সংবাদমাধ্যমে নারীদের উপস্থিতি বাড়লে নারীবৈরী মানসিকতা কমবে

চতুর্থ নারী সাংবাদিক সম্মেলন অনুষ্ঠানে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট। ২ জুন ২০২৪ছবি: দীপু মালাকার

সাংবাদিকতা পেশায় নারীদের যে হারে এগিয়ে আসা উচিত, সে হারে হচ্ছে না। যে নারীরা এ পেশায় আছেন, তাঁদের কাজের যথাযথ মূল্যায়ন হয় না। পদোন্নতির ক্ষেত্রে তাঁরা বৈষম্যের শিকার হন। অথচ সংবাদমাধ্যমে নারীর উপস্থিতি বাড়লে গণমাধ্যমের লড়াই আরও জোরালো করা সম্ভব হবে। এর ফলে কমবে নারীবৈরী মানসিকতা। আজ রোববার বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের চতুর্থ জাতীয় সম্মেলনে এসব কথা উঠে আসে।

‘নারী-পুরুষের সমতা অর্জনে কলম হোক হাতিয়ার’ স্লোগান নিয়ে রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সম্মেলনে নারী সাংবাদিকদের পেশাগত সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ১৪ দফা দাবি জানানো হয়। এর মধ্যে রয়েছে গণমাধ্যমের সব বিভাগে ৩০ শতাংশ নারী সাংবাদিক নিয়োগ; মাতৃত্বকালীন ছুটির কারণে চাকরির ধারাবাহিকতা ও পদোন্নতি যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়; যখন-তখন নারী সাংবাদিকদের ছাঁটাই না করা; কোনো সংবাদমাধ্যমে নারীদের নিয়োগ, পদোন্নতি, অ্যাসাইনমেন্ট ও বিট দেওয়া এবং প্রশিক্ষণে বৈষম্য না করা; লিঙ্গভিত্তিক (জেন্ডার) নীতি থাকা; যৌন হয়রানিবিরোধী কমিটি গঠন; প্রতিষ্ঠানে নারী সহকর্মীদের সঙ্গে জ্যেষ্ঠ বা উচ্চপদস্থ পুরুষ কর্মকর্তা ও নিয়োগকর্তাদের আচরণবিধি; নিরাপদে যাতায়াতব্যবস্থা ইত্যাদি।

সম্মেলনের উদ্বোধনী পর্বে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, পেশা হিসেবে সাংবাদিকতায় কিছু স্বকীয়তা ও চ্যালেঞ্জ আছে। নারী সাংবাদিকদের ক্ষেত্রে সেই চ্যালেঞ্জ আরও বেশি। বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের মতো প্ল্যাটফর্মের সদস্য হিসেবে সারা দেশে ৪০০ নারীর সাংবাদিকতায়‍ উপস্থিতি একটি অনন্য অর্জন। পেশাগত বৈষম্যের বিরুদ্ধে সমাধান পাওয়া যেতে পারে এই প্ল্যাটফর্ম থেকে। নারী সাংবাদিকদের পেশাগত সুরক্ষা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন সংগঠন বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের ছাতার নিচে আরও সোচ্চার কণ্ঠে দাবিগুলো তুলে ধরতে পারে।

স্পিকার বলেন, যেকোনো দুর্যোগ, মহামারিতে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগের শিকার হন নারীরা। গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলোও যখন ছাঁটাই শুরু করে, তখন নারীরাই সবার আগে বাদ পড়েন। এ ধরনের পরিস্থিতির জন্য বিমাব্যবস্থা থাকা উচিত। এ ছাড়া নারী সাংবাদিকদের যোগ্যতা অনুযায়ী পদোন্নতি ও সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার দাবি আদায়ে মালিকপক্ষ, সম্পাদক ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে থাকা ব্যক্তিদের সঙ্গে সাংবাদিক সংগঠনগুলোর আলোচনা করা প্রয়োজন।

সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, নারী সাংবাদিকদের মধ্যে সেতুবন্ধ রচনা করতে বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক কেন্দ্র গড়ে তোলা হয় ২০০১ সালের ১৩ মার্চ। ২০০৪, ২০০৭ ও ২০০৮ সালে যথাক্রমে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংগঠন শুরুর সময় সাংবাদিকতা পেশায় নারী ছিলেন ১০০ জন। এখন সে সংখ্যা এক হাজারের বেশি। এখন পত্রিকার সংখ্যা ১ হাজার ৩২৮। ৩৪টি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এবং বহু বেসরকারি রেডিও, কমিউনিটি রেডিও, অনলাইন সংবাদমাধ্যম চালু হওয়ায় সাংবাদিকতায় কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।

সম্মেলনে সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সভাপতি নাসিমুন আরা হক বলেন, সাংবাদিকতাকে নারীর পেশা বলে মনে না করার প্রবণতা রয়েছে সমাজে। আগের তুলনায় এখন সাংবাদিকতায় নারীদের উপস্থিতি বেড়েছে। তবে মোট সাংবাদিকদের তুলনায় নারীর সংখ্যা কম। নীতিনির্ধারণী পদগুলোতে নারী এখনো প্রায় অনুপস্থিত। যাঁরা এগিয়ে এসেছেন, তাঁরা প্রশিক্ষণ ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। অনেকে যৌন হয়রানিসহ লাঞ্ছনার শিকারও হয়ে থাকেন। সংবাদমাধ্যমে নারীদের উপস্থিতি বাড়লে গণমাধ্যমের লড়াই আরও জোরালো হবে এবং নারীবৈরী মানসিকতাও কমবে।

স্বাগত বক্তব্যে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক পারভীন সুলতানা বলেন, বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার শুরুতে নারীদের জন্য আলাদা সংগঠনের কেন প্রয়োজন হবে, এমন প্রশ্ন তুলেছিলেন অনেকে। কিন্তু এই পেশায় এমন কিছু সমস্যা রয়েছে, নারীদেরই সেগুলোর বেশি মুখোমুখি হতে হয়। সেই সমস্যাগুলো নিয়ে কথা বলার জন্য এই সংগঠন কাজ করে যাচ্ছে।

অনুষ্ঠানে কোভিডের পর থেকে যেসব বিশিষ্ট ব্যক্তি ও সাংবাদিকের মৃত্যু হয়েছে, তাঁদের জন্য শোকপ্রস্তাব পাঠ করেন সংগঠনের কোষাধ্যক্ষ আখতার জাহান মালিক।

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন আবৃত্তিশিল্পী লায়লা আফরোজ।

সম্মেলনের শুরুতে জাতীয় সংগীত ও গান পরিবেশন করা হয়। সম্মেলনের উদ্বোধনী পর্ব শেষ হয় কেক কেটে।