যেভাবে দেশের প্রথম সৌরবিদ্যুৎ গ্রিড প্রকল্প মরণদশায় এসে পৌঁছাল

সন্দ্বীপ উপজেলার এনাম নাহার এলাকায় '১০০ কিলোওয়াট মিনি গ্রিড' প্রকল্পের সৌর প্যানেল। সম্প্রতি তোলাপ্রথম আলো

মাত্র ছয় বছর বিদ্যুৎসেবা প্রদানের পরই বন্ধ হয়ে গেছে দেশের প্রথম সৌরবিদ্যুৎ গ্রিড (সোলার মিনিগ্রিড) প্রকল্প। বর্তমানে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে এই প্রকল্পের ভবন ও  সরঞ্জাম। এমনকি প্রকল্পটির ভবনের বাতি জ্বালানোর জন্যও নিতে হয়েছে বাইরের সংযোগ। এটির ভবিষ্যৎ কী, তা জানা নেই সংশ্লিষ্টদের। ২০১১ সালে পরিবেশবান্ধব গ্রিন এনার্জির বিকাশের স্বপ্ন নিয়ে পথচলা শুরু করলেও ২০১৭ সালের শেষ নাগাদ উপযোগিতা হারায় এটি।

পিপিপির আওতায় তিনটি সংস্থার অর্থায়নে সন্দ্বীপ উপজেলার এনাম নাহারে ‘১০০ কিলোওয়াট মিনি গ্রিড’ নামের এই সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পটি স্থাপিত হয়। এটি দেশের প্রথম সোলার মিনি গ্রিড প্রকল্প। চার কিলোমিটার সঞ্চালন লাইনের মাধ্যমে ২০১১ সালে  গ্রাহকদের সংযোগ দেওয়া শুরু হয় এই মিনি গ্রিড থেকে। সে সময় বিদ্যুৎ সংযোগ প্রাপ্তির সীমাহীন উচ্ছ্বাস ছিল আশপাশের মানুষের মধ্যে। কিন্তু এর মাত্র ছয় বছর পরই এটি হয়ে পড়ে পরিত্যক্ত।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৭ সালের শেষদিকে সাবমেরিন কেব্‌লের মাধ্যমে সাগরের তলদেশ দিয়ে ১৭ কিলোমিটার লাইন টেনে জাতীয় গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয় সন্দ্বীপে। এরপর গ্রাহকেরা জাতীয় গ্রিডের সংযোগ নেওয়ায় সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প গ্রাহক হারায়। মূলত এই কারণে প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে যায়।

৫ কোটি ৭৬ লাখ টাকার এই প্রকল্পে অর্থায়ন করেছিল তিনটি সংস্থা। তার মধ্যে জার্মান গর‍্যান্ট (কেডব্লিউএফ) ২ কোটি ৮৮ লাখ টাকা, পূরবী গ্রিন এনার্জি লিমিটেড ১ কোটি ১৫ লাখ টাকা এবং ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লি. (ইডকল) বিনিয়োগ করে ১ কোটি ৭৩ লাখ টাকা।

পূরবী গ্রিন এনার্জি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনায় প্রকল্পটি গড়ে উঠলেও বর্তমানে এটির দেখভালের দায়িত্বে রয়েছে উপকূলীয় বিদ্যুতায়ন ও মহিলা উন্নয়ন সমিতির ওপর। সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক নাসির উদ্দিন বলেন, ‘বাসাবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান মিলিয়ে তিন শ সংযোগ দিয়ে সেবা দেওয়া শুরু করি আমরা। জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুৎ সরবরাহের পর আমরা গ্রাহক হারাই। এরপর দীর্ঘদিন পড়ে থেকে আমাদের খুঁটি ও সঞ্চালন লাইন নষ্ট হচ্ছিল বলেই আমরা সেগুলো তুলে নিই।’  

প্রকল্পটির উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান পূরবী গ্রিন এনার্জি লিমিটেডের চেয়ারম্যান আসমা জাহান হকের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি দেশের প্রথম সোলার মিনি গ্রিড প্রকল্প। আমরা চেয়েছি, জাতীয় গ্রিডে সংযুক্তি নিশ্চিত করতে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট বিভাগের অনীহা বা উদাসীনতার কারণে তা হয়ে উঠছে না।

আসমা জাহান হক আরও বলেন, ‘সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পটি গ্রিডে যুক্ত হওয়ার অনুমোদন পায়নি। এ–সংক্রান্ত আবেদন এখন বিদ্যুৎ বিভাগের নবায়নযোগ্য জ্বালানি অণুবিভাগে আছে।’

এ বিষয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের নবায়নযোগ্য জ্বালানি অণুবিভাগে যুগ্ম সচিব নীরোদ চন্দ্র মণ্ডলের কাছে জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘খুব সম্ভবত দীর্ঘদিন ধরে এটি অকেজো হয়ে আছে। গ্রিডে যুক্ত হওয়ার বিষয়ে কোনো তথ্য আমার কাছে নেই।’

সরেজমিনে দেখা যায়, জীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে ভবনসহ প্রকল্পটির সব অবকাঠামো। ভবনের সামনে স্থাপিত প্যানেলের কাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হলেও এখনো অক্ষত রয়েছে প্যানেলগুলো। তবে খুলে ফেলা হয়েছে ছাদে স্থাপিত সব কটি প্যানেল। সামনের জমিতে স্থাপিত প্যানেলের সারি থেকে চুরি হয়ে গেছে তিনটি প্যানেলও।

উপকূলীয় বিদ্যুতায়ন ও মহিলা উন্নয়ন সমিতির নির্বাহী পরিচালক নাসির উদ্দিন বলেন, ‘প্রকল্পের স্থাপনাগুলো আমাদের জায়গার ওপর বলে আমরাও পড়েছি বিড়ম্বনায়। বিদ্যুৎ বিভাগ প্রকল্পটিকে গ্রিডে যুক্ত করে না নিলেই কোটি টাকার যন্ত্রপাতি নষ্ট হবে। প্রকল্পের সরঞ্জাম বিক্রি করে দেওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না।’