বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের মামলায় কারাগারে চবি ছাত্র, শিক্ষকদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগো

সন্ত্রাসবিরোধী আইনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের মামলায় ছাত্র অধিকার পরিষদের কর্মী জোবায়ের হোসেনকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। জোবায়ের বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জিহান সানজিদা তাঁকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এ ঘটনায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।

জেলা কোর্ট পরিদর্শক জাকির হোসাইন মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে আজ আদালতে হাজির করে হাটহাজারী থানা-পুলিশ।

এ সময় ওই শিক্ষার্থীর পক্ষে কোনো জামিনের আবেদন করা হয়নি। আদালত তাঁকে কারাগারে পাঠান।

গত বুধবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মকর্তা শেখ মো. আবদুর রাজ্জাক বাদী হয়ে জোবায়েরের বিরুদ্ধে মামলা করেন। ওই দিন বেলা ১১টার দিকে ক্যাম্পাসে বাস চালুর দাবিতে গোলচত্বর এলাকায় মানববন্ধন করেন জোবায়েরসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী। এরপর তিনিসহ অন্তত আটজনকে প্রক্টর কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে যান সহকারী প্রক্টর গোলাম কুদ্দুস ও হাসান মুহাম্মদ রোমান।

পরে বাকিদের ছেড়ে দিয়ে জোবায়েরকে আটকে রাখেন প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা। তাঁকে সেখানে ৯ ঘণ্টা ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। শেষে রাতে তাঁকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেন প্রক্টর রবিউল হাসান ভূঁইয়া।

জানতে চাইলে প্রক্টর রবিউল হাসান ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, জোবায়ের গত ২৫ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মশৃঙ্খলাবহির্ভূত কোনো কাজে জড়িত থাকবে না বলে অঙ্গীকারনামা দিয়েছিলেন। ওই সময় তাঁর বিরুদ্ধে শাটল ট্রেনে বিশৃঙ্খলার পরিকল্পনা করার অভিযোগ ছিল। তাই বুধবার তাঁর গতিবিধিতে সন্দেহ হলে প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এরপরে যাচাই–বাছাই শেষে জোবায়েরের বিরুদ্ধে মামলা হয়।

মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়, জোবায়ের বিশ্ববিদ্যালয়ের শাটল ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের ষড়যন্ত্র করেছেন। পাশাপাশি তিনি সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টির পরিকল্পনা, রাষ্ট্রবিরোধী দলের সদস্যপদ গ্রহণ এবং রাষ্ট্রবিরোধী অপরাধ সংঘটনের জন্য ষড়যন্ত্র ও অপচেষ্টা চালান। এ কারণে তাঁর বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে মামলার বাদী শেখ মো. আবদুর রাজ্জাক প্রথম আলোকে বলেন, ‘মামলার এজাহার তৈরি করেছে পুলিশ। পরে আমি সই করছি।’ সই করার পর তিনি অভিযোগের বিষয়ে কিছু প্রমাণও দেখেছেন বলে দাবি করেন।

তবে হাটহাজারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রুহুল আমিন প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশ কখনোই এজাহার তৈরি করে না। এটি বাদীই তৈরি করে দেন।
শিক্ষকদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া

জোবায়েরকে প্রক্টর কার্যালয়ে ৯ ঘণ্টা ‘আটকে’ রেখে পুলিশে দেওয়ার ঘটনায় শিক্ষকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। অনেকেই বিষয়টির সমালোচনা করেছেন। যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক আলী আর রাজী প্রথম আলোকে বলেন, একজন শিক্ষার্থীকে ৯ ঘণ্টা আটকে রাখার এখতিয়ার প্রক্টরিয়াল বডির নেই। তাঁর মুঠোফোনে বা শরীরে তল্লাশি চালানোর সুযোগ কোনো আইন তাঁদের দেয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি যেটা করছে, তা তাদের এখতিয়ারবহির্ভূত।

কোনো বিবেচনাতেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কেউই একজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে এ আচরণ করতে পারেন না।

সমাজতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক মাইদুল ইসলাম এ ঘটনাকে শিক্ষাঙ্গনের স্বাধীনতার পরিপন্থী হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক জি এইচ হাবীব বলেন, প্রক্টরিয়াল বডি সম্পূর্ণ বেআইনি কাজ করেছে।

অন্যদিকে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সজীব কুমার ঘোষ প্রথম আলোকে বলেন, প্রক্টরিয়াল বডি আইনত কোনো শিক্ষার্থীকে এভাবে আটকে রাখতে পারে না।

তবে তাঁকে আটকে রাখা হয়নি বলে তিনি জেনেছেন। কারণ, ওই শিক্ষার্থীকে দুপুরে খাবার দেওয়া হয়েছে। প্রক্টরিয়াল বডি ওই শিক্ষার্থীর একটি ডায়েরি পড়েছেন। এ কারণে দেরি হয়েছে।