বিলসের প্রতিবেদন
কর্মক্ষেত্রে শ্রমিক নিহতের ৪৮ ভাগই পরিবহন খাতে
২০২২ সালে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনা, নির্যাতনসহ নানা কারণে ১ হাজার ৩৪ শ্রমিক নিহত হন। আহত হন ১ হাজার ৩৭।
কর্মক্ষেত্রে গত বছর ১ হাজার ৩৪ শ্রমিক নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে কেবল পরিবহন খাতে নিহত হয়েছেন ৪৯৯, যা মোট নিহত শ্রমিকের ৪৮ ভাগ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে নির্মাণ খাতে।
আজ সোমবার প্রকাশিত ‘বাংলাদেশের শ্রম ও কর্মক্ষেত্র পরিস্থিতি বিষয়ে সংবাদপত্রভিত্তিক বিলস জরিপে’ এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। সংবাদপত্রে প্রকাশিত সংবাদের ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ (বিলস) এ প্রতিবেদন তৈরি করে। প্রতিবেদনে দুর্ঘটনা, নির্যাতন, শ্রম অসন্তোষ ও সংশ্লিষ্ট বিষয়াবলির চিত্র তুলে ধরা হয়। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালের তুলনায় গত বছর শ্রমিক মৃত্যু দুই ভাগ কমেছে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, নির্যাতনের শিকার হয়ে মারা গেছেন ১৩৫ জন শ্রমিক। খাতভিত্তিক তৃতীয় সর্বোচ্চ ১১২ শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে কৃষি খাতে। অন্যান্য খাতের মধ্যে দিনমজুর ৪৬, কনটেইনার ডিপোতে ৪৪, মৎস্য খাতে ৪৩, বৈদ্যুতিক শ্রমিক ২২, নৌপরিবহনে ১৫, হোটেল-রেস্তোরাঁয় ১২, ইটভাটায় ১০, জাহাজভাঙা শিল্পে ৭ এবং রাসায়নিক কারখানায় ৬ শ্রমিক নিহত হয়েছেন। অন্যান্য খাতে নিহত হয়েছেন আরও ১০০ শ্রমিক।
বিলসের প্রতিবেদনে বলা হয়, সড়ক দুর্ঘটনা, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট, বজ্রপাত, অগ্নিকাণ্ড, ঘূর্ণিঝড়ে সমুদ্রে ট্রলারডুবি, পড়ন্ত বস্তুর আঘাত, মাথায় কিছু পড়ে, বিষাক্ত গ্যাস, নৌ দুর্ঘটনা, দেয়াল বা ছাদ ধস, সিলিন্ডার বিস্ফোরণ ইত্যাদি দুর্ঘটনায় কর্মক্ষেত্রে গত বছর আরও ১ হাজার ৩৭ শ্রমিক আহত হয়েছেন। এঁদের মধ্যে পুরুষ ৯৬৪ ও নারী ৭৩ শ্রমিক রয়েছেন।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, কর্মক্ষেত্রে শারীরিক নির্যাতন, ধর্ষণ, ছুরিকাঘাত, খুন, রহস্যজনক মৃত্যু, অপহরণ ও মারধরের মতো নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৩৩৮ জন শ্রমিক। এর মধ্যে পুরুষ ২৯৪ এবং নারী শ্রমিক ৪৪। এঁদের মধ্যে ১৩৫ জন নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন ১৫৫ জন। ৩৪ জন নিখোঁজ ছাড়াও একজনের ক্ষেত্রে আত্মহত্যার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
বিলস জানায়, অপহরণের পর ১৩ শ্রমিককে পরে পুলিশ উদ্ধার করেছে। এ ছাড়া ৩৩ জন গণমাধ্যমকর্মী নির্যাতনের শিকার হন। এর মধ্যে একজন নিহত ও ৩২ জন আহত হন।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, কর্মক্ষেত্রের বাইরে ৩৩০ শ্রমিক নির্যাতনের শিকার হন। গণমাধ্যমে এসেছে, ওই শ্রমিকদের মধ্যে ২১৩ জন নিহত, ৭৪ জন আহত, একজন নিখোঁজ এবং ৪২ জন আত্মহত্যা করেছেন। কর্মক্ষেত্রের বাইরে সবচেয়ে বেশি, তৈরি পোশাক কারখানার ৮৫ শ্রমিক নির্যাতনের শিকার হন। এর মধ্যে শারীরিক নির্যাতন, ধর্ষণ, দলবদ্ধ ধর্ষণ, যৌন হয়রানি, ছুরিকাঘাত, খুন, রহস্যজনক মৃত্যু, অপহরণ, মারধরের ঘটনা রয়েছে।
গত বছর বিভিন্ন খাতে সব মিলিয়ে ১৯৬টি শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনা ঘটেছে। সবচেয়ে বেশি ৭৯ ভাগ বা ১১৫টি শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনা ঘটে তৈরি পোশাক খাতে। এর মধ্যে বকেয়া বেতনের দাবিতে ৮৯টি অসন্তোষের ঘটনা ঘটে। আন্দোলনে ১০ শ্রমিক আহত হন, যাঁদের মধ্যে ৭ পুরুষ এবং ৩ নারী শ্রমিক ছিলেন।