্দেশে আদালত বলেন, ‘মারা যাওয়ার পর আপনারা কোনো জিডিও করেননি। আমাদের যেসব প্রতিষ্ঠান আছে, প্রতিষ্ঠানের ওপর আপনার আস্থা থাকতে হবে। কোনো ধরনের সমস্যা হলে তাৎক্ষণিক জিডি করতে হবে অথবা মামলা করতে হবে। থানা যদি মামলা না নেয়, তাহলে কোর্টে মামলা করতে হবে।’

আইনজীবী কায়সার কামাল বলেন, একজন গ্রেপ্তার হয়েছেন। তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। পরিবার বলছে, যখন কারাগারে যায় তখন সে সুস্থ ছিল।

আইনজীবীর উদ্দেশ্যে আদালত বলেন, ‘এর আগে শুনানিতে জিডি ও ময়না তদন্তের প্রতিবেদন নিয়ে আসতে বলা হয়েছিল। কোনো লোক বিনা বিচারে মারা যাক আমরা চাই না। আপনাকে প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে। আপনারা তো পদক্ষেপ নেননি। আমরা কোনোভাবেই এই বিষয়গুলোকে রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখব না। আপনি দেখান কোনো জিডি হয়েছে কি না? এমনকি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলাও করেনি।’

আইনজীবী কায়সার কামাল বলেন, ‘পরিবারের পক্ষ থেকে সাহস পাচ্ছে না। দু–একজনের সঙ্গে কথা বলেছি, তারা বলছে এমনিতেই জর্জরিত। এগুলোর মধ্যে থাকতে চান না। শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, তারা জিডি করে আসেননি। পরিবার আসছে না।’

একপর্যায়ে আদালত বলেন, ‘কোনো মরদেহের মৌলিক অধিকার থাকে না, পরিবারের আছে। তবে আইন অনুসারে তা করতে হবে।’ আইনজীবী কায়সার কামাল বলেন, কারাবিধিতে আছে, কেউ যখন কারাগারে প্রবেশ করবে, তখন তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হবে। সব বিধিবিধান অনুসরণ করা হয়েছে কি না?  কারা কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দিয়ে জানতে চেয়েছি কীভাবে তাঁরা মারা গেলেন। পরে আদালত ওই আদেশ দেন।