প্রকৃতির ছোঁয়ায় নান্দনিক মসজিদ

লক্ষ্মীপুরের রামগতির দৃষ্টিনন্দন আস-সালাম জামে মসজিদ
ছবি: প্রথম আলো

চারদিকে সবুজের সমারোহ। পুকুরপাড় ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে সুরম্য স্থাপনাটি। অপূর্ব নির্মাণশৈলীর এ স্থাপনা একটি মসজিদ। আস-সালাম জামে মসজিদ নামে দোতলা এই মসজিদের নেই কোনো জানালা। আর দরজা মাত্র একটি। মসজিদটির নকশা এমনভাবে করা হয়েছে যাতে ভেতরে রোদ, বৃষ্টি সরাসরি এসে পড়ে। মুসল্লিরা রোদে না পুড়ে, বৃষ্টিতে না ভিজেই রোদবৃষ্টির আমেজ উপভোগ করতে পারেন।

ছাদ কয়েক স্তরের হওয়ায় মসজিদের ভেতরে বাতাস আসা-যাওয়া করতে পারে। এতে পুরো মসজিদে শীতল আবহ বিরাজ করে। জানালা না থাকলেও নকশার বাহাদুরিতে ভেতরে আলো প্রবেশের ব্যবস্থা রয়েছে। মসজিদের কিছু অংশের দেয়াল এমনভাবে আগে-পরে করে দেওয়া হয়েছে, যাতে সরাসরি আলো এসে পড়ে।

গরমে মসজিদ শীতল রাখতে ভেতরে রয়েছে পানি সংরক্ষণের চারটি জলাধার। এসব জলাধারে রাখা শীতল পাথর গ্রীষ্মকালে মসজিদকে শীতল রাখে। মসজিদটির নিচতলা দুই ভাগে বিভক্ত।

সামনে মেহরাব ও মসজিদের মূল অংশ। এর পেছনে মাঝ বরাবর হাঁটাপথ। পেছনের অংশে বড় গ্যালারি। যেখানে বসে মুসল্লিরা নিজ মনে ইবাদত-বন্দেগি করতে পারেন। গ্যালারি অংশের পেছন থেকে দোতলায় ওঠার সিঁড়ি। সেখানে রয়েছে নারীদের নামাজ পড়ার ব্যবস্থা।

লক্ষ্মীপুর শহর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে রামগতি উপজেলার চর পোড়াগাছা ইউনিয়নের শেখের কেল্লা এলাকায় অনিন্দ্যসুন্দর মসজিদটির অবস্থান। মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশে গড়া আধুনিক স্থাপত্যশৈলীর এই মসজিদ দেখতে প্রতিদিনই বহু মানুষ ভিড় করেন।

দেশীয় স্থাপত্য প্রতিষ্ঠান আর্কি গ্রাউন্ড লিমিটেডের স্থপতি নবী নেওয়াজ খান ও তাঁর দল মসজিদটির নকশা করেন। তিনি মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, গতানুগতিক ধারার বাইরে গিয়ে মসজিদটির নকশা করেছে তাঁর প্রতিষ্ঠান। নকশা করতে সময় লেগেছে তিন মাসের মতো।

নবী নেওয়াজ বলেন, বাইরে থেকে দেখলে মনে হয় পুরো দেয়াল শুধু ইটের তৈরি। মূলত ইট দেখা গেলেও এর ভেতরে আরও আছে রড, সিমেন্ট ও ইটের সংমিশ্রণে আরসিসি ঢালাই।

আস-সালাম জামে মসজিদের বিশেষ দেয়াল। মসজিদের ভেতরে বসেই রোদ– বৃষ্টির আমেজ উপভোগ করা যায়
ছবি: প্রথম আলো

আস-সালাম জামে মসজিদ দেশের আধুনিক নির্মাণশৈলীর অনন্য নজির। এখানে নামাজ পড়তে প্রতিদিনই লক্ষ্মীপুর জেলা সদর, রামগঞ্জ, রায়পুর ও কমলনগর উপজেলাসহ পার্শ্ববর্তী নোয়াখালী, চাঁদপুরসহ বিভিন্ন জেলা থেকে অনেক মুসল্লি আসেন। বিশেষ করে জুমার নামাজে আড়াই থেকে তিন হাজার মুসল্লির সমাগম ঘটে।

আবদুল্লাহ ইয়াছিন, সাইফুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজন মুসল্লি জানান, বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পেরে মসজিদটি দেখার জন্য কৌতূহল সৃষ্টি হয়। একই সঙ্গে মসজিদে এসে নামাজ পড়ার সুযোগও হয়েছে। তাঁরা বলেন, মসজিদের প্রতিটি অংশই কারিগর যেন নিপুণ হাতে সাজিয়েছেন। এমন স্থাপনা এর আগে চোখে পড়েনি।

মসজিদে দুই হাজার মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারেন। মসজিদ চালুর প্রথম জুমায় মাত্র দুই সারি মুসল্লি নিয়ে জামাত করতে হয়েছে। তবে এখন জুমায় মুসল্লিদের উপচে পড়া ভিড়। ভেতরে স্থান সংকুলান না হওয়ায় রাস্তায় দাঁড়িয়েও নামাজ আদায় করছেন মুসল্লিরা। মসজিদের ইমাম মো. ওমর ফারুক জানান, মসজিদের যিনি প্রতিষ্ঠাতা, তিনি এ মসজিদের কোনো প্রচারের পক্ষে নন। কিন্তু মুসল্লিদের মুখে মুখে মসজিদটির নাম ছড়িয়ে পড়েছে।

নির্মাতাদের সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে এ মসজিদের নির্মাণকাজ শুরু হয়। ১০ হাজার ৮০০ বর্গফুটের এ মসজিদের নির্মাণ ব্যয়ভার বহন করেছে রহিমা মমতাজ ও সাইফ সালাহউদ্দিন ট্রাস্ট। বিরতিহীন কাজের পর ২০২১ সালের শেষের দিকে মসজিদটি মুসল্লিদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।

দৃষ্টিনন্দন এ মসজিদ নির্মাণে কত টাকা ব্যয় হয়েছে, তা প্রকাশ করেননি নির্মাতা। এমনকি নিজের নাম প্রকাশেও তিনি অনিচ্ছুক। সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ এই আইনজীবী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার মা-বাবার নামে এ ট্রাস্ট জনহিতকর কাজে পরিচালিত হবে। মানুষের জন্য কিছু করতে চাই। মসজিদটি সে জনহিতকর কাজেরই অংশ।’

এ মসজিদ ঘিরে এখানে আন্তর্জাতিক মানের একটি হাফেজিয়া মাদ্রাসা, একটি বালিকা বিদ্যালয় এবং একটি কলেজও নির্মাণ করছে এই ট্রাস্ট।