দলগুলোর পরস্পরবিরোধী অবস্থান সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশকে অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিচ্ছে

রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের নেতারা
ছবি: প্রথম আলো

জাতীয় নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলগুলোর পরস্পরবিরোধী অবস্থান সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশকে জটিল ও অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিচ্ছে, যা পূর্ববর্তী সময়ের তিক্ত অভিজ্ঞতাকে তুলে ধরছে। এই পরিস্থিতিতে গণতন্ত্রকে সমুন্নত রাখতে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিতের পক্ষে অবস্থান জানিয়েছে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ। আজ মঙ্গলবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের নেতারা এই অবস্থান জানান।

‘বর্তমান পরিস্থিতি, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন’ বিষয়ে এই সংবাদ সম্মেলন থেকে নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোকে নারীর অধিকার বিষয়ে আরও মনোযোগ দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। সেখানে জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনে সরাসরি নির্বাচনের দাবি পুনর্ব্যক্ত করেন মহিলা পরিষদের নেতারা।

এ ছাড়া রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনী ইশতেহারে নারীর আসনসংখ্যা বাড়ানো, নির্বাচনী এলাকা পুনর্নির্ধারণ এবং বেশি সংখ্যক নারীকে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি ও বাস্তবায়ন চায় মহিলা পরিষদ। পাশাপাশি নির্বাচনের আগে, নির্বাচনের সময়ে ও পরে নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ করে নিরাপত্তা নিশ্চিতের বিষয়টি নির্বাচনী ইশতেহারে যুক্ত করার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি দাবি জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম বলেন, আইনশৃঙ্খলার অভাব, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নারীর জীবনে নেতিবাচক চাপ সৃষ্টি করছে। নারীদের প্রতি রাজনৈতিক দলগুলোর মনোযোগের অভাব রয়েছে। অধিকার, মর্যাদা ও কাজ করার সুযোগ বাড়ানোর মাধ্যমে নারীকে সমতার জায়গায় নিয়ে আসতে হবে। নির্বাচনে এই বিষয়গুলো গুরুত্ব দিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য হতে হবে। বেশি সংখ্যক নারীকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পরিবেশ তৈরিতে অর্থের খেলা ও পেশিশক্তির মহড়া বন্ধ করতে হবে। তিনি আরও বলেন, যেকোনো পরিস্থিতিতে নারীকে সমস্যার মধ্যে পড়তে হয়। তাই নির্বাচনী সহিংসতা প্রতিরোধে ব্যবস্থা নিতে হবে।

মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বলেন, নারীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়কে একটি একক ও স্বাধীন মন্ত্রণালয় হিসেবে কাজ করতে হবে, এ দাবি মহিলা পরিষদের দীর্ঘ দিনের। নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে ও নারীর অধিকার সুরক্ষায় এই মন্ত্রণালয়ের বড় ভূমিকা পালন করার লক্ষ্য রয়েছে। তবে এখনো লক্ষ্য অনুসারে মন্ত্রণালয়কে কাজ করতে দেখা যাচ্ছে না।  

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন সংগঠনের আন্দোলন সম্পাদক রাবেয়া খাতুন। লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নির্বাচন কমিশন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করতে যাচ্ছে। নির্বাচন অনুষ্ঠানের আগে রাজনৈতিক দলগুলোর পরস্পরবিরোধী অবস্থান সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশকে জটিল ও অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিচ্ছে, যা পূর্ববর্তী সময়ের তিক্ত অভিজ্ঞতাকে উন্মোচন করছে। এই পরিস্থিতিতে গণতন্ত্রকে সমুন্নত রাখতে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন পদ্ধতির পক্ষে মহিলা পরিষদ। নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নকে টেকসই ও অগ্রগামী করতে অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারীর রাষ্ট্র পরিচালনায় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এ লক্ষ্যে জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা, আসনসংখ্যা এক-তৃতীয়াংশ বাড়ানো এবং এই ব্যবস্থা দুই-তিন মেয়াদ পর্যন্ত বহাল রাখা দরকার। নির্বাচনে অধিক হারে নারীদের মনোনয়ন দিতে হবে। অর্থ যাতে মনোনয়নের ক্ষেত্রে কোনো বাধা হয়ে না দাঁড়ায়, সেদিকে লক্ষ রাখা দরকার। সব রাজনৈতিক দলের সব পর্যায়ের কমিটিতে ৩৩ শতাংশ পদে নারীকে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টি পর্যবেক্ষণে রাখা দরকার। সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদী গোষ্ঠীর নারী অধিকারবিরোধী ও নারীবিদ্বেষী প্রচারণা বন্ধে পদক্ষেপ নিতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনটি সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের অ্যাডভোকেসি ও লবি পরিচালক জনা গোস্বামী।