‘আমি ৩২ দলের লোক’

দেশের অন্যান্য স্থানের মতো চট্টগ্রাম নগরেও বিশ্বকাপ ফুটবলের উন্মাদনা শুরু হয়ে গেছে
ছবি: সৌরভ দাশ

‘পতাকা বিতান’। চট্টগ্রাম নগরের সিনেমা প্যালেস এলাকায় দোকানটির অবস্থান। দোকানের স্বত্বাধিকারী আবু আহমেদ ওরফে আবু খলিফা। ৪২ বছর ধরে বিভিন্ন ধরনের পতাকা নিয়ে তাঁর কারবার।

জাতীয় দিবস, কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী, ক্রিকেট-ফুটবলের আসরসহ বিভিন্ন উপলক্ষে পতাকার দরকার পড়লে নগরের লোকজন ছুটে যান আবু আহমেদের দোকানে।

দরজায় কড়া নাড়ছে কাতার বিশ্বকাপ ফুটবল। বিশ্বকাপ ফুটবলের উন্মাদনা দেশের অন্যান্য স্থানের মতো চট্টগ্রাম নগরেও শুরু হয়ে গেছে। ফলে নগরের ফুটবলপ্রেমীরা ভিড় করছেন আবু আহমেদের পতাকা বিতানে।

আরও পড়ুন

বিশ্বকাপ ফুটবলে যেসব দল অংশ নিচ্ছে, সেই দলগুলোর দেশের জাতীয় পতাকা বানানো ও বিক্রির কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন আবু আহমেদ। পাশাপাশি তিনি দলগুলোর জার্সিও বিক্রি করছেন।

এখন পতাকা বিতানে যাঁরা আসছেন, তাঁরা বলছেন, প্রিয় দলের পতাকা-জার্সি ছাড়া বিশ্বকাপ ফুটবলের উন্মাদনা জমে না। তাই তাঁরা আগেভাগেই পতাকা-জার্সি সংগ্রহ করছেন। পতাকা-জার্সির জন্য তাঁদের কাছে ভরসার নাম আবু আহমেদ।

বিশ্বকাপ ফুটবল এলেই বাংলাদেশ কার্যত দুটি শিবিরে ভাগ হয়ে পড়ে। আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিল। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়।

কোন দলের পতাকা বেশি বিক্রি হচ্ছে, জানতে চাইলে আবু আহমেদ বললেন, ‘দলই তো দুটি—ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা। এই দুই দলের পতাকা ও জার্সিই বেশি চলছে। অন্য দলগুলোর বেইল নাই।’

এই দল দুটির বাইরে জার্মানি, স্পেনসহ আরও কিছু দলের পতাকা-জার্সির চাহিদা রয়েছে বলে জানান আবু আহমেদ। তিনি বলেন, ‘বিস্ময়কর হলেও সত্য, সেনেগালের পতাকারও চাহিদা আছে। তাই সেটাও তৈরি করে রেখেছি।’

বিশ্বকাপ ফুটবল সামনে রেখে আবু আহমেদ গত মার্চ থেকে পতাকা তৈরির কাজ শুরু করেছেন। তিনি ইতিমধ্যে বিভিন্ন দলের ১০ হাজার পতাকা বানিয়েছেন। মাসখানেক ধরে পতাকা বিক্রি চলছে।

খুচরার পাশাপাশি পাইকারিতে পতাকা বিক্রি করেন আবু আহমেদ। এ ছাড়া বড় আকারের পতাকার জন্য তাঁর দোকানে তরুণ-যুবকেরা ছুটে আসেন।

গতকাল বুধবার চট্টগ্রামের সরকারি কমার্স কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থী বড় পতাকার জন্য এসেছিলেন তাঁর দোকানে। তাঁদের একজন সাদাব বিন আমিন।

সাদাব জানান, তিনি ব্রাজিলের সমর্থক, তাঁর ভাই আর্জেন্টিনার। তাই তিনি ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা উভয় দেশের বড় আকারের দুটি পতাকা নেবেন। আর্জেন্টিনার পতাকাটি হবে ৫০ ফুটের। ব্রাজিলের পতাকাটা তার চেয়ে কিছুটা ছোট হবে।

পতাকা বানানো–বিক্রির কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন আবু আহমেদ
ছবি: সৌরভ দাশ

আবু আহমেদ ৫০ ফুটের বেশ কয়েকটি পতাকা বিক্রি করেছেন। তিনি বলেন, বেশি চলে ৫ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৩ ফুট প্রস্থের পতাকা। এগুলোর দাম পাইকারিতে পড়ে ৬০ থেকে ৭০ টাকা।

আরাফাত নামের এক বিক্রেতা গতকাল আবু আহমেদের কাছে পতাকার জন্য আসেন। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে ১০ হাজার টাকার পতাকা নিয়েছেন। নগরের কালুরঘাটের দোকানে এই পতাকা বিক্রি করেন তিনি। আবার নতুন করে পতাকা নেওয়ার জন্য এসেছেন।

আবু আহমেদের পাশে আবদুল কাদের নামের এক ব্যক্তি পতাকা বিক্রি করেন। তিনি প্রায় ১০ বছর ধরে এই পেশায় আছেন। কাঁদের জানালেন, তিনি ইতিমধ্যে ২০০ ফুটের একটি ব্রাজিলের পতাকা বিক্রি করেছেন। দাম রেখেছেন সাত হাজার টাকা। তিনি এবার প্রায় পাঁচ হাজার পতাকা তৈরি করেছেন।

নগরের বিভিন্ন স্থানের দোকানিরা কাদেরের কাছ থেকে পতাকা নেন। পতাকার পাশাপাশি তিনিও জার্সি বিক্রি করেন।

কাদের বলেন, বিশ্বকাপ ফুটবল সামনে রেখে কয়েক মাস আগে থেকেই পতাকা-জার্সির তৈরি ও বিক্রির ব্যাপারে তিনি প্রস্তুতি নিয়েছেন। বেচাবিক্রি ভালোই চলছে।

কাতার বিশ্বকাপ ফুটবল শুরু হতে আর মাত্র ১০ দিন বাকি। ইতিমধ্যে চট্টগ্রাম নগরের বিভিন্ন স্থানে উঠে গেছে প্রিয় দলের পতাকা। ব্রাজিলের সবুজ-হলুদ ও আর্জেন্টিনার আকাশি-নীল পতাকাই বেশি। সময় যত ঘনিয়ে আসবে, ততই বেশি পতাকায় ছেয়ে যাবে ভবন, ছাদ, দোকান। এই দৃশ্য মনে করিয়ে দেয়, সুদূর কোনো দেশে চলছে বিশ্বকাপ ফুটবল। আর তার ঢেউ এসে লেগেছে বাংলার বুকে।

তো সেই ঢেউয়ের অন্যতম রসদদাতা আবু আহমেদ কোন দলের সমর্থক, একটু জেনে নেওয়া যাক। তিনি এক গাল হেসে বললেন, ‘আমার কোনো দল নাই। আমি ৩২ দলের লোক। সবার পতাকাই বিক্রি করি আমি।’