‘ধনী-গরিবের’ মেট্রোরেলে গরিবেরা চড়তে পারবে তো

কলকাতা, দিল্লি, লাহোর, জাকার্তা ও কুয়ালালামপুরের চেয়ে ঢাকার মেট্রোরেলে যাতায়াত ব্যয় বেশি হবে।

দেশে দেশে মেট্রোরেলের ভাড়া

  • কলকাতায় ২০ কিলোমিটারের বেশি পথ যাওয়া যায় ২৫ রুপিতে (৩১ টাকা)।

  • লাহোরে ২৭ কিলোমিটার যাতায়াত করা যায় ৪০ রুপি (১৮ টাকা) দিয়ে।

  • জাকার্তায় মেট্রোরেল ও বিআরটিতে সমন্বিত কিলোমিটারপ্রতি ভাড়া ২৫০ রুপিয়া (১ টাকা ৬৪ পয়সা)।

  • কুয়ালালামপুরে ৫০ রিঙ্গিত ব্যয় করে পুরো মাস মেট্রোরেল ও বাসে চলাচল করা যায়, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ১ হাজার ১৬৩ টাকা।

  • ঢাকায় সর্বনিম্ন ভাড়া ২০ টাকা। সর্বোচ্চ ১০০ টাকা।

ঢাকায় দেশের প্রথম মেট্রোরেল চালু হয় গত ২৮ ডিসেম্বর। মেট্রোরেল উদ্বোধন উপলক্ষে সাজসজ্জা। গত ২৭ ডিসেম্বর তোলা
ছবি: প্রথম আলো

পৃথিবীর প্রথম মেট্রোরেল চালু হয়েছিল লন্ডনে, ১৮৬৩ সালের ১০ জানুয়ারি। বাষ্পীয় ইঞ্জিনচালিত সেই রেল ব্যাপক ধোঁয়া তৈরি করত। যাত্রী ও চালকদের জন্য যা স্বস্তিকর ছিল না। যদিও সেই মেট্রোরেল জনপ্রিয় হয়েছিল। মেট্রোরেলে বিদ্যুৎ যোগ হয় ১৮৯০ সালে।

লন্ডনে মেট্রোরেল চালুর ১৫৯ বছর ১১ মাস ১৮ দিন পর গত ২৮ ডিসেম্বর ঢাকায় চালু হয়েছে বাংলাদেশের প্রথম মেট্রোরেল। শুরুতে ঢাকা মেট্রোরেল চলছে উত্তরার দিয়াবাড়ি থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত। আগামী বছর মতিঝিল পর্যন্ত চলাচল করার কথা। ২০২৫ সালে ঢাকাবাসী উত্তরা থেকে সরাসরি কমলাপুর যেতে পারবে। এ জন্য জনগণকে ব্যয় করতে হচ্ছে ৩৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা।

আরও পড়ুন

২০১৭ সালে ঢাকায় যখন মেট্রোরেলের কাজ শুরু হয়, তখন বেগম রোকেয়া সরণির সড়কের মাঝখানের বড় একটি অংশ আলাদা করে ফেলা হয়, দেওয়া হয় কংক্রিটের ব্লকের বেড়া। এর মাঝে শুরু হয় খোঁড়াখুঁড়ি। ফলে রাস্তা সরু হয়ে যায়। বর্ষায় কাদাপানি ও জলজট, শীতে ধুলাবালু আর সারা বছর যানজট—পাঁচটি বছর মানুষের ভোগান্তির কোনো শেষ ছিল না।

সেই ভোগান্তির শেষ হয়েছে মেট্রোরেল উদ্বোধনের মাধ্যমে। এখনো মানুষ মেট্রোরেলে চড়তে, দেখতে স্টেশনগুলোতে ভিড় করছে। সেটা মূলত শখের যাত্রা। পুরোদমে মেট্রোরেল কার্যক্রম শুরু করতে আগামী ২৫ মার্চ পর্যন্ত সময় নেবে। মানুষের যাত্রা সহজ ও স্বস্তির হবে।

