চবিতে অস্ত্র হাতে ছাত্রলীগ কর্মীদের মহড়ার ভিডিও ভাইরাল

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই উপপক্ষের সংঘর্ষের সময় সংগঠনটির নেতা-কর্মীদের দেশীয় অস্ত্র নিয়ে স্লোগান ও মহড়া দিতে দেখা যায়
ছবি: ভিডিও থেকে সংগৃহীত

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই উপপক্ষের সংঘর্ষের সময় সংগঠনটির নেতা-কর্মীদের দেশীয় অস্ত্র নিয়ে স্লোগান ও মহড়া দেওয়ার ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। শুক্রবার দিবাগত রাত একটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের এ এফ রহমান হলের সামনে থেকে ভিডিওটি ধারণ করা হয়।

শনিবার সন্ধ্যায় ১ মিনিট ২৩ সেকেন্ডের ভিডিওটি ভাইরাল হয়। সেখানে দেখা যায়, শাখা ছাত্রলীগের বিজয় উপপক্ষের নেতা-কর্মীরা দা উঁচিয়ে বলছেন, ‘এই হল আমাদের, সবাই স্লোগান ধর।’ এরপর তাঁরা ‘বিজয়’ বলে স্লোগান দেন।

অনিক দাশ নামের এক ছাত্রলীগ কর্মী দা নিয়ে মহড়া দেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের অপর উপপক্ষ ভার্সিটি এক্সপ্রেসের নেতা-কর্মীরা বিজয় উপপক্ষের সদস্যদের ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়েছে। অনেকে মারাত্মকভাবে আহত হন। তাই তাঁরা আলাওল হল থেকে দা নিয়ে প্রতিহত করতে গিয়েছিলেন। তবে কাউকে আঘাত করেননি।

যেভাবে সংঘর্ষের সূত্রপাত

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ সূত্র জানায়, গত বৃহস্পতিবার রাতে এ এফ রহমান হলে ভার্সিটি এক্সপ্রেসের দেয়াললিখন মুছে দেন বিজয়ের নেতা-কর্মীরা। এ ঘটনায় শুক্রবার সকালে দুই উপপক্ষের নেতা-কর্মীদের মধ্যে বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে রাত নয়টার দিকে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। তখন বিজয়ের নেতা-কর্মীরা লাঠিসোঁটা ও রামদা নিয়ে এ এফ রহমান হলের সামনে এবং ভার্সিটি এক্সপ্রেসের নেতা-কর্মীরা সোহরাওয়ার্দী হলের সামনে অবস্থান নেন।

এরপর রাত ১০টার দিকে ভার্সিটি এক্সপ্রেসের নেতা-কর্মীরা ধাওয়া দিয়ে এ এফ রহমান হল দখলে নেন। এর পর থেকেই দুই উপপক্ষের মধ্যে ইটপাটকেল নিক্ষেপ এবং পাল্টাপাল্টি ধাওয়া চলতে থাকে। পরে দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে প্রক্টরিয়াল বডি ও পুলিশের সহায়তায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। এর পর থেকে স্বাভাবিক রয়েছে এ এফ রহমান হল।

সহকারী প্রক্টরের দিকে দা নিয়ে তেড়ে আসেন ছাত্রলীগ কর্মী

শুক্রবার রাতে সংঘর্ষের সময় সহকারী প্রক্টর শাহরিয়ার বুলবুলের দিকে এক ছাত্রলীগ কর্মী দা নিয়ে তেড়ে আসেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। জানতে চাইলে শাহরিয়ার বুলবুল প্রথম আলোকে বলেন, ভার্সিটি এক্সপ্রেস উপপক্ষের একজনকে আহত অবস্থায় এ এফ রহমান হলের সামনে দেখতে পান। পরে তাঁকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি।

একই সময়ে বিজয় উপপক্ষের নেতা-কর্মীরা লাঠিসোঁটা ও রামদা নিয়ে এ এফ রহমান হলের দিকে আসছিলেন। তাঁরা বুলবুলকে শিক্ষার্থী ভেবে দা নিয়ে তেড়ে আসেন। পরে তিনি নিজের পরিচয় দিলে তাঁরা চলে যান। শাহরিয়ার বুলবুল বলেন, তাঁর দিকে তেড়ে আসা ছাত্রলীগের ওই নেতা-কর্মীদের নাম জানেন না৷ তবে সামনে থেকে দেখলে চিনতে পারবেন।

১২ জন আহত

সংঘর্ষের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের দুই উপপক্ষের ১২ নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। তাঁদের মধ্যে ২ জন ভার্সিটি এক্সপ্রেস ও ১০ জন বিজয় উপপক্ষের।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসাকেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত প্রধান মোহাম্মদ আবু তৈয়ব প্রথম আলোকে বলেন, এ এফ রহমান হলে সংঘর্ষের ঘটনায় ১২ থেকে ১৫ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় আটজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তাঁদের অনেকের গায়ে ধারালো কিছু দিয়ে আঘাত করার দাগ ছিল।

পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

শুক্রবারের সংঘর্ষের বিষয়ে বিজয় উপপক্ষের নেতা ও শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইলিয়াছ প্রথম আলোকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর রবিউল হাসান ভূঁইয়ার নির্দেশে ভার্সিটি এক্সপ্রেসের নেতা-কর্মীরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তাঁদের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছেন। তিনি এ ঘটনার বিচার চান।

তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ভার্সিটি এক্সপ্রেস উপপক্ষের নেতা ও শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি প্রদীপ চক্রবর্তী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বিজয়ের নেতা-কর্মীরা ইচ্ছা করে তাঁদের দেয়াললিখন মুছে দিয়েছেন। বিজয়ের নেতা-কর্মীরা ক্যাম্পাস অস্থিতিশীল করার জন্য দেয়াললিখন মুছে ঝামেলা করতে চেয়েছেন। তাঁরা এটি প্রতিহত করেছেন।

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর রবিউল হাসান ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, পরিস্থিতি এখন শান্ত। দুই পক্ষকেই নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়েছে। এ ঘটনায় কারা জড়িত, চিহ্নিত করতে তদন্ত কমিটি করা হবে। সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ ও সংশ্লিষ্ট ভিডিও তাঁরা পর্যবেক্ষণ করছেন। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।