সেমিনারে বক্তারা
নিয়মিত টিকাদান ও অ্যান্টিবায়োটিকের যৌক্তিক ব্যবহারে নিউমোনিয়ায় শিশুমৃত্যু কমানো সম্ভব
শিশুদের নিউমোনিয়া প্রতিরোধযোগ্য ব্যাধি হলেও দেশে প্রতিবছর পাঁচ বছরের কম বয়সী ২৪ হাজার শিশু নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। তবে নিয়মিত টিকা দেওয়া, প্রথম ছয় মাস শুধু মাতৃদুগ্ধ পান করানো, অ্যান্টিবায়োটিকের যৌক্তিক ব্যবহার ও সঠিক স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ নিশ্চিত করা গেলে নিউমোনিয়াজনিত শিশুমৃত্যু হার কমানো সম্ভব।
আজ বুধবার ‘বিশ্ব নিউমোনিয়া দিবস’ উপলক্ষে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে আয়োজিত বৈজ্ঞানিক সেমিনারে বক্তারা এ কথাগুলো বলেন। বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউট, চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশন (সিএইচআরএফ) এবং বাংলাদেশ নিওনেটাল ফোরাম (বিএনএফ) যৌথভাবে এই সেমিনারের আয়োজন করে।
নিউমোনিয়া রোগের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রতিবছর ১২ নভেম্বর পালিত হয় ‘বিশ্ব নিউমোনিয়া দিবস’। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সংগতি রেখে বাংলাদেশেও নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি পালন করা হয়।
শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী, হাসপাতালে মোট ভর্তি রোগীর প্রায় ২০ শতাংশই নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশু। নিউমোনিয়া প্রতিরোধযোগ্য ব্যাধি হলেও সারা বিশ্বে ৩৯ সেকেন্ডে একজন শিশু নিউমোনিয়ায় প্রাণ হারায়।
সেমিনারে বক্তারা বলেন, সারা বিশ্বে প্রতিবছর পাঁচ বছরের নিচে ৭ লাখ ৪০ হাজারের বেশি শিশু নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়। বাংলাদেশে প্রতিবছর ২৪ হাজার শিশু নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। শিশুদের নিয়মিত টিকা দেওয়া, প্রথম ছয় মাস শুধু মাতৃদুগ্ধ পান করানো, অ্যান্টিবায়োটিকের যৌক্তিক ব্যবহার, সঠিক স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ, ধোঁয়ামুক্ত ও নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করার মাধ্যমে নিউমোনিয়াজনিত শিশুমৃত্যু হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো সম্ভব।
সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের ব্যবস্থাপনা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে এম আজিজুল হক বলেন, প্রতি মাসে শিশু হাসপাতালে বিভিন্ন রোগে অন্তত ২০০ শিশু মারা যায়। এর মধ্যে ২৫-৩০ শতাংশ শিশু থাকে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত। তবে আগের চেয়ে এই মৃত্যু কিছুটা কমেছে। এটা আরও কীভাবে কমানো যায়, সে বিষয়ে চিন্তা করতে হবে।
হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক মাহবুবুল হক বলেন, শিশুদের নিউমোনিয়া প্রতিরোধ গুরুত্বপূর্ণ। নিউমোনিয়া প্রতিরোধে শিশুদের টিকা দিতে হবে। অ্যান্টিবায়োটিক ছাড়াও বাচ্চাকে চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করা যায়। সেভাবেই চিকিৎসা দিতে তিনি চিকিৎসকদের অনুরোধ করেন।
শিশু হাসপাতালের রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, টিকাদান, পুষ্টি ও স্বাস্থ্যসেবার উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সত্ত্বেও এখনো পাঁচ বছরের নিচে শিশুমৃত্যুর অন্যতম কারণ নিউমোনিয়া। গ্রামে রোগ শনাক্তকরণ ও সীমিত চিকিৎসার কারণে বহু শিশুর মৃত্যু প্রতিরোধ করা সম্ভব হয় না।
সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ পেডিয়াট্রিক পালমোনোলজি ফোরামের প্রধান পরামর্শক অধ্যাপক এ আর এম লুৎফুল কবির, বাংলাদেশ পেডিয়াট্রিক পালমোনোলজি ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক মো. আতিয়ার রহমান, বাংলাদেশ নিওনেটাল ফোরামের মহাসচিব মো. মজিবুর রহমান, মহাসচিব এবং বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের সদস্য পরিচালনা বোর্ডের সদস্য সহযোগী অধ্যাপক রওশন জাহান।