বাস, অটোরিকশা ও মেট্রোরেলের ভাড়া

একটি আশঙ্কার দিক হলো, মেট্রোরেল গণমানুষের গণপরিবহন না হয়ে সচ্ছলদের পরিবহন হয়ে ওঠে কি না। এর কারণ ভাড়া। মেট্রোরেলের সর্বনিম্ন ভাড়া ২০ টাকা। এর মানে হলো, মিরপুর ১০ নম্বর সেকশন থেকে উঠে সামান্য দূরের কাজীপাড়ায় নামলেও একজন যাত্রীকে ২০ টাকা দিতে হবে। বাসে যেখানে ১০ টাকা দিয়েই যাওয়া যায়। আর পুরো পথ, অর্থাৎ উত্তরা থেকে কমলাপুর যেতে ভাড়া লাগবে ১০০ টাকা। কেউ ২০০ টাকা জামানত দিয়ে স্থায়ী কার্ড কিনে টাকা ভরে চলাচল করলে ১০ শতাংশ ছাড় পাবেন।

মেট্রোরেলের প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ টাকা। ঢাকায় বাসভাড়া প্রতি কিলোমিটারে ২ টাকা ৪৫ পয়সা। দেখা যাচ্ছে, বাসভাড়ার চেয়ে দ্বিগুণ হারে নির্ধারণ করা হয়েছে মেট্রোরেলের ভাড়া।

সিএনজিচালিত অটোরিকশার সরকার–নির্ধারিত ভাড়া প্রথম দুই কিলোমিটারে ৪০ টাকা। পরের প্রতি কিলোমিটারে ১২ টাকা।

একটি অটোরিকশায় তিনজন মানুষ উঠতে পারেন। সীমিত আয়ের মানুষ সাধারণত পরিবারসহ কোথাও গেলে অটোরিকশায় ওঠেন। ফলে জনপ্রতি অটোরিকশায় ভাড়া পড়ে কিলোমিটারে ৪ টাকা। তিনজন প্রাপ্তবয়স্ক ও একটি শিশুকে (তিন ফুটের বেশি উচ্চতা) নিয়ে যদি পরিবারটি মেট্রোরেলে ২১ কিলোমিটার চলাচল করে, তাহলে ব্যয় হবে ৪০০ টাকা। সিএনজিচালিত অটোরিকশায় মিটারে সেটা ৩০০ টাকার মতো দাঁড়াবে।

আরও পড়ুন

সরকারের কর্মকর্তারা যুক্তি তুলে ধরতে পারেন যে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় নির্ধারিত ভাড়া মানা হয় না। তবে অটোরিকশাচালকেরা যে নির্ধারিত ভাড়া মানেন না, মানানো যায় না, সেটা কাদের ব্যর্থতা? মেট্রোরেলের ভাড়া ট্রেন ও লঞ্চের চেয়েও বেশি। সব মিলিয়ে দেখা যাচ্ছে, সরকার–নির্ধারিত ভাড়া যেসব গণপরিবহনে আছে, সব কটির মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভাড়া পড়েছে (কার্যত) মেট্রোরেলে।

রাজধানীর শেওড়াপাড়ার পীরেরবাগ সড়কে চাকরিজীবী ওয়াহিদ ফয়সালের বাসা। সেখান থেকে কারওয়ান বাজারে আসতে ও যেতে মেট্রোরেল ও রিকশায় প্রতিদিন তাঁর ব্যয় হবে ১০০ টাকা। এখন মোটরসাইকেলে ১৩০ টাকার অকটেন নিয়ে তিনি তিন দিনের বেশি চলাচল করতে পারেন।

মেট্রোরেলে তিন ফুটের কম উচ্চতার শিশুদের ক্ষেত্রে ভাড়া নেওয়া হবে না। সাধারণত তিন বছর বয়স হলেই শিশুর উচ্চতা তিন ফুট হয়ে যায়। অসচ্ছল পরিবারগুলো চার-পাঁচ বছরের শিশুদেরও কোলে বসিয়ে বাসে চলাচল করে। এতে ভাড়া লাগে না।

