আমলারা কতটা মুক্তিযুদ্ধবিরোধী, তাঁদের সঙ্গে যাঁরা কাজ করেন তাঁরা জানেন: মুনতাসীর মামুন
আমলাতন্ত্র বিষয়ে অনেকের খুব একটা ধারণা নেই বলে মন্তব্য করেছেন ইতিহাসবিদ ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মুনতাসীর মামুন। তিনি বলেছেন, ‘তাঁদের (আমলা) সঙ্গে যাঁরা কাজ করেন, তাঁরা জানেন যে তাঁরা কী পরিমাণ মুক্তিযুদ্ধবিরোধী।’
সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন মুনতাসীর মামুন। গ্রামীণফোনের উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ভার্চ্যুয়াল ট্যুর সম্পর্কে জানাতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
মুক্তিযুদ্ধে খুলনা অঞ্চলের মানুষ সবচেয়ে বেশি গণহত্যার শিকার হয়েছিলেন উল্লেখ করে মুনতাসীর মামুন বলেন, ‘খুলনায় গিয়ে দেখি, সেখানকার একটি মহাসড়কের নাম খান-এ সবুর রোড। অনেককে জিজ্ঞেস করেছিলাম, কেন একজন দুর্বৃত্তের নামে সড়কের নাম। সেখানে তো বঙ্গবন্ধুর নামে কোনো সড়ক নেই। কেউ কোনো উত্তর দেয়নি। এরপর বেশ কয়েক বছর আমি খুলনায় যাইনি।’
পরে একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির কাজে একবার খুলনায় যেতে হয়েছিল বলে জানান মুনতাসীর মামুন। তিনি বলেন, ‘সেবার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের জিজ্ঞাসা করলাম, “এখানে খান-এ সবুরের নামে রাস্তাটা কি আছে? মেয়র তো আওয়ামী লীগের, আপনারা কিছু করছেন না কেন?” কেউ কিছু বলেও না। একজন বললেন, “খান-এ সবুর খুলনাকে পাকিস্তানে এনেছিলেন।” আমি বলেছিলাম, “খান–এ সবুর তখন ছিলেন একজন মাস্তান। তিনি কী করে খুলনাকে পাকিস্তানে এনেছিলেন?” তখনই ঠিক করলাম, এখানে (খুলনা) একটি জাদুঘর করব। কারণ, এখানকার সবচেয়ে বড় গণহত্যাটা খুলনার চুকনগরে হয়েছিল। তবু সেখানকার মানুষ সচেতন না। সেই ক্রোধ থেকেই আমরা জাদুঘরটি করেছি।’
আক্ষেপ নিয়ে মুনতাসীর মামুন বলেন, ‘আসলে আমরা যত কথাই বলি না কেন, বাস্তবে কিন্তু মানুষের হৃদয়ে মুক্তিযুদ্ধের যে আকুলতা, সেটায় আমরা পৌঁছাতে পারিনি। না হলে বর্তমান সরকারের আমলেও এত বড় একটা সড়কের নাম এ রকম থাকবে কেন? ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের মিলনায়তনের নাম ছিল স্বাধীনতাবিরোধী শাহ আজিজুর রহমানের নামে। বেশ কয়েকবার সরকারি পর্যায়ে এ নাম বদলের ব্যর্থ চেষ্টা করার পর আমি হাইকোর্টে রিট করি। পরে একটি রায় হয়, কোনো স্বাধীনতাবিরোধীর নামে বাংলাদেশের কোনো রাস্তা, অবকাঠামো বা স্থাপনার নামকরণ করা যাবে না।’
মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যা নিয়ে একটি জরিপ প্রসঙ্গে মুনতাসীর মামুন বলেন, ‘আমরা ৩০ লক্ষ শহীদের কথা বলি। ৫০ বছর পর প্রতিটি জেলায় আমরা একটা জরিপ করছি। বের করেছি গণহত্যার ঘটনা কতটি ঘটেছে। আমরা ৩৬টি জেলায় গণহত্যার ঘটনা পেয়েছি ১৫ হাজার ১৯টি, বধ্যভূমি পেয়েছি ৭৮১টি, গণকবর ১ হাজার ১৬১টি এবং টর্চার সেল পেয়েছি ১ হাজার ৫৩টি। ৩৬ জেলার যদি এই চিত্র হয়, তাহলে সবগুলো জেলার অবস্থা কী হবে? আমরা কিন্তু শহীদদের তালিকাও করেছি। যোগ করলে দেখা যাবে ৩০ লক্ষের বেশি হয়ে যাবে।’
গ্রামীণফোন ভার্চ্যুয়ালি মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর দেখানোর যে উদ্যোগ নিয়েছে, তাকে স্বাগত জানিয়ে মুনতাসীর মামুন বলেন, ‘আমরা যদি প্রযুক্তির সঙ্গে না যাই, তাহলে আমরা পিছিয়ে পড়ব। পাশাপাশি এই তথ্যগুলো যদি তরুণেরা জানতে পারে, তারা মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা পাবে। আমরা গুগলের সঙ্গেও যোগাযোগ করছি, যাতে সব জায়গায় এ তথ্যগুলো দেখানো হয়।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের অন্যতম ট্রাস্টি সারওয়ার আলী, আসাদুজ্জামান নূর, বীর মুক্তিযোদ্ধা সাজ্জাদ আলী, গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী ইয়াসির আজমান, শহীদ বুদ্ধিজীবী মোহাম্মদ ফজলে রাব্বীর মেয়ে নাসরিন সুলতানা, মুক্তিযোদ্ধা শিরিন বানুর মেয়ে জয়া তাহসিন প্রমুখ।