হতাশা কিংবা দুশ্চিন্তায় ভেঙে না পড়ে মোকাবিলা করতে হবে

মাদকবিরোধী ও সচেতনতামূলক পরামর্শ সভায় শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন পরামর্শ দেন মনোরোগবিশেষজ্ঞ নাসিম জাহান। গোলপাহাড় মোড় এলাকা, চট্টগ্রাম, ২৭ নভেম্বর
ছবি: সৌরভ দাশ

এখনো বেশির ভাগ মানুষ মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি গুরুত্ব দেন না। অথচ মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক না থাকলে কোনো কাজে মনোযোগ দেওয়া সম্ভব হয় না। ফলে হতাশা কিংবা দুশ্চিন্তায় ভেঙে পড়লে চলবে না। চ্যালেঞ্জ নিয়ে মোকাবিলা করতে হবে। না বলা শিখতে হবে। থামতে ও থামাতে জানতে হবে। আজ বৃহস্পতিবার বেলা আড়াইটার দিকে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য সচেতনতামূলক পরামর্শ সভায় এসব কথা বলেন বারডেম জেনারেল হসপিটালের সহযোগী অধ্যাপক নাসিম জাহান।

প্রথম আলো ট্রাস্টের মাদকবিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবে চট্টগ্রাম নগরের এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের সম্মেলনকক্ষে এ সভার আয়োজন করা হয়। এতে বিভিন্ন বিভাগের শতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেন।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও মনোরোগবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক নাসিম জাহানের কাছে মানসিক স্বাস্থ্য, দুশ্চিন্তা, হতাশা নিয়ে নানা প্রশ্ন ছুড়ে দেন শিক্ষার্থীরা। নাসিম জাহানও সব প্রশ্নের বিস্তারিত উত্তর দেন। ইউনিভার্সিটির কর্মকর্তা তপু চৌধুরীর সঞ্চালনায় সভায় উপস্থিত ছিলেন মানববিদ্যা অনুষদের ডিন ডেভিড টেইলর, শিক্ষার্থী কার্যক্রমের ডিন সুমন চ্যাটার্জি ও প্রথম আলো ট্রাস্টের সমন্বয়ক মাহবুবা সুলতানা।

জীবনে নানা কারণে হতাশা আসতে পারে উল্লেখ করে নাসিম জাহান তাঁর আলোচনায় বলেন, পরীক্ষায় কাঙ্ক্ষিত ফলাফল না এলে, পরীক্ষার আগে সিলেবাস শেষ না হলে, পড়ার চাপ থাকলে হতাশা আসতে পারে। দুশ্চিন্তা বাড়তে পারে। তবে একটানা দুই সপ্তাহ হতাশাগ্রস্ত থাকলে ক্ষুধামুক্ত ও ঘুমের ব্যাঘাত ঘটতে পারে। এ কারণে হতাশা কিংবা দুশ্চিন্তায় পড়লে ঠান্ডা মাথায় সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

নাসিম জাহান বলেন, ‘আমাদের প্রতিদিনের জীবনচর্চায় নানা কিছুতে না বলতে হয়। কিন্তু না বলা সহজ কাজ নয়। এটি দৃঢ়তার সঙ্গে আত্মস্থ করতে হবে। না বলা রপ্ত করতে হবে। পাশাপাশি জানতে হবে, কোথায় আমাদের থামা উচিত, আর কোথায় অন্যকে থামানো উচিত।’

আলোচনা চলাকালে এক শিক্ষার্থী জানতে চান, কোনো খারাপ পরিস্থিতি কীভাবে মোকাবিলা করবেন? কীভাবে খারাপ পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেবেন? উত্তরে নাসিম জাহান বলেন, ‘আমরা অনেকেই জীবনে সবকিছু শতভাগ ঠিক রাখতে চাই। আমরা চাই, সবকিছু যথাসময়ে হোক, সব কাজ ঠিকভাবে হোক।  কিন্তু এরপরও অনেক সময় খারাপ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হয়। খারাপ পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হলে আগে সমস্যার মূল কারণ খুঁজে বের করতে হবে। এ ক্ষেত্রে ধৈর্য ধরে পরিস্থিতি সামাল দিতে হবে। না বলার পাশাপাশি যৌক্তিক বিষয় গ্রহণ করার মানসিকতাও তৈরি করতে হবে।’

মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে পরিমিত খাওয়াদাওয়া ও সময়মতো ঘুমানোর পরামর্শ দেন নাসিম জাহান। তিনি বলেন, আজকাল প্রযুক্তির অতিরিক্ত ব্যবহার নেশায় পরিণত হচ্ছে। মুঠোফোন, ল্যাপটপ, কম্পিউটারের অতিরিক্ত ব্যবহারের কারণে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। কিন্তু ঘুম ঠিক না থাকলে স্বাস্থ্য ভেঙে পড়তে পারে। এ জন্য ঘুমের পরিবেশ ঠিক রাখতে হবে। সন্ধ্যার পর চা-কফি পান করা থেকে বিরত থাকতে হবে। বিছানায় গিয়ে প্রযুক্তির ব্যবহার বাদ দিতে হবে।

সভায় শিক্ষার্থীদের পক্ষে ‘স্বাস্থ্যকর ঘুমের’ অভ্যাস তৈরির বিষয়ে জানতে চান প্রথম আলো ট্রাস্টের সমন্বয়ক মাহবুবা সুলতানা। উত্তরে নাসিম জাহান বলেন, স্বাস্থ্যকর ঘুমের জন্য অবশ্যই রুটিন তৈরি করতে হবে। অন্তত এক সপ্তাহ একটি নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যেতে হবে। বিছানায় কোনো প্রযুক্তি নিয়ে যাওয়া যাবে না। একটা বই থাকতে পারে। রাত ১১টা থেকে সকাল ৭টা—এ সময় বেছে নেওয়া যেতে পারে। এ রুটিন মেনে চলা কঠিন। তবে ধৈর্য হারালে চলবে না।

মুঠোফোনের আসক্তি থেকে বের হওয়ার জন্য করণীয় জানতে চান এক শিক্ষার্থী। জবাবে নাসিম জাহান বলেন, মুঠোফোনের আসক্তি বাস্তবতা থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। এ আসক্তি থেকে বাঁচতে নিজেকে সৃজনশীল কাজে ব্যস্ত রাখতে হবে। বই পড়া, ছবি আঁকা, বন্ধুদের সঙ্গে গল্প করার মাধ্যমে মুঠোফোন থেকে বের হতে হবে।