সিলেটে নিয়মবহির্ভূতভাবে বাণিজ্য মেলা আয়োজনের অভিযোগ ব্যবসায়ী নেতাদের

সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির উদ্যোগে সংবাদ সম্মেলন হয়। আজ দুপুর ১২টায় নগরের জেল রোড এলাকায় চেম্বার ভবনেছবি: প্রথম আলো

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মেলা পরিপত্র উপেক্ষা করে নিয়মবহির্ভূতভাবে সিলেটে একটি সংগঠনকে বাণিজ্য মেলা আয়োজনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির নেতারা। অথচ চেম্বার কর্তৃপক্ষ একাধিকবার জেলা প্রশাসনে আবেদন করেও মেলা আয়োজনের জন্য মাঠ বরাদ্দ পায়নি। আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় নগরের জেলরোড এলাকায় চেম্বার ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন থেকে এমন অভিযোগ করা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন চেম্বারের সভাপতি তাহমিন আহমদ। এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে এসব অভিযোগ অস্বীকার করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে চেম্বারের ব্যবসায়ী নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় লিখিত বক্তব্যে তাহমিন আহমদ বলেন, ১৯৬৬ সালে চেম্বার প্রতিষ্ঠার পর ১৪টি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা সফলভাবে সংগঠনটি আয়োজন করেছে। কিন্তু কয়েক বছর ধরে স্থানীয় প্রশাসনের অসহযোগিতা ও শহরে উপযোগী মাঠ বরাদ্দ না পাওয়ায় আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা আয়োজনের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা সম্ভব হয়নি।

তাহমিন আহমদ বলেন, শাহজালাল উপশহর এলাকার আই ব্লক খেলার মাঠে একটি সংগঠনের উদ্যোগে বাণিজ্য মেলা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। অথচ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ‘মেলা পরিপত্র-২০২২’ অনুযায়ী বিভাগীয় শহরে বাণিজ্য মেলা আয়োজনের আগে সংশ্লিষ্ট জেলার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি বরাবর ৫০০ টাকা ফি জমাসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করতে হয়। এরপর জেলা প্রশাসক চেম্বারের সুপারিশ ও স্থানীয় পুলিশ বিভাগের মতামত নিয়ে মেলা আয়োজনের অনুমতি দেন। কিন্তু আই ব্লকের মাঠে অনুষ্ঠেয় মেলায় আয়োজনে চেম্বারের সুপারিশ নেওয়া হয়নি।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করলে সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, সিলেট মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্সের উদ্যোগে উপশহরে বাণিজ্য মেলা হচ্ছে। আয়োজকেরা নিবন্ধিত ব্যবসায়িক সংগঠন। ফলে আরেকটা চেম্বারের অনুমতির বিষয়টি এখানে প্রযোজ্য নয়। অন্যদিকে খেলার মাঠে বাণিজ্য মেলা না করার বিষয়ে ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞা আছে। চেম্বার কর্তৃপক্ষ ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন আনলে অবশ্যই মাঠ বরাদ্দ দেওয়া হবে। তাই বাণিজ্য মেলা আয়োজনে স্থানীয় প্রশাসন অসহযোগিতা করছে, এমনটা বলা ঠিক হবে না।

লিখিত বক্তব্যে তাহমিন আহমদ অভিযোগ করেন, সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা এবং বাংলাদেশ-ভারত বায়ার-সেলার মিট আয়োজনের জন্য সিলেট সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা মাঠ কিংবা নগরের শাহি ঈদগাহ এলাকার শেখ রাসেল স্টেডিয়াম বরাদ্দ চেয়ে জেলা প্রশাসক বরাবর গত সেপ্টেম্বর মাসে আবেদন করেছিল। পুলিশ প্রশাসন শেখ রাসেল স্টেডিয়ামে মেলা আয়োজনের ব্যাপারে সম্মতিসূচক মতামত দিয়েছে। তবে জেলা প্রশাসন এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি। এরপর আরও তিন দফা জেলা প্রশাসক বরাবরে মাঠ বরাদ্দ চেয়ে আবেদন করা হয়। কিন্তু জেলা প্রশাসক এ মাঠ বরাদ্দ দেননি। এরই মধ্যে একটি সংগঠনকে ঠিকই নগরের শাহজালাল উপশহর এলাকার আই ব্লকে বাণিজ্য মেলা আয়োজনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। সিলেটে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠনের সঙ্গে জেলা প্রশাসনের এমন অসহযোগিতামূলক আচরণ দুঃখজনক।

সিলেট চেম্বারের সভাপতি তাহমিন আহমদ দাবি করেন, সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিকল্পনা অনুযায়ী সিলেট আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা ও বাংলাদেশ-ভারত বায়ার-সেলার মিট একসঙ্গে আয়োজন করা গেলে এখানে ভারতের সেভেন সিস্টারের উদ্যোক্তারা তাঁদের পণ্যসামগ্রী নিয়ে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। এতে স্থানীয় উদ্যোক্তারাও তাঁদের উৎপাদিত পণ্য ভারতীয় আমদানিকারকদের কাছে প্রদর্শন করতে পারবেন। এতে রপ্তানি বৃদ্ধির পাশাপাশি ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ব্যবসায়িক সম্পর্ক জোরদার হবে।