জমজমাট আয়োজন, ভরপুর আনন্দ

নগদ–কিআ কার্নিভ্যালের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে (বাঁ থেকে) নুসরাত সায়েম, আনিসুল হক, সিহাব উদ্দীন চৌধুরী, নুসরাত ইমরোজ তিশা, মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, সানজিদা, মারিয়া, হাবিবুল বাশার ও নাসির আলী মামুন। গতকাল রাজধানীর আলোকি কনভেনশন সেন্টারে
ছবি: সাজিদ হোসেন

আয়োজন যেমন ছিল জমজমাট, আনন্দও হলো তেমন ভরপুর। ‘নগদ-কিআ কার্নিভ্যাল ২০২৩’ কিশোর আলোর পাঠক, স্বেচ্ছাসেবক আর তাদের সঙ্গে আসা অভিভাবকদের দিনভর ভরিয়ে রাখে এক অন্য রকম ভালো লাগায়। দেশের শিশু-কিশোরদের সবচেয়ে জনপ্রিয় পত্রিকা কিশোর আলোর ১০ বছর পূর্তি উপলক্ষে গতকাল রোববার সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি এ আয়োজন ছিল গুলশান-তেজগাঁও লিংক রোডের আলোকি কনভেনশন সেন্টারে।

কিশোর আলো এ উৎসবের আয়োজন করেছিল ডাক বিভাগের ডিজিটাল লেনদেনের মাধ্যম নগদের সহায়তায়। আয়োজনে চিকিৎসাসহায়তা দিয়েছে ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল। সম্প্রচার সহযোগী ছিল এটিএন বাংলা। ভেন্যু–সহায়তা দিয়েছে আলোকি; আর নিবন্ধিত অংশগ্রহণকারীদের উপহার দিয়েছে ইস্পাহানি।

সকাল নয়টায় আনুষ্ঠানিকতার সূচনা হয় শিল্পী বিজন চন্দ্র মিস্ত্রীর নেতৃত্বে মণিকুন্তলা সংগীত বিদ্যায়তনের শিশুশিল্পীদের গাওয়া জাতীয় সংগীত দিয়ে। পরে তাদের সম্মিলিত কণ্ঠে ছিল দেশের গান ‘সূর্যোদয়ে তুমি’। বিজন চন্দ্র মিস্ত্রী এককে গাইলেন ‘মাগো ধন্য হলো জীবন আমার’। উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হলো বিশ্বজোড়া যুদ্ধ–অশান্তির অবসানের প্রত্যাশায় অতিথিদের নিয়ে সাদা পায়রা উড়িয়ে।

আলোকি কনভেনশন সেন্টারের তিনটি কেন্দ্রে একযোগে চলেছে কার্নিভ্যালের বৈচিত্র্যময় আয়োজন। মূল মিলনায়তনে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের শুরুতেই কিশোর আলো সম্পাদক ও প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক কথাশিল্পী আনিসুল হক সবাইকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রের সফল ও গুণীজনেরা তাঁদের অভিজ্ঞতার কথা বলবেন, কিশোর আলোর পাঠকদের অনুপ্রেরণা দেবেন। কিশোর আলো চায় উন্নত বাংলাদেশ। এ আলোকিত অনুষ্ঠান দেশের ভবিষ্যৎ নাগরিকদের সেই কাজে প্রেরণা জোগাবে।

শুভেচ্ছা জানিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী কিশোর আলোর পাঠকদের উদ্দেশে বলেন, তোমাদের কাজ হচ্ছে প্রমাণ করা যে ‘তোমরা পারো’। নুসরাত ইমরোজ তিশা বলেন, এই সমাবেশে এলে তিনি নিজেই অনুপ্রাণিত হন।

জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক হাবিবুল বাশার নবীনদের পাঠ্যপুস্তকের বাইরেও বই পড়তে উৎসাহিত করেন।

আলোকচিত্রী নাসির আলী মামুন কিশোর আলো পাঠকদের স্বপ্ন দেখতে ও স্বপ্ন বাস্তবায়নে একাগ্রতার সঙ্গে পরিশ্রম করার পরামর্শ দেন।

শুভেচ্ছা জানান সাফ গেমসে নারী ফুটবলের জয়ী দলের সদস্য মারিয়া ও সানজিদা।

নগদের চিফ কমার্শিয়াল অফিসার সিহাব উদ্দীন চৌধুরী বলেন, কিশোর আলোর এ আয়োজনের সঙ্গে তাঁরা থাকতে পেরে আনন্দিত। কার্নিভ্যাল সঞ্চালনা করেন বাংলাবিদ নুসরাত সায়েম।