শিক্ষার্থীদের জন্যও মেট্রোরেলে ছাড় নেই। যদিও বাসে শিক্ষার্থীরা অর্ধেক ভাড়া দিয়েই চলাচল করে। ঢাকায় শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) ২০২১ সালের ডিসেম্বরে এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে। এর আগে (২ ডিসেম্বর, ২০২১) সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বাসমালিকদের উদ্দেশে বলেছিলেন, ‘শিক্ষার্থীদের প্রতি সংবেদনশীল হয়ে হাফ ভাড়ার সিদ্ধান্তটি বাস্তবায়ন করুন।’

এক বছর পর মেট্রোরেল উদ্বোধনের আগে সংবাদ সম্মেলনে সড়কমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, মেট্রোরেলে কোনো হাফ ভাড়া নেই। এক বছর আগে বেসরকারি বাসমালিকদের উদ্দেশে যে সংবেদনশীলতার কথা তিনি বলেছিলেন, সরকারি মেট্রোরেলের ক্ষেত্রে তা দেখা গেল না।

ধরা যাক, মিরপুরের পল্লবীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থীর বসবাস। তিনি যদি মেট্রোরেলে চড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে চান, তাহলে তাঁর ভাড়া দিতে হবে ৬০ টাকা। আসা-যাওয়ায় ১২০ টাকা। মাসে ২৬ দিন যদি তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে আসা–যাওয়া করেন, তাহলে তাঁর ব্যয় হবে ৩ হাজার টাকার বেশি। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রেও ব্যয়টা অনেক বেশি হবে।

দেশে বাসে অর্ধেক ভাড়ার বিষয়টি চালু হয় পাকিস্তান আমলে। ১৯৬৯ সালে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ যে ঐতিহাসিক ১১ দফা দাবি ঘোষণা করেছিল, তার একটি ছিল শিক্ষার্থীদের জন্য গণপরিবহনে অর্ধেক ভাড়া রাখার বিষয়টি।

মেট্রোরেল আইন ও ভাড়া

মেট্রোরেল পরিচালনার জন্য সরকার একটি আইনও করেছে। ২০১৫ সালে করা আইনটির নাম মেট্রোরেল আইন-২০১৫। এর উদ্দেশ্য অংশে বলা হয়, ‘জনসাধারণকে স্বল্প ব্যয়ে দ্রুত ও উন্নত গণপরিবহন সেবা প্রদান।’ ২০১৬ সালে করা মেট্রোরেল আইনের বিধিমালায় ভাড়া নির্ধারণের ক্ষেত্রে চারটি বিষয় বিবেচনার কথা বলা হয়েছিল: ১. পথ (রুট) ও আরোহণের দূরত্ব। ২. প্রাপ্তবয়স্ক, শিশু, বৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তি। ৩. সামাজিক অর্থনৈতিক বিষয় ও ৪. অন্যান্য গণপরিবহনের ভাড়ার সঙ্গে সামঞ্জস্য রক্ষা।

দেখা গেল, মেট্রোরেলের ভাড়া বাসের চেয়ে অনেক বেশি নির্ধারণ করা হয়েছে। ‘জনসাধারণকে স্বল্প ব্যয়ে’ সেবা দেওয়ার লক্ষ্যটি উপেক্ষা করা হয়েছে। যদিও মেট্রোরেল পরিচালনাকারী ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাংবাদিকদের বলেছেন, খরচের চেয়ে ৩০ শতাংশ ভাড়া কমিয়ে ধরা হয়েছে মেট্রোরেলে। প্রশ্ন হলো, তাহলে আইনে স্বল্প ব্যয়ের কথা কেন বলা হলো। আইন কি গুরুত্বহীন?

