চবিতে যৌন নিপীড়নের ঘটনায় গ্রেপ্তার আসামি সাইফুল কারাগারে

সাইফুল আলম
ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগের মামলায় গ্রেপ্তার হাটহাজারী সরকারি কলেজের সাবেক ছাত্র সাইফুল আলমকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। চট্টগ্রামের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফারজানা ইয়াসমিন আজ রোববার এ আদেশ দেন। গতকাল শনিবার বিকেলে নগরের বহদ্দারহাট এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। এ নিয়ে এ ঘটনায় পাঁচজন গ্রেপ্তার হয়েছেন।

একই আদালতে এ মামলায় গ্রেপ্তার ছাত্রলীগের দুই কর্মীসহ পাঁচ আসামির সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয় আজ। আদালত আগামী মঙ্গলবার শুনানির জন্য দিন ধার্য করেন।

সাইফুল আলম ছাড়া বাকি চার আসামি হলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মোহাম্মদ আজিম, নৃবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র নুরুল আবছার, হাটহাজারী সরকারি কলেজের সমাজবিজ্ঞানের প্রথম বর্ষের ছাত্র নুর হোসেন ও স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের মাসুদ রানা। তাঁদের মধ্যে আজিম ও আবছার ছাত্রলীগের কর্মী। তাঁদের দুজনকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে।

এর আগে গত শুক্রবার ও গতকাল শনিবার তাঁদের নগর ও জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। সাইফুল ছাড়া বাকি চার আসামিকে গতকাল কারাগারে পাঠান আদালত।

হাটহাজারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রুহুল আমিন প্রথম আলোকে বলেন, পাঁচ আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে আদালতে সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়। আদালত শুনানির জন্য মঙ্গলবার দিন ধার্য করেছেন। জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ পেলে আসামিরা কেন এ ঘটনা ঘটিয়েছেন, তা বের করার চেষ্টা করা হবে।

১৭ জুলাই রাত সাড়ে নয়টায় ক্যাম্পাসে পাঁচ তরুণের হাতে এক ছাত্রী যৌন নিপীড়ন ও মারধরের শিকার হন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেন এলাকায় তাঁরা ওই ছাত্রীকে বেঁধে বিবস্ত্র করে মুঠোফোনে ভিডিও ধারণ করেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে থাকা এক বন্ধু প্রতিবাদ করলে তাঁকেও মারধর করা হয়। এ ঘটনায় গত মঙ্গলবার প্রক্টরের কাছে অভিযোগ দেন ওই ছাত্রী। এর এক দিন পর বুধবার মামলা করেন হাটহাজারী থানায়।

ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর বুধবার থেকেই উত্তাল হয়ে পড়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। রাতেই ছাত্রীরা হল থেকে বের হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন। ওই দিন রাত একটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার এস এম মনিরুল হাসান ঘটনাস্থলে গিয়ে চার কার্যদিবসের মধ্যে জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার ঘোষণা দেন। অন্যথায় প্রক্টরিয়াল বডি পদত্যাগ করবে বলে জানান তিনি।

নগরের চান্দগাঁও ক্যাম্পে গতকাল সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন র‍্যাব-৭ অধিনায়ক লে. কর্নেল এম এ ইউসুফ। গ্রেপ্তার আজিমকে ‘মূল অভিযুক্ত’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ঘটনার পর তিনি রাউজানে তাঁর ফুফুর বাড়িতে আত্মগোপন করেছিলেন। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এ ঘটনায় মোট ছয়জনের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। তাঁদের কাছ থেকে দুটি মোটরসাইকেল ও তিনটি মুঠোফোন উদ্ধার করা হয়েছে।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে র‍্যাব অধিনায়ক আরও বলেন, ঘটনাটি ‘পূর্বপরিকল্পিত’ ছিল না।

গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা রাতের বেলায় ক্যাম্পাসে আড্ডা দিতেন। দুটি মোটরসাইকেলে করে তাঁরা ওই পথে যাচ্ছিলেন। সে সময় ভুক্তভোগী ছাত্রীকে তাঁর এক বন্ধুসহ ওই এলাকায় দেখতে পেয়ে জেরা করতে থাকেন। এ সময় ওই ছাত্রী তাঁদের বাধা দেওয়ায় তাঁরা মারধর শুরু করেন এবং তাঁর বন্ধুকে বেঁধে রাখেন। ওই ছাত্রীকে শ্লীলতাহানি করে আজিম নিজের, ওই ছাত্রীর এবং ছাত্রীর বন্ধুর মুঠোফোনসহ মোট তিনটি মুঠোফোনে অশ্লীল ভিডিও ধারণ করেন। এ সময় তাঁদের একজন ওই ছাত্রীকে শারীরিক সম্পর্ক করতে চাপ দেন এবং ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেন। প্রায় ঘণ্টাখানেক আটকে রেখে তাঁরা ওই ছাত্রী ও তাঁর বন্ধুর কাছ থেকে নগদ ১৩ হাজার ৭০০ টাকা ও মুঠোফোন নিয়ে যান।