ঘূর্ণিঝড় মোখা: উপকূলে টেলিযোগাযোগ সচল রাখতে নির্দেশনা

দেশের দক্ষিণ উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখা। ঝড়ের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে টেলিযোগাযোগ খাতের সেবায় বিঘ্ন ঘটে। ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলে মোবাইল নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট সেবা বন্ধ হয়ে যায়। তাই এসব সেবা সচল রাখার জন্য আগাম প্রস্তুতি নিতে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ।

১১ মে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ সব ধরনের টেলিফোন ও ইন্টারনেট সেবা সচল রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট সব বিভাগকে পূর্বপ্রস্তুতির নির্দেশনা দিয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি), বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল), বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড, বাংলাদেশ সাবমেরিন কেব্‌ল কোম্পানি লিমিটেড ও টেলিটক নিজ নিজ ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

এদিকে বিটিআরসি এক নির্দেশনায় বলেছে, উপকূলীয় অঞ্চলসহ আশপাশের এলাকায় নিরবচ্ছিন্ন টেলিযোগাযোগ সেবা নিশ্চিত করতে টেলিকম অপারেটরদের নিজস্ব নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা অটুট রাখতে পর্যাপ্ত পাওয়ার ব্যাকআপ (ব্যাটারি, ডিজেল জেনারেটর, পোর্টেবল জেনারেটর ইত্যাদি) ব্যবস্থা গ্রহণসহ প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে।

দুর্যোগকালীন ও দুর্যোগ-পরবর্তী সময়ে যাতে সব ধরনের টেলিযোগাযোগ সেবা অব্যাহত রাখতে এবং পরিস্থিতি সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণের জন্য প্রতিটি টেলিযোগাযোগ প্রতিষ্ঠান প্রধান কার্যালয়ে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ চালু করবে।

বিটিআরসি ১০ সদস্যের একটি ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিম গঠন করেছে। তারা ঘূর্ণিঝড়কবলিত এলাকাগুলোতে টেলিযোগাযোগ সেবা ব্যবস্থা সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণসহ নিরবচ্ছিন্ন সেবা নিশ্চিতের জন্য টেলিকম অপারেটরদের সঙ্গে সমন্বয় সাধন করে ব্যবস্থা নেবে। পাশাপাশি এই টিম সংশ্লিষ্ট জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখবে। এ ছাড়া তিন সদস্যের সমন্বয়ে বিটিআরসি একটি নিয়ন্ত্রণকক্ষও চালু করেছে। নিয়ন্ত্রণকক্ষের নম্বর দুটি হচ্ছে ০১৫৫২২০২৮৫৪ ও ০১৫৫২২০২৮৮৬।

এদিকে মোখা মোকাবিলায় বিটিসিএলও নিয়ন্ত্রণকক্ষ খুলেছে বলে জানিয়েছে। টেলিটক জানিয়েছে, সিস্টেম অপারেশনস, ঢাকা বিভাগের আওতাধীন ইউনিটগুলোর টেলিটকের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে। টেলিটকের ওয়েবসাইটে ইমার্জেন্সি সাপোর্ট কর্নার তৈরির জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। একটি কেন্দ্রীয় ইমার্জেন্সি নম্বর ঘোষণা করা হয়েছে।

টেলিটকের কোর সাইট ও হাব সাইটের বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিতে সব জেনারেটরের যান্ত্রিক ত্রুটি দূর করে পর্যাপ্ত জ্বালানি সরবরাহের পাশাপাশি বাণিজ্যিক বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। পোর্টেবল জেনারেটর প্রস্তুত রাখার কথাও জানিয়েছে তারা। এ ছাড়া একটি রেসপন্স টিম গঠন করেছে টেলিটক।

নিজেদের সাইটগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে বাংলালিংক। অপারেটরটির চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স কর্মকর্তা তাইমুর রহমান জানান,  গ্রাহকদের এই পরিস্থিতি সম্পর্কে আগে থেকে সচেতন করার জন্য খুদে বার্তা এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে। পাশাপাশি মুঠোফোনে রিচার্জ সহজ করার জন্য বিশেষ ব্যবস্থার কথাও জানিয়েছে বাংলালিংক।

এটুআই জানিয়েছে, জাতীয় হেল্পলাইন ৩৩৩-এ ফোন করে ঘূর্ণিঝড় মোখাসংক্রান্ত সব তথ্য জানা যাবে এবং যেকোনো প্রয়োজনে ফোন করা যাবে।  

ঘূর্ণিঝড় মোখা নিয়ে সর্বশেষ বিজ্ঞপ্তিতে আবহাওয়া অধিদপ্তর কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরে ১০ নম্বর মহাবিপৎসংকেত দেখাতে বলেছে। এ ছাড়া চট্টগ্রাম ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৮ নম্বর মহাবিপৎসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। আর মোংলা সমুদ্রবন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে হবে।

আবহাওয়া অফিস বলেছে, ঘূর্ণিঝড়টি আরও উত্তর-উত্তর পূর্ব দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হয়ে কাল রোববার সকাল ছয়টা থেকে সন্ধ্যা ছয়টার মধ্যে কক্সবাজার-উত্তর মিয়ানমার উপকূল অতিক্রম করতে পারে। আজ রাত থেকে চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগের উপকূলীয় এলাকায় অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রভাগের প্রভাব শুরু হতে পারে।