মেট্রোরেলে ভাড়ার ক্ষেত্রে শুধু ছাড় দেওয়া হয়েছে, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শারীরিক প্রতিবন্ধীদের। বীর মুক্তিযোদ্ধারা বিনা মূল্যে যাতায়াত করতে পারবেন। প্রতিবন্ধীদের জন্য ছাড় আছে ভাড়ার ১৫ শতাংশ।

কোন শহরে কত ভাড়া

মেট্রোরেলের ভাড়া আশপাশের দেশগুলোতে চলা মেট্রোর চেয়ে বেশি। যেমন কলকাতা মেট্রো রেলওয়ের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য বলছে, সেখানে উত্তর-দক্ষিণ করিডরের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ভাড়া ৫ রুপি (৬ টাকা ২ পয়সা)। এই পরিমাণ অর্থ দিয়ে দুই কিলোমিটার যাওয়া যায়। আবার ২০ কিলোমিটারের বেশি যেতে ২৫ রুপি (৩১ টাকা) লাগে। পূর্ব-পশ্চিম করিডরের ক্ষেত্রেও সর্বনিম্ন ভাড়া ৫ রুপি। সর্বোচ্চ ভাড়া ৩০ রুপি (৩৭ টাকা), যা দিয়ে ভ্রমণ করা যায় ১০ থেকে সাড়ে ১৬ কিলোমিটার।

সব মিলিয়ে দেখা যাচ্ছে, মেট্রোরেলে কলকাতার তুলনায় তিন গুণ ভাড়া বাংলাদেশে।

পাকিস্তানের লাহোরে ২০২০ সালে চালু হয়েছে মেট্রোরেল (অরেঞ্জ লাইন), যার দৈর্ঘ্য ২৭ কিলোমিটার। দেশটির স্বনামধন্য দৈনিক ডন-এর ২৪ ডিসেম্বরের এক খবরে জানানো হয়, অরেঞ্জ লাইনে আগে ভাড়া ছিল ৪০ রুপি (১৮ টাকা)। উঠলেই এই পরিমাণ অর্থ দিতে হতো। সম্প্রতি দূরত্বভিত্তিক ভাড়া ঠিক করেছে প্রাদেশিক সরকার। এখন সর্বনিম্ন ভাড়া ২০ রুপি (৯ টাকা), সর্বোচ্চ ৪০ রুপি (১৮ টাকা)। মানে হলো, লাহোরের মানুষ ১৮ টাকা দিয়ে ২৭ কিলোমিটার পথে ভ্রমণ করতে পারে।

সড়কমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের মেট্রোরেল উদ্বোধনের পর দাবি করেন, বাংলাদেশের মেট্রোরেল ও কলকাতার মেট্রোরেল এক নয়। বাংলাদেশের মেট্রোরেল আধুনিকতা ও প্রযুক্তিতে অনেক এগিয়ে। আর মেট্রোরেলের ভাড়া ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের চেয়ে বেশি।

যুক্তিটি খাটে না। কারণ, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়া মাথাপিছু আয়ে অনেক এগিয়ে। ক্রয়ক্ষমতার সমতার ভিত্তিতে (পিপিপি) মালয়েশিয়ার মাথাপিছু আয় ২৮ হাজার ৭৩০ মার্কিন ডলার। ইন্দোনেশিয়ার ১২ হাজার ৫৬০ ডলার। বাংলাদেশের ৬ হাজার ৯৬০ ডলার।

যুক্তি না খাটলেও ওয়েবসাইট ঘেঁটে মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় মেট্রোরেলের ভাড়া আসলে কত, তা জেনে নেওয়া যায়।

ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তায় গত ৭ অক্টোবর সরকারি গণপরিবহনব্যবস্থার সমন্বিত ভাড়া কার্যকর হয়। এর মধ্যে মেট্রোরেল ও বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট ব্যবস্থা রয়েছে। সেখানে সর্বনিম্ন ভাড়া আড়াই হাজার রুপিয়া, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ১৬ টাকার মতো। আর কিলোমিটারপ্রতি ভাড়া ২৫০ রুপিয়া (১ টাকা ৬৪ পয়সা)। জাকার্তার বাস যে ঢাকার মতো জীর্ণ ও লক্কড়ঝক্কড় নয়, সেটা নিশ্চিত।

মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে মেট্রোরেলের ভাড়ার হিসাব তাদের ওয়েবসাইটেই করা যায় ‘ভাড়া ক্যালকুলেটর’ ব্যবহার করে। সেখানে দুটি স্টেশনের (গমবাক থেকে কাপুং বাটু) ভাড়া আসে ৫ রিঙ্গিত, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ১১৬ টাকার মতো। এই পথের দূরত্ব সাড়ে ৯ কিলোমিটারের কিছু কম। ফলে দেখা যাচ্ছে, ভাড়া সেখানে বাংলাদেশের চেয়ে বেশি। কিন্তু জাকার্তার মেট্রোরেলে প্রবীণ, শিক্ষার্থী ও প্রতিবন্ধীদের ভাড়ায় ৫০ শতাংশ ছাড় দেওয়া হয়।

কুয়ালালামপুরে ৫০ রিঙ্গিত ব্যয় করে পুরো মাস শহরজুড়ে চলা গণপরিবহন ব্যবহার করা যায়, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ১ হাজার ১৬৩ টাকা। এই গণপরিবহনের মধ্যে মেট্রোরেল, বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট ও বড় স্টেশনের সঙ্গে সংযোগকারী (ফিডার) বাস সেবা রয়েছে। ফলে মাসে বাংলাদেশি মুদ্রায় ১ হাজার ২০০ টাকার কম ব্যয়ে সারা মাস শহরজুড়ে চলাচল করা যায়।

কলকাতার মেট্রোরেলের সঙ্গে ঢাকার মেট্রোরেলের তুলনা না হলে দিল্লির মেট্রোরেলের ভাড়ার চিত্রটি দেখে নেওয়া যাক। ঢাকার মতো সেখানে তিন ফুটের বেশি উচ্চতার শিশুদের ভাড়া দিতে হয়। শিক্ষার্থীদের জন্য ছাড় নেই। তবে ভাড়া বেশ কম। প্রথম দুই কিলোমিটারের ভাড়া ১০ রুপি, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ১২ টাকার সমান। আর ২১ থেকে ৩২ কিলোমিটার ভ্রমণে ভাড়া ৫০ রুপি (৬২ টাকা)।

গরিবেরা চড়তে পারবে তো

রাজধানীবাসী মেট্রোরেল পেয়েছে। এটি এমন একটি গণপরিবহন, যেটি কখনো যানজটে পড়বে না, গরমে আরামদায়ক, দ্রুত গতির, নির্দিষ্ট সময়ে যাত্রার নিশ্চয়তা আছে। সরকারের যতগুলো অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প আছে, তার মধ্যে মেট্রোরেল উপযোগিতার দিক দিয়ে শীর্ষস্থানীয়, এতে কোনো সন্দেহ নেই। স্বস্তির এই গণপরিবহনে অস্বস্তি শুধু ভাড়া।

ঢাকায় যাঁরা গাড়িতে চড়েন, একা অটোরিকশায় চড়েন, মোটরসাইকেলে শরিকি যাত্রায় (রাইডশেয়ারিং) গন্তব্যে যান, তাঁদের জন্য মেট্রোরেল সাশ্রয়ী। কিন্তু এই শহরে বেশির ভাগ মানুষ বাসযাত্রী। জাপানের উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা জাইকার সমীক্ষা অনুযায়ী, রাজধানীর মানুষের ৬৭ শতাংশই বাস ও মিনিবাসে চলাচল করেন। বাসে বাসে বাড়তি ভাড়া নিয়ে নিয়মিত বচসা, মারামারি হয়। কারণ, দুই টাকা, পাঁচ টাকাও তাঁদের কাছে অনেক কিছু। তাঁদের পক্ষে মেট্রোরেল আসলে বিলাসিতা।

আগারগাঁও থেকে আসার পথে গত ২৭ ডিসেম্বর দেখেছিলাম, মেট্রোরেলের পিলারে উদ্বোধনের সাইনবোর্ড সাঁটানো। তাতে লেখা, ‘মেট্রোরেল ধনী-গরিব সবার পরিবহন’। প্রশ্নটা হলো, গরিবেরা এত ভাড়া দিয়ে মেট্রোরেলে ভ্রমণ করতে পারবে কি?