নির্বাচনের যে সংজ্ঞা, এবারের জাতীয় সংসদ নির্বাচন তার মধ্যে পড়ে না। এটাকে নির্বাচন বলা যায় না, সিলেকশন (পছন্দমতো বাছাই) হচ্ছে। কে জিতবে, কে সরকার গঠন করবে—এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
এই নির্বাচন একই দলের একাধিক পক্ষের মধ্যে হচ্ছে। এই নির্বাচনে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হচ্ছে বিরোধী দল কারা হবে, কীভাবে হবে। জাতীয় পার্টির প্রার্থীদের অনেকে নির্বাচন থেকে সরে গেছেন, বাকিদের কী হবে, জানি না। কিছুসংখ্যক লোককে কীভাবে জেতানো যায়, সে ফর্মুলা (পদ্ধতি) তৈরি করা হচ্ছে। আমার কাছে এটি ‘হাইব্রিড নির্বাচন’।
যে দলগুলো নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে, তার মধ্যে অনেক দলই পরিচিত নয়। যারা নির্বাচন বর্জন করছে, তাদের মধ্যে কয়েকটি বড় দল রয়েছে। নির্বাচন বর্জন করা দলগুলোর মধ্যে ধর্মভিত্তিক দলও রয়েছে। ২০১৪ সালের নির্বাচন বর্জনেও এত দল ছিল না।
এবার নির্বাচনী প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার আগেই বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা (বর্জন করা দলগুলো) নির্বাচনে এলে এই পরিস্থিতি বদলাত কি না, জানি না। তবে কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক তো বলেই দিয়েছেন কেন তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এরপর তো আর কোনো ব্যাখ্যার প্রয়োজন হয় না। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বিরোধীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
নির্বাচন কমিশন জানে, এই নির্বাচন করে তারা কৃতিত্ব নিতে পারবে না, তবে তারা চেষ্টা করেছে। অনেক প্রার্থীকে শোকজ (কারণ দর্শানো) করেছে, অনেককে ডেকেছে, জরিমানাও করেছে। দু-একজনের প্রার্থিতাও বাতিল করা হয়েছে। যদিও যাঁদের বাতিল করা উচিত ছিল, তাঁদের হয়নি। ইসির পারফরম্যান্স (কার্যদক্ষতা) মিশ্র বলা যায়। নির্বাচনে বিদেশি পর্যবেক্ষক সেভাবে আনা যায়নি, বিশ্বাসযোগ্যতাও সেভাবে নেই। সব মিলিয়ে সিস্টেমেটিক শর্টকামিং (পদ্ধতিগত ঘাটতি) তো আছেই। আবার নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে বিশ্ব থেকে বাংলাদেশ বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে—এমন নানা কথা তাঁরা (প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ কমিশনাররা) বলছেন।
কেউ যদি ভোটারদের আনতে জোরজবরদস্তি করে, সেটা কাম্য হবে না। এই নির্বাচন আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত হবে না, ভোটারদের জোরজবরদস্তি করলে সেটি আরও খারাপ হবে। কেউ যদি মনে করে জোরজবরদস্তি করে ৪০-৫০ শতাংশ ভোটার উপস্থিতি দেখিয়ে ক্রেডিট (কৃতিত্ব) নেব, তা করতে পারে। তবে আন্তর্জাতিক অঙ্গন এটি কীভাবে নেবে? আন্তর্জাতিক মহলে আদৌ এর কোনো এফেক্ট (প্রভাব) হবে, নাকি তাদের (আন্তর্জাতিক মহল) গা–সওয়া হয়ে গেছে যে বাংলাদেশে এগুলো স্বাভাবিক ব্যাপার—সেটাই দেখার বিষয়।