কনভেনশন সেন্টারের খোলা চত্বরে বসেছিল স্টলের সারি। প্রথমা প্রকাশন, ইস্পাহানি গ্রুপ, মাচান রেস্টুরেন্ট, পেপসি, ফ্রেশ, কিশোর আলো-বিজ্ঞানচিন্তা, সেভয়, ঢাকা কমিকসসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের স্টলে ছিল ভিড়।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা তৌহিদুর রহমান কিশোর আলো আর বিজ্ঞানচিন্তার এক বছরের গ্রাহক হলেন বিশেষ ছাড়ে। ছেলে তানজিল মুনতাহা ও মেয়ে সিদারাতুল মুনতাহাকে সঙ্গে নিয়ে কার্নিভ্যালে এসেছেন অফিস ছুটি নিয়ে।

মূল মিলনায়তনের প্রবেশপথের পাশেই ছবি তোলার জন্য করা হয়েছিল সুসজ্জিত মঞ্চ। সেখানে কিশোর আলোর স্লোগান ‘সূর্য হয়ে ওঠো ইচ্ছেমতো ছোট’ লেখা প্ল্যাকার্ড নিয়ে দাঁড়িয়েছিল শাহ সামিহা ফারজানা। সেলফোনে তার ছবি তুলছিল ওর বড় বোন শাহ সাঈদা জাহান। তারা এসেছে সুনামগঞ্জ থেকে।

উৎসবে ছিল আরও বেশ কিছু মজার আয়োজন। কাগজ কেটে শিল্পকর্ম করার হাতে–কলমে শিক্ষা দেওয়া চলছিল ‘কাগজের স্কুল’ নামের স্টলে। ছিল ক্যারিকেচার ও মজার মজার খেলার আয়োজন।

কার্নিভ্যাল উদ্বোধনের পর মূল মঞ্চে শুরু হয় মজার বিভিন্ন পরিবেশনা, ফাঁকে ফাঁকে বিশিষ্ট অতিথিদের কথামালা। ঢাকা পাপেট থিয়েটারের পরিবেশনায় ছিল পাপেট শো। অভিনয় শিল্পী চঞ্চল চৌধুরী পড়ালেখার পাশাপাশি সৃজনশীল কাজে অংশ নেওয়ার পরামর্শ দেন।

লেখক ইসমাইল আরমান ও তানজিনা হোসেন এবং সাইদুজ্জামান রওশন সবাইকে শুভেচ্ছা জানান। বিজ্ঞান নিয়ে কুইজ পরিচালনা করেন প্রথম আলোর যুব কর্মসূচির সমন্বয়ক মুনির হাসান। মানসুরা মুবাশ্বিরা পরিবেশন করেন ‘ভেন্ট্রিলোকুইজম’।

অভিনয়শিল্পী অপি করিম তাঁর অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, নিজেকে কারও সঙ্গে তুলনা করবে না। শুভেচ্ছা জানান তরুণ নির্মাতা মেজবাউর রহমান। অভিনয় শিল্পী তাসনিয়া ফারিণ তরুণদের প্রশ্নের জবাব দেন ও তাদের নিয়ে ‘পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে’ গানের অন্তরা গেয়ে শোনান। এরপর সিহাব উদ্দীন চৌধুরীর পরিচালনায় নগদের আয়োজনে কুইজ প্রতিযোগিতা শেষে ছিল মধ্যাহ্নের বিরতি।

মূল মঞ্চের অনুষ্ঠান ছাড়াও ‘গ্রিন হাউস’ নামের মিলনায়তনে ছিল তারকাদের সঙ্গে আড্ডা আর দোতলায় ছিল কর্মশালা। কার্নিভ্যালের দ্বিতীয় পর্বে ‘বিট বক্সিং’ পরিবেশন করেন বিটমসফিয়ারের সদস্যরা। জাদুর চমক দেখালেন স্বপন দিনার। আতিয়া আনিসা গেয়ে শুনিয়েছেন তিনটি গান। আরফান মৃধাও তাঁর সাদা সাদাসহ তিনটি গান শুনিয়েছেন। গান গেয়েছেন আরেফিন ফয়সাল।

এ ছাড়া ব্যান্ড অড সিগনেচার বেশ কয়েকটি গান শুনিয়ে সবাইকে মাতিয়ে তোলে।