আনন্দ–আয়োজনে উচ্ছ্বাসে সারা বেলা

রাজধানীর লালমাটিয়ায় অবস্থিত ইংলিশ মিডিয়াম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান উইটন ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় এক হাজারের বেশি শিক্ষার্থী মেতেছিল ক্রীড়া নৈপুণ্য দেখানোর উৎসবে।

উইটন ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় শিক্ষার্থীরা। প্রতিযোগিতায় জিততে খুদে শিক্ষার্থীদের দৌড়ছবি: উইটন ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের সৌজন্যে

ভোরের আলো ফুটলেও তখন সূর্যের আলোর দেখা মেলেনি। হিম হিম ঠান্ডার মধ্যে কেউ এসেছে বাবার হাত ধরে, কেউ এসেছে মা–বাবাকে সঙ্গে নিয়ে। দাদা বা বড় ভাইবোনকে নিয়েও এসেছে অনেকে। সবারই গন্তব্য ছিল রাজধানীর ধানমন্ডির সুলতানা কামাল মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্স।

ঢাকার লালমাটিয়ায় অবস্থিত ইংলিশ মিডিয়াম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান উইটন ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ছিল ২০ ও ২১ জানুয়ারি। এই দুই দিন এক হাজারের বেশি শিক্ষার্থী মেতেছিল ক্রীড়া নৈপুণ্য দেখানোর উৎসবে। প্রথম দিন ছেলেশিক্ষার্থী ও দ্বিতীয় দিন মেয়েশিক্ষার্থীরা আলাদাভাবে অংশ নেয় এই উৎসবে।

প্রতিযোগিতা নয়, যেন উৎসব
মাঠ তখনো শীতের শিশিরভেজা। এরই মধ্যে রকমারি খেলাধুলায় মেতে ওঠে বিভিন্ন বয়সী শিক্ষার্থীরা। মাঠের একপাশে একদল শিক্ষার্থীর মধ্যে চলছে মোরগ লড়াই। অন্য প্রান্তে ১৫০ মিটার দৌড়ের প্রস্তুতি। খরগোশ–দৌড় শেষ করে বিজয়ের আনন্দে মাতোয়ারা খুদে শিক্ষার্থীরা। মাঠের এক কোণে আয়োজিত উচ্চ লাফ প্রতিযোগিতায় মেতেছে আরেকটি দল।

আয়োজক সূত্রে জানা গেছে, দুই দিনব্যাপী বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার প্রথম দিন ছেলেরা ১০২টি ও দ্বিতীয় দিন মেয়েরা ৭২টি মজার প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। এর মধ্যে ছিল ৮০, ১৫০ ও ২০০ মিটার দৌড়, মোরগ লড়াই, ঝুড়িতে করে বল সংগ্রহ, বাধা অতিক্রম করে দৌড়, খরগোশ–দৌড়, দৌড়ে গিয়ে ফেলুন ফাটানো, চকলেট–দৌড়, উচ্চ ও দীর্ঘ লাফ, বল নিক্ষেপ, ভারসাম্য–দৌড়, গণিত–দৌড় ইত্যাদি। বিজয়ীদের জন্য ছিল নানা পুরস্কার।

প্রথম, দ্বিতীয় বা তৃতীয় হওয়াটা ছিল শুধুই নিয়ম রক্ষা; খেলায় অংশগ্রহণই ছিল মূল। বেশির ভাগ শিক্ষার্থীই প্রতিযোগিতায় কোনো স্থান অর্জন করতে না পারলেও ছিল খুশি। তাদের চোখেমুখে ছিল উচ্ছ্বাসের ঝিলিক।

‘এখানে এসে আমার অনেক ভালো লাগছে…।’ জানতে চাইলে ভাঙা ভাঙা উচ্চারণে এভাবেই নিজের অনুভূতির কথা জানায় প্লে-শ্রেণির শিক্ষার্থী মোহাম্মাদ ইবনে আরাফাত।

মাঠের মাঝখানে চকলেট–দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে গিয়ে চকলেট খেয়ে ফেলে নার্সারিপড়ুয়া নাসের আবরার মাসুদ। নাসের বলল, ‘ চকলেট খেতে আমার খুব ভালো লাগে। তাই আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চকলেট খেয়ে ফেলেছি।’

ক্রীড়া প্রতিযোগিতার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক দুই অধিনায়ক তামিম ইকবাল, মোহাম্মদ আশরাফুলসহ অতিথিরা
ছবি: উইটন ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের সৌজন্যে

পাঠ্যবইয়ের বাইরে...

বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সূর্যের হাসিরও দেখা মেলে। আয়োজনের দুই দিনই সকাল থেকেই রোদের ওম গায়ে লাগিয়ে চলতে থাকে বিভিন্ন খেলা। আইনজীবী মো. মামুন তাঁর দুই সন্তান কেজি শ্রেণিতে পড়ুয়া ইসা আহমেদ এবং গ্রেড টুতে পড়ুয়া মুসা মোহাম্মদকে নিয়ে এসেছেন। তিনি বললেন, ‘স্বাভাবিক কারণেই ঢাকার স্কুলগুলোয় মাঠের অভাব। ফলে ছেলেমেয়েরা খোলা মাঠে এমন আয়োজনের সুযোগ খুব কম পায়। তাই শিক্ষার্থীদের এই আনন্দ–উচ্ছ্বাসে থাকতে পেরে অভিভাবক হিসেবে আমিও আনন্দিত।’

সাফিন আহমেদ মোরগ লড়াই প্রতিযোগিতায় তৃতীয় হয়েছে। সন্তানের এমন সাফল্যে খুশি মা সাহিনা আক্তার। তিনি বললেন, ‘পাঠ্যবইয়ের বাইরে এমন প্রতিযোগিতা সন্তানকে আরও বেশি জয়ী হওয়ার মানসিকতা তৈরি করে। তাই এমন আয়োজন নিয়মিত হওয়া দরকার।’

মানসিক বিকাশের জন্য খেলাধুলা

উইটন ইন্টারন্যাশনাল স্কুল কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের শুধু পাঠ্যবইয়ের মধ্যে সীমাবন্ধ রাখে না। প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ আবদুল্লাহ জামান বলেন, ‘একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যত ধরনের সহশিক্ষা কার্যক্রম রাখা যায়, আমরা সব কটিই রাখার ব্যবস্থা করেছি। বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার পাশাপাশি আমরা নিয়মিত ফুটবল, ক্রিকেট ও ভলিবল খেলা পরিচালনা করে থাকি।’

হাঁড়ি ভাঙতেই হবে! চোখ বেঁধে হাঁড়িভাঙা প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় শিক্ষার্থীরা
ছবি: উইটন ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের সৌজন্যে

অধ্যক্ষ আরও বলেন, ১৪ বছর ধরে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের প্রতিনিধিত্ব করা ও সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুলকে উইটন ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের ক্রিকেট কোচ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

আবদুল্লাহ জামান বলেন, ‘আমাদের প্রতিষ্ঠানে সায়েন্স ফেয়ার, ম্যাথ অলিম্পিয়াড, সায়েন্স অলিম্পিয়াড, স্পেলিং বি, বিতর্কসহ নানাবিধ সৃজনশীল কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকি।’

প্রতিযোগিতার ভেন্যুতে কথা হয় ক্যামব্রিজ অ্যাসেসমেন্ট ইন্টারন্যাশনাল এডুকেশনের বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার শাহীন রেজার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ঢাকা শহরে স্কুলগুলোয় চাইলেও নিজস্ব মাঠ রাখা সম্ভব হয় না। তবে উইটন ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের মতো শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার পাশাপাশি মানসিক বিকাশে অবশ্যই নিয়মিত খেলাধুলার ব্যবস্থা রাখা উচিত। তাহলেই আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম মানবিক মানুষ হিসেবে গড়ে উঠবে।’

ঘোষণা দেওয়া হলো কারা বিজয়ী! এরপর গলায় পরিয়ে দেওয়া হয় পদক
ছবি: উইটন ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের সৌজন্যে

খুদে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তামিম, আশরাফুল ও জাহানারা

আয়োজনের প্রথম দিন ২০ জানুয়ারি খুদে শিক্ষার্থীদের উৎসাহ দিতে মাঠে উপস্থিত থেকে বাংলাদেশের জাতীয় ও উইটন ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের পতাকা উত্তোলন করেন বাংলাদেশে ক্রিকেট দলের সাবেক দুই অধিনায়ক তামিম ইকবাল খান ও মোহাম্মদ আশরাফুল। দ্বিতীয় দিন ২১ জানুয়ারি মোহাম্মদ আশরাফুলের সঙ্গে ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় নারী ক্রিকেট দলের সদস্য জাহানারা আলম।

খুদে শিক্ষার্থীদের উৎসাহ দিয়ে তামিম ইকবাল বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের জন্য ক্রীড়া আয়োজনগুলো খুবই কাঙ্ক্ষিত। সবাই এ দিনগুলোর জন্য অপেক্ষা করে। এমন দিনগুলোয় বন্ধুরা মিলে খেলায়–আনন্দে সময় কাটানো উচিত। তাহলেই একজন শিক্ষার্থী সত্যিকারের ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে উঠবে।’

মোহাম্মদ আশরাফুল উইটন ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের ক্রিকেট কোচ হিসেবে শিক্ষার্থীদের আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যেতে চান। এর চ্যালেঞ্জ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘স্কুলে যত বেশি খেলাধুলার আয়োজন করবে, শিক্ষার্থীদের দক্ষতা তত বেশি বৃদ্ধি পাবে।’

জাহানারা আলম বলেন, ‘খেলাধুলা একজন শিক্ষার্থীর শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ঘটাতে সাহায্য করে। তাই অভিভাবকদের উচিত খেলাধুলার সুযোগ আছে—এমন প্রতিষ্ঠানেই সন্তানকে পড়াশোনার সুযোগ করে দেওয়া।’

উইটন ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল কাদেরসহ অন্য পরিচালকরা শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে এমন আয়োজন উপভোগ করেন।