চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
ছাত্রলীগের বাধা, প্রক্টর কার্যালয়ে অবস্থান নিলেন চবি চারুকলার শিক্ষার্থীরা
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনে ছাত্রলীগের বাধা পেয়ে শিক্ষার্থীরা প্রক্টর কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়েছেন। পাশাপাশি প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়ে তাঁদের ওপর হামলার বিচার চেয়েছেন তাঁরা।
শিক্ষার্থীরা আজ বৃহস্পতিবার বেলা দেড়টা থেকে প্রক্টর কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন। এ সময় তাঁরা ‘আমাদের ওপর হামলা কেন, প্রশাসন জবাব চাই,’ ‘অন্যায়–অবিচার মানি না, মানব না’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।
লিখিত অভিযোগে শিক্ষার্থীরা উল্লেখ করেন, আন্দোলনের ১০০তম দিনে তাঁরা শহীদ মিনারে শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান করছিলেন। এ সময় একদল লোক এসে তাঁদের আন্দোলনের ব্যানার–ফেস্টুন কেড়ে নেন৷ নারী শিক্ষার্থীসহ সবাইকে হেনস্তা করেন তাঁরা। কয়েকজন শিক্ষার্থীর ওপর হামলা চালালে তাঁরা আহত হন।
স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ শহীদ প্রথম আলোকে বলেন, ১০০ দিন ধরে আন্দোলনে তাঁরা কোনো ধরনের অসহিষ্ণুতা দেখাননি। আন্দোলনের কারণে চারুকলা ইনস্টিটিউট, হোস্টেল—সবকিছু ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে তাঁদের। এখন মূল ক্যাম্পাসে আন্দোলন করলেও তা বানচাল করার চেষ্টা করা হচ্ছে। সবকিছুতেই একটি মহল জড়িত। প্রশাসনকে এ বিষয়টি খোলাসা করতে হবে।
হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে সহকারী প্রক্টর শহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, উন্নয়নমূলক কাজের জন্য চারুকলা ইনস্টিটিউট এক মাসের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছে। তাঁদের (শিক্ষার্থীদের) আজকের কর্মসূচির বিষয়ে প্রক্টরিয়াল বডি অবহিত ছিল না। আজকে যে ঘটনা ঘটেছে, সেটি অপ্রীতিকর। তাঁরা এ ঘটনার লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন। দ্রুত তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের বাধা দেওয়ার সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে হেনস্তার শিকার হওয়ার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের দুই উপপক্ষের নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে। হেনস্তার শিকার সাংবাদিকেরা হলেন দৈনিক সমকালের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি মারজান আকতার ও আরটিভির ফটোসাংবাদিক এমরাউল কায়েস।
মারজান আকতার প্রথম আলোকে বলেন, ‘পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় ছাত্রলীগের ভার্সিটি এক্সপ্রেস ও বাংলার মুখের নেতা–কর্মীরা বাধা দেন। ঘটনার ভিডিও করতে নিষেধ করেন। একপর্যায়ে তাঁরা চারপাশ থেকে ঘিরে আমাকে ভিডিও ফুটেজ ডিলিট করতে বলেন। ডিলিট না করতে চাইলে তাঁরা আমাকে হুমকি দেন। পরে আমার ব্যাগ টান দেন।’
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ভার্সিটি এক্সপ্রেস উপপক্ষের নেতা ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি প্রদীপ চক্রবর্তী এবং বাংলার মুখ উপপক্ষের নেতা ও শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি আবু বকর তোহা। তাঁরা দুজনেই প্রথম আলোকে বলেন, এসব ঘটনায় ছাত্রলীগের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। যদি তাঁরা এ ধরনের কোনো প্রমাণ পান, তাহলে ব্যবস্থা নেবেন।
চবিতে চারুকলা বিভাগের যাত্রা শুরু হয় ১৯৭০ সালে। ২০১০ সালে নগরের সরকারি চারুকলা কলেজের সঙ্গে এক হয়ে গঠিত হয় চারুকলা ইনস্টিটিউট। চারুকলার অবস্থান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে নগরের মেহেদীবাগের বাদশা মিয়া সড়কে। বর্তমানে ইনস্টিটিউটে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩৫৩ জন।
শ্রেণিকক্ষে পলেস্তারা খসে পড়ার জেরে ২২ দফা দাবিতে চারুকলার শিক্ষার্থীরা গত বছরের ২ নভেম্বর ক্লাস বর্জনসহ অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেছিলেন। একপর্যায়ে চারুকলাকে নগর থেকে মূল ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে নিতে এক দফা দাবি দেন তাঁরা। প্রশাসন দাবি না মানায় ১৬ নভেম্বর চারুকলার মূল ফটকে শিক্ষার্থীরা তালা ঝুলিয়ে দেন। সেদিন থেকে অচল হয়ে পড়ে চারুকলার শিক্ষা কার্যক্রম।
এরপর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে সাত দিনের সময় বেঁধে দিয়ে শর্ত সাপেক্ষে ২৩ জানুয়ারি থেকে ক্লাসে ফিরেছিলেন শিক্ষার্থীরা। কিন্তু দাবি আদায় না হওয়ায় ৩১ জানুয়ারি থেকে তাঁরা আবারও অবরোধ কর্মসূচি শুরু করেন। একই দিন শিক্ষার্থীদের একটি পক্ষ ক্লাসে ফেরার দাবি জানায়। এ অবস্থায় ১ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাতে চারুকলায় ইনস্টিটিউটের হোস্টেলে তল্লাশি চালায় পুলিশ ও প্রক্টরিয়াল বডি।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে ২ ফেব্রুয়ারি বিকেলে চারুকলায় সশরীর শ্রেণি কার্যক্রম এক মাসের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের চারুকলা ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়। ভবন সংস্কারের কথা বলে কর্তৃপক্ষ এমন সিদ্ধান্ত নেয়।
তবে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বলছেন, ইনস্টিটিউটে নিষেধাজ্ঞার কারণে তাঁরা মূল ক্যাম্পাসে অবস্থান নিতে বাধ্য হয়েছেন। দাবি না মানা পর্যন্ত তাঁরা মূল ক্যাম্পাসেই বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবেন।