আপনাদের মতপার্থক্য ও ভিন্নতার জন্য জনগণ কেন ভুক্তভোগী হবে: মাহ্‌ফুজ আনাম

মাহ্‌ফুজ আনামছবি: প্রথম আলো

‘রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের ঐকমত্যে আসতে পারছে না, নিজেদের মধ্যে স্ববিরোধিতা আছে, ভিন্নতা আছে। তো আপনাদের ভিন্নতার জন্য জনগণ কেন ভুক্তভোগী হবে?’ এই প্রশ্ন রেখে ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহ্‌ফুজ আনাম অনুরোধ করে বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যত মতপার্থক্যই থাকুক, ভবিষ্যতের জন্য ছাড় দিয়ে জনগণকে একটা স্বস্তির জায়গায় নিয়ে যান।

আজ শনিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ে ‘নির্বাচনের জন্য রাজনৈতিক সমঝোতার পথ’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এ কথাগুলো বলেন।

নেপালের অভ্যুত্থান থেকে রাজনৈতিক দলের অনেক কিছু শিক্ষণীয় আছে উল্লেখ করে মাহ্‌ফুজ আনাম বলেন, সেখানে রাজাকে সরিয়ে পাঁচ বছর সময় নিয়েছে নতুন সংবিধান করতে। এরপর খালি সরকার বদলেছে, স্থিতিশীলতা আসেনি। জনগণ রাজনীতিবিদদের ওপর ঘৃণা প্রকাশ করছে। তিনি আরও বলেন, ‘সংস্কার যদি অসম্পূর্ণ থাকে, থাকুক। ১০০টার জায়গায় হয়তো ১০টা হয়েছে। তারপরও একটা নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা দিন।’

মাহ্‌ফুজ আনাম বলেন, ‘এই সরকার যখন ক্ষমতায় আসে, তাদের দুটো দায়িত্ব ছিল। এক সুশাসন; দুই সংস্কার। কারণ, আপনি সংস্কার যা–ই করেন, আপনি যদি সরকারের গদিতে বসেন, তাহলে প্রতিনিয়ত আপনাকে দেশ চালাতে হবে। বাজারে কী এল না এল, কোথায় কী হলো, গন্ডগোল কী হলো, এটার দায় আপনাকে নিতেই হবে। কারণ, আপনিই চালকের আসনে আছেন। সেখানে আমি মনে করি, এই সরকার ব্যাপকভাবে ব্যর্থ হয়েছে। আইনশৃঙ্খলার যে পরিবেশ, তাতে নাগরিকেরা একটা অস্থিরতার মধ্যে বাস করছে।’

হত্যা মামলা একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে উল্লেখ করে ডেইলি স্টার সম্পাদক বলেন, ‘এই মুহূর্তে বাংলাদেশে রাজনৈতিক, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী, এমনকি সাবেক প্রধান বিচারপতি—সবাই মার্ডার চার্জে অভিযুক্ত। মানে একটা জাতির জন্য কী কলঙ্ক, আমার চিফ জাস্টিস যিনি, হ্যাঁ তিনি ভুল রায় দিয়েছেন, তাঁকে আপনি সাজা দেন। কিন্তু তিনি তো খুন করেন নাই। অথচ তিনি খুনের মামলার আসামি। আজকে এই মুহূর্তে প্রায় ২২৬ জন সাংবাদিক খুনের মামলার আসামি। দুর্নীতির মামলা দেন, সাংবাদিকতার অপব্যবহারের জন্য দায় দেন। কিন্তু খুনের মামলা দিয়ে সরকার নিজেদের হাস্যকর করে ফেলেছেন।’

বৈঠকে আরও বক্তব্য দেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ, সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার, ওসমানী সেন্টার ফর পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের চেয়ারম্যান লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. মাহফুজুর রহমান, জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সম্পাদক মো. মতিউর রহমান আকন্দ, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সামিনা লুৎফা, প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান। বৈঠকটি সঞ্চালনা করেন প্রথম আলোর নির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ।